পুরুষের ব্যাগ যেভাবে নারীদের হলো
সময়টা সম্ভবত ১৪৯৭ সাল। নিজের অন্যতম বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য লাস্ট সাপার’ আঁকছিলেন লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। ১৫ বাই ২৯ ফুটের বিশাল এই ছবির কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই ভর করত একঘেয়েমি। তা দূর করতে ছোট ছোট কাগজে নানা রকম স্কেচ আঁকতেন শিল্পী। সে সময়ই খেয়ালের বশে একটি ব্যাগের স্কেচ আঁকেন ভিঞ্চি।
সম্ভবত একটা পুরুষদের ব্যাগের নকশা এঁকেছিলেন শিল্পী। ভুরু কোঁচকাবেন না, সে যুগে নারীরা নন, ব্যাগ ব্যবহার করতেন পুরুষেরা। তাঁদের পোশাকের ওপর কোমরের বেল্টের সঙ্গে জুড়ে নিতেন নানা নকশার ব্যাগ। পুরুষদের সামাজিক এবং দাপ্তরিক আধিপত্য প্রকাশ করত এসব ব্যাগ। ব্যাগের যত দাম, তত সুনাম।
৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো ভিঞ্চির সেই স্কেচ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১২ সালে ব্যাগটির একটি সীমিত সংস্করণ তৈরি করে বিলাসবহুল চামড়াপণ্যের ইতালীয় ব্র্যান্ড গেরারদিনি। দামের মতো ব্যাগটির নাম ছিল প্রেশাস (মূল্যবান)।
অবশ্য পুরুষদের ব্যাগের নকশা থেকে তৈরি হলেও ব্যাগটির আসল গ্রাহক ছিলেন নারীরা। কেননা ৫০০ বছরের পথপরিক্রমায় ব্যাগ তত দিনে হয়ে উঠেছে নারীর একচ্ছত্র ব্যবহার্য পণ্য।
অথচ কিছুকাল আগেও পুরুষদের অনুষঙ্গ ছিল ব্যাগ। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখার জন্য ব্যাগ ব্যবহার করতেন তাঁরা। নারী সঙ্গীর জিনিসগুলোও পুরুষের ব্যাগে থাকত। ব্যাগ হয়ে উঠেছিল পুরুষদের সামাজিক মর্যাদার প্রতীক।
তাহলে কীভাবে নারীদের হাতে এসে উঠল হাতব্যাগ? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে হয়ে উঠল তাদের অন্যতম এক ফ্যাশন অনুষঙ্গ। কীভাবে সেগুলোতে যুক্ত হলো বিলাসিতা। কেমন করে এমনটি হলো, সে গল্পই আজ জানব।
ব্যাগের জন্ম
ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসগুলো সঙ্গে রাখার প্রয়োজন থেকেই ব্যাগের উৎপত্তি। প্রাচীনকালে পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি হতো নানা আকারের থলে। শিকারে যাওয়ার সময় থলেতে করে অস্ত্রশস্ত্র বহন করত শিকারিরা। সেগুলো কোমর বা পিঠে ঝুলিয়ে নিত। শিশুকে নিজের শরীরের সঙ্গে ঝুলিয়ে নিতেন মায়েরা।
এ জন্য চামড়া দিয়ে তৈরি করতেন শিশুর উপযোগী মোড়ক। অঞ্চলভেদে শিশু বহনে ব্যবহৃত ব্যাগগুলোকে আমোটি, হ্যামক, মেই ইত্যাদি নামে ডাকা হতো। দরকারের ছোট জিনিসগুলো রাখার জন্য ছিল গাছের বাকল বা চামড়ার পাউচ।
হাতে হাতেই সেগুলো তৈরি হতো। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ—সবাই সেগুলো কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতেন। বড় থলেগুলো বহনের সুবিধার্থে সেগুলোর সঙ্গে জুড়ে নিতেন হাতল। বড় থলে আর ছোট্ট পাউচ—দুটির ব্যবহারই প্রয়োজনের খাতিরে শুরু হয়েছিল।
১৪ শতকের মিসরীয় হায়ারোগ্লিফিকে পুরুষদের কোমরে ছোট ছোট থলে বহন করার বর্ণনা পাওয়া যায়। পকেট নামে পরিচিত এই ব্যাগগুলো কোমরের পেছনে ঝোলানো থাকত, এগুলোতে তারা চকমকি পাথর বা মুদ্রা বহন করতেন। পরে অবশ্য পোশাকে পকেট যুক্ত হওয়ায় এ ধরনের ব্যাগ ব্যবহার কমিয়ে দেন পুরুষেরা।
