মায়ের কনে সেজে তোলা শখের ছবিতে আমার হাত
প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মা দিবস। সেই হিসাবে আগামীকাল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মাকে নিয়ে পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। সেই আহ্বানে বিপুল পাঠক সাড়া দিয়েছেন। নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি পড়ুন এখানে।
আমার বয়স তখন ১০–১১ বছর হবে। কোনো এক শীতের মৌসুমে আমরা সবাই গেছি নানাবাড়ি। সবাই বলতে আমার মা, চার খালা আর এক মামা। বড় মামা তখন জাপানে থাকেন। ছোট খালার বিয়ে হয়নি আর ছোট মামা আমার চেয়ে বয়সে মাত্র এক বছরের বড়। আমরা খালাতো ভাইবোন মিলে তখন ছয়জন। বাড়ি ভরা মানুষ, একটা উৎসবের আবহ।
একদিন বিকেলে ছোট মামার সঙ্গে আমরা সবাই উঠানে খেলছি। এমন সময় দেখি, ঘরের ভেতর মা-খালারা সবাই বিয়ের কনের মতো সাজছে। মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, কোনো দাওয়াত আছে নাকি?
মামা বললেন, ‘আরে নাহ, সবাই বউ সেজে ছবি তুলবে।’
মামার কথা শুনে দেখার জন্য খুব কৌতূহল হলো। বারান্দার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, ঘটনা সত্য। ছবি তোলা হচ্ছে। খুব মজা করে সবার ছবি তোলা দেখছিলাম। টিনের ঘরের বেড়া ফুলের ছবি আঁকা চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, আর বিছানায় রঙিন চাদর। খালামণিরা এক এক করে বিভিন্ন পোজে বসে বা দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। হঠাৎ মাকে দেখলাম চাদরের সামনে বসে ছবি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি তোলার আগমুহূর্তে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে মাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলাম।
আর ঠিক ওই মুহূর্তেই ক্যামেরাম্যান তাঁর কাওয়াসাকি ক্যামেরায় ক্লিক করে বসলেন।
ছবি প্রিন্ট হওয়ার পর দেখা গেল, মাকে আমার রাজকন্যার মতো লাগছে সত্য, কিন্তু ছবিটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে একটা হাত!
আমার মায়ের বয়স তখন কতইবা হবে—২৬ বা ২৭। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, নিজের সাধ–আহ্লাদ পূরণ করার সময় কখনো পাননি। সব বোনকে একসঙ্গে পেয়ে হয়তো কনে সেজে ছবি তোলার একটু শখ হয়েছিল। কিন্তু ছবিটা আমি নষ্ট করে ফেলেছি। সে জন্য নিজেকে আজও ক্ষমা করতে পারিনি।