এক মিনিটের ব্যবধানে নৌকাটি ডুবে গেল

প্রতীকী ছবিপ্রথম আলো

২০১৭ সাল। শীতকাল শেষের পথে। দিনকয়েক হয় নানাবাড়িতে আছেন মা। তাঁকে নিতেই এসেছি। রাতের খাবার শেষ করে মাত্রই গল্প করতে বসেছি। হঠাৎ কলটা এল। ওপাশ থেকে জানাল—বকুল ভাই দুর্ঘটনায় মারা গেছে!

সবাই হাঁ হয়ে গেলাম! দুই ঘণ্টা আগেও যে মানুষটাকে তরতাজা দেখে এলাম, সে এখন মৃত। বকুল ভাই ও মধু কাকা সিংড়ার মেইন রোডে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এল।

আমার নানাবাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের কালীনগরে। বকুল ভাই ও মধু কাকা আমাদের পারিবারিক আত্মীয়। সকালে জানাজায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। সঙ্গে আমার মা। কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর খেয়ানৌকায় আত্রাই নদ পেরোলেই পাকা রাস্তা, সেখান থেকে বিলদহর যাওয়ার ভ্যান অনায়াসে মিলবে।

নানাবাড়ি থেকে বের হয়ে যথারীতি খেয়াঘাটে এলাম। ঘাটে নৌকা ভিড়তেই মাঝি সতর্ক করলেন, নৌকায় পানি উঠছে, আগে সেচে পানি ফেলতে হবে। পানি সেচা শুরু হতেই সবাই নৌকায় উঠে পড়ল। মনে হলো, যাত্রী একটু বেশিই উঠল। মাঝি নৌকা ছাড়লেন। নদটি স্রোতহীন ছোট হয়ে এসেছে। নৌকায় পানি বেড়ে চলছে! পানি সেচে ছেলেটি কূল পাচ্ছে না। মাঝ নদে মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে নৌকাটা হঠাৎ ডুবে গেল!

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি, সাঁতার দিতে গিয়ে আমার প্রাণশক্তি প্রায় শেষ হয়ে আসছে, কিন্তু তীর কাছে আসছে না। পাশ থেকে মা বলে উঠলেন, জুতা ও কোটি খুলে ফেলো শরীর হালকা হবে। বিষয়টি আমার জানার বাইরে ছিল। মা পরামর্শ না দিলে কী যে হতো!

আমার মা নদীর দেশের মানুষ, ভালো সাঁতার কাটতে পারেন। আমিও এই আত্রাই নদে সাঁতারকাটা শিখেছি। মা ভ্যানিটিব্যাগ আর স্যান্ডেল ছেড়ে সাঁতার কাটতে লাগলেন। কিছু সময় পরে আমরা সবাই নদের তীরে উঠলাম। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম—কেউ হতাহত হয়নি! নৌকায় অনেক বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশু ছিল। আসলে নদের ধারে বাড়ি হওয়ার কারণে সবাই এখানে ভালো সাঁতার কাটতে পারেন।

ক্লান্ত শরীরে ভাবছিলাম, নদে যদি স্রোত থাকত, তখন কী হতো!

যাহোক, জানাজার সময় আসন্ন। বিলদহরে গিয়ে দ্রুত কাপড় পরিবর্তন করে জানাজায় অংশ নিলাম। আর মনে মনে ভাবলাম, আজ আমারও একই পরিণতি হতে পারত! নদে ডুবে যাওয়া আম্মার ভ্যানিটিব্যাগ, আমার জুতা ও কোটি কোনো দিন ফেরত পাব আশা করিনি; কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো ফেরত পাই।