মধ্যযুগের ইউরোপেও কোমরে বাঁধা ছোট্ট থলে বা পাউচে মুদ্রা রাখতেন পুরুষেরা। তাঁদের পোশাকেও পকেট ছিল। নারীরা পরতেন বড় আর বহুস্তরী গাউন। তাঁদের গাউনের ভেতরে কোমরের কাছে ফিতা দিয়ে বাঁধা থাকত হালকা কাপড়ে তৈরি থলের মতো পকেট।
এটি ছিল নারীদের অন্তর্বাসের অংশ। এর ভেতরে নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসগুলো রাখতেন তাঁরা। পোশাকের ভেতরের সেই পকেটে রাখা কোনো কিছু প্রয়োজন হলে পায়ের কাছ থেকে কাপড় উঠিয়ে বা সরিয়ে তা বের করতে হতো। অস্বস্তিকর এই কাজটা ছিল তখনকার সময়ের অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি দৃশ্য।
কিন্তু বেশির ভাগ নারী খুব প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করতে চাইতেন না। আবার দরকার হলে না করেও পারতেন না। অস্বস্তি এড়াতে ভেতরের পকেটটি তাই গাউনের ওপরের দিকে বাঁধতে শুরু করেন নারীরা।
অন্তর্বাসের একটি অংশকে এভাবে বাইরে পরাটাকে প্রথম দিকে অশ্লীল বিবেচনা করা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
রেটিকুল যুগ
ধীরে ধীরে সব শ্রেণির নারী-পুরুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে কোমরের পাউচ বা পকেট। ১৮ শতকে এটি প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ‘রেটিকুল’ বা ছোট থলে নামে পরিচিত এ ব্যাগগুলো সে সময় বাণিজ্যিকভাবেও বিক্রি হতো।
তৈরি হতো নানা নকশা আর রঙে। শুরুতে শুধু হালকা নেট (জাল) কাপড় দিয়ে তৈরি হলেও পড়ে মখমল, সাটিন, সিল্ক কাপড় দিয়েও তৈরি হতো।
রানি প্রথম এলিজাবেথের সময় সম্ভ্রান্ত পুরুষদের কোমরে দেখা যেত রেটিকুল। সেগুলোয় থাকত সুতো, পুঁতি এমনকি সোনা-রুপাখচিত কারুকাজ। দামি ব্যাগগুলো ছিল পুরুষদের আভিজাত্যের প্রতীক।
ব্রিটিশ রয়্যাল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা এবং আর্থিক এজেন্ট স্যার টমাস গ্রেশামের একটা ছবিতে তাঁর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া কালো-সোনালি রঙের জমকালো ব্যাগটি সে সময়ের পুরুষদের ব্যাগ ব্যবহারের এক অনবদ্য প্রমাণ।
তবে সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পুরুষেরা কয়েক দশকের মধ্যেই ছেড়ে দেয় এ ধরনের ব্যাগের ব্যবহার। পোশাকের পকেটেই তাঁদের কাজ চলে যেত।
অন্যদিকে সব শ্রেণির নারীদের হাতেই দেখা যেত নানা নকশা আর আকারের ছোট ছোট পাউচ ব্যাগ। সেগুলো কেউ বাঁধতেন কোমরে, কেউ বা নিতেন হাতে। শিল্পবিপ্লবের পর আগের চেয়ে অনেক বেশি বাইরে যাতায়াত করতে শুরু করেন নারীরা। আর অনেকটা সময় বাইরে থাকতে হলে সঙ্গে নিতে হতো বেশি জিনিস। সেই প্রয়োজন থেকেই শুরু হয় হাতব্যাগের ধারণা।
‘হাতব্যাগ’ শব্দের উৎপত্তি
‘হ্যান্ডব্যাগ’ (হাতব্যাগ) শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। তখন শব্দটির অর্থ ছিল পুরুষদের হাতে বহন করার লাগেজ, যা আজকের যুগের স্যাচেল বা ব্রিফকেসের মতো ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে দেখা গেল, ব্যাগের প্রয়োজনীয়তা পুরুষদের তুলনায় নারীদেরই বেশি।
প্রয়োজন থেকেই শুরু হলো উৎপাদন। সে সময় ব্যাগ হয়ে ওঠে অন্যতম বাণিজ্যিক পণ্য। বাজারে পাওয়া যেত নানা আকার, নকশা, রং আর ভিন্ন ভিন্ন উপকরণের ব্যাগ। লুই ভুতোঁর পাশাপাশি শ্যানেল, আরমেসের মতো বেশ কয়েকটি নামীদামি ব্যাগের ব্র্যান্ডের উত্থান ঘটে ১৯৫০-এর দশকে।
ভ্যানিটি ব্যাগ তো ছিলই, হাতের পার্সগুলোতেও দরকারি ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখতেন নারীরা। ১৯২০-এর দশকে জনপ্রিয়তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতব্যাগে দেখা যায় নকশা, রং আর সাজসজ্জার নতুনত্ব। থাকত মিসরীয় শিল্পের ছাপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধাতু ও চামড়ার ঘাটতি দেখা দিলে হাতব্যাগের কারিগরেরা প্লাস্টিক ও কাঠ ব্যবহার করতে শুরু করেন। সেই শুরু, এখন তো প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে নতুন ধরনের নানা হাতব্যাগ।
নারীর স্বাধীনতায় হাতব্যাগ
১৮ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শুধু পুরুষদের সামাজিক মর্যাদা প্রকাশ করত ব্যাগ। হাতলওয়ালা শক্ত ব্রিফকেস হাতে চলাফেরা করতেন তাঁরা। জুতার মতোই সেগুলো পরিষ্কার করতে হতো। অন্যদিকে সমাজের বেশির ভাগ নারী যেহেতু ঘরেই থাকত, তাই অত বড় ব্যাগ তাঁদের ব্যবহার করার প্রয়োজন হতো না।
তবে ১৯ শতকের শেষ দিকে ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী হয়ে ওঠেন নারীরাও। যাত্রাপথে নিজস্ব ট্রাংক নেওয়ার পাশাপাশি টিকিট, কাগজপত্র এবং টাকাপয়সা রাখার জন্য সবারই একটি ছোট ব্যাগ প্রয়োজন হতো।
নারী-পুরুষনির্বিশেষে ট্রেনের যাত্রীদের ছোট ব্যাগের প্রয়োজন মেটাতে কাজ শুরু করে লুই ভুতোঁর মতো আরও কিছু ট্রাংক ডিজাইনার। ছোট আকারের ট্রাংক, তারপর ব্রিফকেস, তারপর এল লিঙ্গভিত্তিক ব্যাগ। ভ্রমণে, কর্মস্থলে, এমনকি অল্প সময়ের জন্য বাইরে বের হলেও হাতে ব্যাগ নিতে শুরু করলেন নারীরা।
‘হ্যান্ডব্যাগস: দ্য পাওয়ার অব দ্য পার্স’ বইয়ে মার্কিন লেখক আনা জনসন লিখেছেন, ‘ব্যাগটি শক্তভাবে বন্ধ হতো এবং প্রথমবারের মতো নারীরা তাঁদের জিনিসপত্র কিছুটা হলেও ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে পারত। দীর্ঘদিন ধরে পুরুষেরাই নারীদের হাত-পাখা বা টাকা বহন করতেন; কিন্তু ধীরে ধীরে কার্যকর ও দক্ষ নকশার ব্যাগগুলো পুরুষদের সেই ভূমিকা থেকে সরিয়ে দিল।
তারপর থেকে পুরুষেরা নারীদের হ্যান্ডব্যাগকে রহস্যময় এবং তাঁদের জন্য নিষিদ্ধ এক জিনিস হিসেবেই দেখে আসছে।’ সে সময় সমাজ-সংস্কৃতিভেদে নারীদের ব্যাগের নকশায় দেখা যেত ভিন্নতা। বিংশ শতাব্দীজুড়ে নান্দনিক নকশার ব্যাগগুলো হয়ে ওঠে নারীদের নিত্যসঙ্গী। হয়ে ওঠে তাঁদের স্বাধীনতার প্রতীক।
অপরিহার্য ভ্যানিটি ব্যাগ
২০ শতকের শুরুতে দ্রুত বদলে যাচ্ছিল নারীদের ফ্যাশন। তত দিনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি বাইরে কাজ করতে শুরু করেছেন নারীরা। তাঁরা সাজতে ভালোবাসেন, থাকেন পরিপাটি। তাই বাইরে যাওয়ার সময় কিছু ব্যক্তিগত জিনিস, যেমন আয়না, মেকআপ, ব্রাশ, ছোট পারফিউম ইত্যাদি একটি বাক্সে করে সঙ্গে নিতেন তাঁরা। এতে ছোট ছোট খোপ থাকত, যাতে জিনিসগুলো আলাদা করে রাখা ও সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
