ইয়াশ রোহান মায়ের দিলীপ কুমার, আমাদের সোনাই

প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে দেশের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ‘ছুটির দিনে’। এবারও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, ক্রীড়া, সংগীত, চলচ্চিত্র, ভ্রমণ, ব্যবসা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আট তরুণের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে—গাই তারুণ্যের জয়গান। চলচ্চিত্র বিভাগে পড়ুন অভিনেতা ইয়াশ রোহানের গল্প।

ইয়াশ রোহানের অভিনয়জীবন শুরু মাত্র ৩ বছর বয়সে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

তার বাবাকে ডাকি দাদা, মাকে অপুদি। সে আবার আমাকে ডাকে ‘ভাইয়া’। ছেলেটার নাম—ইয়াশ রোহান।

ইয়াশের সঙ্গে আমি বেশ কিছু কাজ করেছি। তবে ওয়েবফিল্ম নেটওয়ার্কের বাইরে বানাতে গিয়ে তাকে বেশি জেনেছি। স্ক্রিপ্ট রিডিং থেকে শুরু করে শুটিং, পোস্টপ্রডাকশন, সিনেমা রিলিজ এবং এর কিছুদিন পর অনাকাঙ্ক্ষিত এক দুর্ঘটনা—সব মিলিয়ে লম্বা একটা সফর।

ইয়াশ শান্ত, অমায়িক একটা ছেলে। তার কথাবার্তা, চলাফেরায় তারুণ্যের ছটা আছে, এই সময়টাও প্রতিফলিত হয়।

ইয়াশ আর আমার শারীরিক গড়ন অনেকটা একই রকম। তাই আমার নাটকে ইয়াশের কস্টিউম বা পোশাক নিয়ে ভাবনা থাকে না। কোনো পোশাক পছন্দ না হলে অথবা সাইজে না মিললেই সে বলে ফেলে, ‘ভাইয়ার একটা পরে ফেলব!’ এ রকম অনেক নাটকেই সে আমার কাপড়চোপড় পরেছে। ইয়াশের সঙ্গে আমার শুধু গড়নের নয়, মত আর মনের মিলও অনেক।

আরও পড়ুন
কাছের মানুষেরা ইয়াশ রোহানকে সোনাই নামে ডাকে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ইয়াশের বাবা নরেশ ভূঁইয়া, মা শিল্পী সরকার অপু দুজনই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ফলে ছোটবেলা থেকে নিজের বাসাকেই স্কুল হিসেবে পেয়েছে। যেটা তাকে অভিনেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। বইপড়ার অভ্যাস আছে। সেটা আবার পেয়েছে বড় ভাই রুপাইয়ের কাছ থেকে।

মাত্র ৩ বছর বয়সেই শুরু হয় ইয়াশের অভিনয়জীবন। কখনো মোড়ায় বসে হাতে একটা গামলা নিয়ে সেটাকে স্টিয়ারিং করে ড্রাইভার, আবার কখনো বাবার আনা বাজার নিয়ে সবজি বিক্রেতা। এই ড্রাইভার অথবা সবজি বিক্রেতাই মাত্র ৪ বছর বয়সে বিটিভির ধারাবাহিক নাটক খুশির মধ্য দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করে। সেই থেকে অভিনয়ের স্কুল, কলেজ পেরিয়ে এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র!

ইয়াশ অভিনীত কোনো কাজ আমার ভালো লাগলে তাকে জানাই। খারাপ লাগলেও জানাই। ভালোটা জানাই কল করে, মন্দটা দেখা হলে। চলচ্চিত্র অভিনেতা ইয়াশকে প্রথম পাওয়া স্বপ্নজাল–এর মাধ্যমে, তাই এই সিনেমার প্রতি আমার আলাদা ভালো লাগা আছে। টিভিতে আমাদের সমাজবিজ্ঞানসহ আরও বেশ কিছু কাজ ভালো লেগেছে। আর ইয়াশকে নিয়ে আমার নির্মিত প্রিয় কাজ নেটওয়ার্কের বাইরে এবং শহর ছেড়ে পরাণপুর

আরও পড়ুন
ইয়াশ রোহান
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

একটা বিষয় অনেকেই জানে না যে ইয়াশের বাসায় এবং তার কাছের মানুষেরা তাকে সোনাই নামে ডাকে। তবে শুটিং সেটে ইয়াশকে ‘সোনাই’ বলে ডাকলে সে লজ্জা পেয়ে যায়।

শৈশবে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখত ইয়াশ। একসময় আবার বাবার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে ফিল্মমেকারও হতে চেয়েছিল। কিছু শর্টফিল্মও নির্মাণ করেছে। তবে ওপথ পরে আর বেশি আগায়নি, আমার ধারণা চলচ্চিত্র নির্মাণ তার ওপর আবার ভর করবে।

অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে একটা গাড়ি কিনেছে ইয়াশ। নিজের শুটিং শেষে সাদা রঙের সেই কারটা নিয়ে মায়ের সেটের সামনে অপেক্ষা করে। মায়ের শুট শেষ হলে মা-ছেলে বাড়ির পথ ধরে। ছেলে ড্রাইভিং সিটে, পাশে মা। জন্মের ১৭ দিনের মাথায় ইয়াশকে কোলে নিয়ে মা বলেছিলেন, ‘এ আমার দিলীপ কুমার।’ মাকে গাড়িতে নিয়ে উত্তরা, এয়ারপোর্টের রাস্তা ধরে নিজের বাসায় পৌঁছে মায়ের দিলীপ কুমার, আমাদের সোনাই আর আপনাদের ইয়াশ রোহান।

একদিন নিশ্চয় ইয়াশ পৌঁছে যাবে যেখানে সে যেতে চেয়েছিল অথবা যেতে চায়।

লেখক: নির্মাতা