এত দূরে মেয়েকে পাঠানোর দরকার কি?

জাহিদা আক্তার
ছবি : সংগৃহীত

প্রথম আলো ট্রাস্টের অন্যতম একটি প্রকল্প ‘অদ্বিতীয়া’। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিবছর অসচ্ছল পরিবারের প্রথম নারী, যিনি উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। ২০১২ সালে যখন এই শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু হয়, তখন ট্রান্সকম গ্রুপ এতে সহায়তা করে। পরে ২০১৭ সালে ‘অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি’ নামে নতুন নামে শুরু হলে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। সেই বছরই এই বৃত্তি পাওয়া জাহিদা আক্তারের গল্প জানব আজ।

আগৈলঝাড়ার একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ের বরিশাল থেকে চট্টগ্রামে আসার গল্পটা মোটেও সাধারণ ছিল না। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর জাহিদা যখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ভর্তির সুযোগ পেলেন, তখন আত্মীয়স্বজন অনেকেই বলেন, এত দূরে মেয়েকে পাঠানোর দরকার কি? মেয়েকে এত পড়াশোনা করিয়ে কী হবে? বিয়ে দিলেই তো হয়। কিন্তু জাহিদার সৌভাগ্য, সব সময় পাশে বাবা-মাকে পেয়েছেন তিনি।

সেই আগৈলঝাড়া থেকে চট্টগ্রামে গেছেন জাহিদা। সেখানে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন তিনি। প্রতিটা সেমিস্টারে ভালো ফলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। কেবল নিজের স্বপ্নপূরণের জন্যই যে লড়ে গেছেন তা নয়, বদলে দিয়েছেন তিনি গ্রামের বাড়ির আশপাশের মানুষের মানসিকতাও। স্নাতক শেষ করে জাহিদা এখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অফিস ফর অ্যাডভান্সিং লার্নিং বিভাগের ট্রেইনি অফিসার।

এই বিভাগের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাহিদা নিজের এলাকার উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সাত শিক্ষার্থীর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এক মাসের একটি শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। এলাকার মানুষ ও আত্মীয়স্বজনেরা এখন স্বীকার করেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে মেয়েরাও যেকোনো বাধা অতিক্রম করতে পারে, জাহিদা তার প্রমাণ। এলাকার মেয়েদের কাছে জাহিদা এখন আদর্শ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদা জানান, আপাতত চাকরিই করতে চান। কেননা, পরিবারকে সহযোগিতা করতে চান তিনি। সেই সঙ্গে নিজের পরবর্তী পড়াশোনার খরচের টাকাটাও জমাতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘স্বপ্ন যা দেখছি, ঠিক তা–ই যে হবে, তা তো নয়। প্ল্যান এ না হলে, প্ল্যান বি বা প্ল্যান সি সফল হতে পারে। কিন্তু স্বপ্ন দেখা কখনো বন্ধ করব না। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই; কিন্তু স্বপ্ন দেখি আমার কমিউনিটির প্রতিটি পরিবার থেকে একজন নারী তাঁর পরিবারের জন্য, নিজের জন্য চেঞ্জমেকার হওয়ার চেষ্টা করুক, উঠে আসুক, কাজ করুক।’