এটি হয়ে ওঠে নারীদের সাজপোশাকের অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ। প্রচলিত ব্যাগের থেকে কিছুটা আলাদা ধরনের হওয়ায় এর নাম হয় ভ্যানিটি ব্যাগ। ‘ভ্যানিটি’র একটি অর্থ আত্মগর্ব। শব্দের অর্থের সঙ্গে মিলিয়েই নিজ নিজ ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে গর্ব বোধ করতেন নারীরা। কার ভ্যানিটি কত সুন্দর, এটা নিয়ে চলত প্রতিযোগিতা।
১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভ্যানিটি ব্যাগ। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে নামীদামি ব্র্যান্ডের একটি ভ্যানিটি ব্যাগ সঙ্গে রাখতে চাইতেন নারীরা। আজকের আধুনিক প্রসাধনী ব্যাগের পূর্বসূরি ছিল সে সময়ের ভ্যানিটি ব্যাগ।
বিলাসে-বাণিজ্যে হাতব্যাগ
১৯ শতকে ট্রেনে যাতায়াতটা হয়ে ওঠে নিয়মিত রুটিন। ভ্রমণের সময় জিনিসপত্র বহনের জন্য ব্যবহার হতো স্টিল, কাঠ ও চামড়ার তৈরি ঢাকনাযুক্ত বড় বড় গোলাকার ট্রাংক। সেগুলোতে কাজ চলত বটে, তবে সুবিধামতো রাখা যেত না আর দেখতেও খুব একটা সুন্দর ছিল না।
সে সময় ফ্রান্সের প্যারিসে একটি ট্রাংক তৈরির কারখানায় কাজ করতেন লুই ভুতোঁ। টানা ১৭ বছর কাজ করার পর ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ট্রাংক তৈরির নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। নিজের নামেই প্রতিষ্ঠানের নাম দেন লুই ভুতোঁ।
তার প্রথম পণ্য ছিল হালকা ও পানিরোধী ক্যানভাসে তৈরি আয়তাকার ট্রাংক, যা সহজেই স্তূপ করে রাখা যেত আর দেখতেও ছিল স্টাইলিশ।
লোকের ভ্রমণকালীন চাহিদাগুলোকে আত্মস্থ করেই শুরু হয়েছিল লুই ভুতোঁর যাত্রা, যা আজও বহাল রয়েছে। ব্র্যান্ডটির ট্রাংকগুলো হয়ে ওঠে ধনীদের প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী। তারপরও দেখা গেল যাত্রাপথে ট্রাংকের সঙ্গে ছোট্ট একটি হাতব্যাগও নেয় লোকে। তেমন একটি হাতব্যাগ তৈরির ভাবনা থেকে ১৮৯৬ সালে লুই ভুতোঁর ছেলে জর্জ ভুতোঁ একটি ছোট হাতব্যাগের নকশা করেন। সেই থেকেই ব্র্যান্ডটি ছোট ব্যাগ আর অন্যান্য অনুষঙ্গ বানাতে শুরু করে।
অবশ্য এর আগেই ১৯৪০-এর দশকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বড় বড় ব্যাগ ব্যবহার করতে শুরু করেন নারীরা। এগুলোকে বলা হতো ডে-টাইম ব্যাগ, যা দেখতে ছিল আজকের যুগের ‘হোল্ড-অল’ ধরনের ব্যাগের মতো। এ ধরনের ব্যাগে তখন গ্যাস মাস্কসহ অনেক বড় বড় জিনিস লুকিয়ে রাখতেন নারীরা।
যুদ্ধ শেষে ১৯৫০-এর দশকে আধুনিক হ্যান্ডব্যাগের ব্যবহার ও ধারণায় আসে বড় পরিবর্তন। সে সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী গ্রেস কেলির নামে একটি ব্যাগ তৈরি করে বিলাসবহুল ব্যাগের ব্র্যান্ড আরমেস। ব্যাগটি হয়ে ওঠে ‘ইট-ব্যাগ’। এ থেকেই জন্ম নেয় বিলাসবহুল হ্যান্ডব্যাগের ধারণা।
আধুনিক হাতব্যাগ
