‘গায়ের রং চাপা’, এই অজুহাতে ১৮ বছর পর বিচ্ছেদ চাইছেন স্বামী

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমার বোনের ১৮ বছরের সংসার। তিনটি সন্তান রয়েছে। বোনের স্বামী প্রবাসী। বর্তমানে তিনি অন্য নারীতে আসক্ত। কয়েক মাস ধরে আমার বোনের সঙ্গে তিনি কোনো প্রকার কথা বলছেন না। আমার বোনের গায়ের রং চাপা, এই অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্নজনের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বোনকে ডিভোর্স দেবেন বলে। ডিভোর্স ঠেকাতে বা ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমরা কোনো সংস্থা থেকে সাহায্য পেতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার বোনের স্বামীর এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি জানিয়েছেন, তিনি অন্য নারীতে আসক্ত এবং আপনার বোনকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছেন। বৈবাহিক সম্পর্কে কোনো এক পক্ষ যেকোনো কারণে যদি সম্পর্কটি আর রাখতে না চায়, সে ক্ষেত্রে জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার সুযোগ আইনগতভাবে নেই। যদিও আপনার বোনের স্বামী যে ধরনের অজুহাত দিচ্ছেন, তা তাঁর নিচু মনের পরিচয় বহন করে। তবে আইনগতভাবে ডিভোর্স ঠেকানোর কোনো উপায় নেই।

তবে বাংলাদেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ বলে দাম্পত্য অধিকার আবার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারে দেওয়া রয়েছে এবং আইনানুযায়ী আদালত ডিক্রি জারি করতে পারেন। আপনার বোনের স্বামী যেহেতু কোনো কারণ ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না, তাই দাম্পত্য অধিকার দাবি করে আপনার বোন পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। দাম্পত্য অধিকার উদ্ধারের বিষয়টি সাধারণত আদালতের বিবেচনার ব্যাপার। উভয়ের মধ্যে বিয়ে কার্যকর আছে কি না, তা আদালত দেখতে চাইবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনার বোনকে প্রমাণ করতে হবে যে স্বামী কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না এবং কথা বলছেন না।

এবার ভরণপোষণ বিষয়ে আসা যাক। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, খোরপোশ বা ভরণপোষণ স্ত্রীর আইনগত অধিকার। স্ত্রীর খোরপোশ দেওয়া স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। স্বামীর সঙ্গে বসবাস না করেও খোরপোশ দাবি করতে পারেন স্ত্রী। যত দিন বিয়ে বলবৎ থাকবে, তত দিনই খোরপোশ দিতে বাধ্য থাকবেন স্বামী। স্ত্রীর পরিবারের সামাজিক পদমর্যাদা, স্বামীর উপার্জন ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে খোরপোশের পরিমাণ নির্ধারণ করবে সালিসি পরিষদ।

আরও পড়ুন

ভরণপোষণ আদায়ের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে পারবেন আপনার বোন। চেয়ারম্যান বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে একটি সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। ওই সালিসি পরিষদ খোরপোশ হিসেবে দেয় টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করে একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করতে পারে। যেকোনো পক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটটি পুনর্বিবেচনার উদ্দেশ্যে সহকারী জজের কাছে আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং এর বৈধতা সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এরপর এই ভরণপোষণ যথাসময়ে দেওয়া না হলে, এটা বকেয়া রাজস্বের আকারে আদায়যোগ্য হবে।

কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে, চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত সালিসি পরিষদের সিদ্ধান্ত না মানলে ও আদালতের নিয়ম-নির্দেশ অমান্য করলে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন স্ত্রী। মুসলিম আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী, বাবাই সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক। তাই সন্তানের ভরণপোষণের সব দায়দায়িত্বও বাবার। সন্তানেরা পারিবারিক আদালতে মামলা করে ভরণপোষণ আদায় করতে পারবে।

প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]

(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা,

প্রথম আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’), ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA