মে মাসের ফুলগুলো
মে ফ্লাওয়ার মানে মোটাদাগে মে মাসে ফোঁটা ফুলগুলোকেই বোঝায়। তবে আমাদের দেশে পুষ্পপ্রেমীরা প্রধানত দুটি ফুলকেই মে ফ্লাওয়ার হিসেবে আলাদা করে চিহ্নিত করেছেন। এর একটি বল লিলি এবং অন্যটি লালসোনাইল বা ক্যাশিয়া জাভানিকা। আসলে অন্য ফুল থেকে আলাদা করে চেনার জন্য মে ফ্লাওয়ার বলা হলেও এমন নামকরণ উদ্ভিদ বা ফুলের সঠিক পরিচিতি উপস্থাপনে বিভ্রান্তি তৈরি করে। কারণ, সারা পৃথিবীতে মে মাসে অজস্র গাছেই ফুল ফোটে। তাহলে ঢালাওভাবে সব ফুলই মে ফ্লাওয়ার? একটি থেকে অন্যটি কীভাবে আলাদা করে চেনা যাবে। এ কারণেই টেক্সোনমিস্টরা সব উদ্ভিদের নামধাম ঠিক করে দিয়েছেন।
তবে যে ফুলগুলো মে মাসে রং-রূপের জৌলুশ ছড়িয়ে আমাদের প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত রাখে, সেগুলোকেই মে ফ্লাওয়ার হিসেবে শনাক্ত করা যায়। এ তালিকা খুব একটা ছোট নয়। মে মাসজুড়েই প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া।
রঙে-রূপে অনন্য এই তিন ফুল অনেক দূর থেকেই আমাদের নজর কাড়ে। বিশেষ করে কৃষ্ণচূড়ার কথা বলা যায়, যত দূরেই থাকুক চোখ ফেরাতে বাধ্য করে। যদি একসঙ্গে পাঁচটি কৃষ্ণচূড়ায়ও ফুল ফোটে, তাহলে সে জায়গার দৃশ্যপট বদলে যায়। এমনই সম্মোহনী শক্তি এ ফুলের। ইদানীং দেশের কোথাও কোথাও পরিকল্পিতভাবে এই তিন ফুলের গাছ লাগানো হচ্ছে।
এই মাসে আরও কিছু অপ্রধান ফুল ফোটে। সংখ্যায় কম হলেও এসব ফুলের মাধুর্যমণ্ডিত রূপ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়।
প্রথমেই মে ফ্লাওয়ারখ্যাত বল লিলির কথা বলা যায়। এরা হেমান্থাসলিলি বা ফায়ারবল নামেও পরিচিত। প্রায় সারা বছর গাছ ও ফুলের অস্তিত্ব থাকে না। বসন্তে দু-এক পশলা বৃষ্টি হলেই মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা কন্দটি জেগে ওঠে। উজ্জ্বল গোলাকার ফুলটি ফোটে পাতাহীন। লম্বা ডাঁটার আগায় বলের মতো গোলাকার পুষ্পস্তবক, লাল রঙের। অনেকটা কদমের মতো। ফুল ফোটার পর পাতা ধীরে ধীরে মাটি ফুঁড়ে বের হয়। এরা বর্ষজীবী। মে ফ্লাওয়ার হিসেবে সবচেয়ে বেশি চেনা ফুলটির নাম লালসোনাইল, পিংক ক্যাশিয়া বা ক্যাশিয়া জাভানিকা। গাছ ও ফুলের সৌন্দর্যের কারণে এ গাছ সারা দেশে প্রচুর পরিমাণে লাগানো হয়। ফুল, পাতা ও গাছের গড়ন বেশ নান্দনিক। মাথা ছড়ানো, গোলগাল, বড় ছাতার মতো। গ্রীষ্মের শুরুতে গোলাপি ফুলের ছোট থোকায় ভরে ওঠে গাছ।
মে মাসে প্রকৃতিতে স্নিগ্ধতার পরশ বোলানো আরও কয়েকটি ফুল হলো কনকচূড়া, পালাম, বন আসরা, স্বর্ণচাঁপা, হানিস্যাকল ইত্যাদি।