আধুনিক হাতব্যাগের ধারণা অবশ্য আরও কয়েক বছরের পুরোনো। সময়টা ১৮৪১ সাল। যুক্তরাজ্যের ধনী ব্যবসায়ী স্যামুয়েল পার্কিনসন হঠাৎ একদিন লক্ষ করলেন, তাঁর স্ত্রীর পার্সটি এতই ছোট যে এতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আঁটছে না।
ট্রাংক তৈরির উপাদান দিয়ে স্ত্রীর জন্য বড় আর মজবুত একটি হাতব্যাগ বানাতে বিখ্যাত বাক্স প্রস্তুতকারক এইচ জে কেভ-কে অনুরোধ করেন। কেভ তখন ভিন্ন ভিন্ন আকারের বেশ কয়েকটি ব্যাগ তৈরি করেন। এর মাধ্যমেই শুরু হয় প্রথম আধুনিক এবং লাক্সারি হ্যান্ডব্যাগের ধারা।
প্রথম প্রথম অনেকের কাছেই মহিলাদের বড় ব্যাগ বহন করাটা ছিল অদ্ভুত। তাই ১৮৬৫ সালের পর থেকে এ ধরনের ব্যাগ কেবল রাজপরিবার, তারকা এবং ধনী নারীদের জন্যই তৈরি করা হতো। আজকের বিশ্বে হাতব্যাগ হয়ে উঠেছে বিলাসবহুল বাণিজ্যিক পণ্য। লাখ লাখ এমনকি কোটি টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে নামীদামি ব্র্যান্ডের হাতব্যাগ।
পুরুষেরাও ফিরলেন হাতব্যাগে
রেটিকুল থেকে ব্রিফকেস, তারপর যেন ব্যাগ ব্যবহার করা ছেড়েই দিয়েছিলেন পুরুষেরা। অনেকে তো হাতে ব্যাগ নেওয়াটাকেও মেয়েলি মনে করতেন। তবে কয়েক যুগ না যেতেই আবারও ব্যাগে ফেরত এলেন পুরুষেরা।
১৯৭০-এর দশকে আবারও ব্যাগ ব্যবহার করতে শুরু করেন পুরুষেরা। সোজাসাপটা আর কম উজ্জ্বল এ ব্যাগগুলোকে বলা হতো ‘ম্যান-পার্স’ বা ‘মার্স’। আকারে বড় হওয়ায় এসবে বেশি জিনিস বহন করা যেত। কাঁধে, হাতে যেভাবে ইচ্ছা নেওয়া যেত।
সবচেয়ে পুরোনো কয়েকটি হাতব্যাগ
১৯৯১ সালে ইউরোপের আল্পস পর্বতমালায় প্রাকৃতিকভাবে হিমায়িত একটি মানবদেহ আবিষ্কার করেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। মমিটির নাম দেওয়া হয় ‘ওটজি দ্য আইসম্যান’। ধারণা করা হয়, ৩৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জীবিত ছিলেন ওটজি।
ওটজির সঙ্গে ছিল ফিতাযুক্ত ছাগলের চামড়ার তৈরি ছোট একটি ব্যাগ। প্রায় ৫ হাজার বছরের পুরোনো এই ব্যাগটিকেই আজকের বিশ্বে সবচেয়ে পুরোনো হাতব্যাগ বলা হয়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইটে ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো আরেকটি ব্যাগের তথ্য পাওয়া যায়। জার্মানির লাইপজিগের কাছে প্রস্তরযুগে (২৫০০ থেকে ২২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) নির্মিত এক সমাধিস্থলে কুকুরের দাঁত দিয়ে তৈরি একটি হাতব্যাগ পান স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছরের পুরোনো এ ব্যাগটি বিশ্বের প্রথম হাতব্যাগগুলোর একটি।
প্রথম হাত ব্যাগগুলোর তালিকায় আরেকটি নাম হচ্ছে ‘কোর্টোল্ড ব্যাগ’। ১৪ শতকে ইরাকের শহর মুসলে ব্যাগটি তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করেন গবেষকেরা। মধ্যযুগীয় এই হাতব্যাগ পিতল, সোনা, রুপা এবং অজানা এক কালো উপাদান দিয়ে তৈরি।
অনেকের ধারণা এটি ব্যাগ নয়, ছিল গয়নার বাক্স। তবে এখনো এটিকে রাখা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো হাতব্যাগগুলোর তালিকায়।
সূত্র: লাভ ইয়োর লেদার, মেইওক, সোথবি'স, স্টারলাইট কানাডা, ফ্যাবরি টু ফ্যাশন, আর্ট ইউকে