জিআরই পরীক্ষায় ৩৪০-এ ৩৪০–ই পেয়েছেন তানভীর, কীভাবে এত ভালো করলেন

জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন) পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পেয়েছেন তানভীর তাহমিদ
ছবি: তানভীরের সৌজন্যে

পর্দায় ‘৩৪০’ নম্বরটা দেখে নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, তাই কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন তানভীর তাহমিদ। জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন) পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর! এ-ও সম্ভব!

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বেটস কলেজের অর্থনীতি বিভাগে পড়ছেন তানভীর তাহমিদ, পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ভর্তি পরীক্ষায় ১৭তম হয়েছিলেন। কলেজে থাকাকালীন এসএটি পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ১৫২০। সেই সাফল্যই তাঁকে পরীক্ষার ধরন, সময় ব্যবস্থাপনা ও মনোযোগের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করেছে।

তাই বলে ৩৪০-এ ৩৪০ পেয়ে যাবেন, কখনো ভেবেছিলেন? তানভীরের উত্তর, ‘আমি একদমই প্রত্যাশা করিনি যে ৩৪০ পাব। পরীক্ষার সময় বুঝেছিলাম ভালো দিয়েছি, কিন্তু ইটিএসের ধোঁকাবাজ প্রশ্নগুলোর কারণে আপনি কখনো নিশ্চিত হতে পারেন না। যখন স্কোরটা স্ক্রিনে দেখলাম, কয়েক সেকেন্ড চুপ করে তাকিয়ে ছিলাম—বিশ্বাস হচ্ছিল না।’

আরও পড়ুন

কীভাবে এত ভালো করলেন

জিআরই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বেটস কলেজে পড়ার সময়, যখন বুঝতে পারেন ভবিষ্যতে অর্থনীতির উচ্চতর পড়াশোনার জন্য এটি প্রয়োজন হবে। তাঁর বক্তব্য, ‘আট সপ্তাহের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে জিআরই প্রস্তুতি শুরু করি। প্রথমে একটি পাওয়ারপ্রেপ পরীক্ষা দিই সময় গণনা ছাড়াই, যাতে প্রশ্নের ধরন, ইন্টারফেস আর নিজের দুর্বল জায়গাগুলো বুঝতে পারি। এরপর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গ্রেগম্যাট-এর “আই অ্যাম ওভারহোয়েলমড প্ল্যান” ধাপে ধাপে অনুসরণ করি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় দিতাম—সকালে কোয়ান্ট, বিকেলে ভার্বাল।’

নিয়মিত অনুশীলনই তানভীরকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করেছে। ভার্বালের ভিত আগে থেকেই শক্ত ছিল, তাই প্রথম দিকে কোয়ান্টে সময় দিয়েছেন বেশি। গ্রেগম্যাট, ইটিএসের অফিশিয়াল গাইড আর দ্য টেস্টেড টিউটর—এই তিনটি রিসোর্স হয়ে ওঠে প্রস্তুতির মূল ভরসা।

পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক চাপ ও সময় ব্যবস্থাপনাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তানভীরের নিয়ম ছিল সোজাসাপ্টা—‘প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়তাম। ঘুম, খাবার, বিশ্রাম—সবকিছুতে একটা ছোট কিন্তু স্থায়ী রুটিন বজায় রাখতাম। সপ্তাহে এক দিন সম্পূর্ণ বিরতি রাখতাম, যাতে মানসিকভাবে ফ্রেশ থাকা যায়।’ তাঁর মতে, ধারাবাহিকতা মানে শুধু বেশি পড়া নয়, বরং নিজের শক্তি ও আগ্রহ সঠিকভাবে ধরে রাখা।

প্রস্তুতির সময় কখনো কি মনে হয়েছে ‘পারফেক্ট স্কোর’ পাওয়া অসম্ভব? প্রশ্ন শুনে হেসে বলেন, ‘অবশ্যই, মাঝেমধ্যে মনে হতো এত বড় স্কোর পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু আমি সব সময় ফলের চেয়ে প্রক্রিয়াটার দিকে মনোযোগ দিয়েছি। মনে মনে বলতাম, “আজ আমি শুধু গতকালের চেয়ে একটু ভালো হতে চাই।” এই ছোট উন্নতিগুলোই ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসে রূপ নেয়।’

আরও পড়ুন

তানভীরের পরামর্শ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

তানভীরের মতে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় বাধা রিসোর্স ও দিকনির্দেশনার অভাব। কিছু পরামর্শও দিলেন অর্থনীতির এই ছাত্র, ‘অনেকে জানে না কোথা থেকে শুরু করতে হবে। আমার পরামর্শ—প্রথমেই ইটিএসের অফিশিয়াল বই ও পাওয়ারপ্রেপ টেস্টগুলোকে গুরুত্ব দিন। গ্রেগম্যাট বা টেস্টেড টিউটরের মতো কম খরচের অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করুন। আর ইংরেজিতে দুর্বল হলে ধীরে ধীরে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, প্রতিদিন সামান্য করে হলেও পড়ুন।’

ভবিষ্যতে এমফিল ইন ইকোনমিকস প্রোগ্রামে আবেদনের পরিকল্পনা করছেন তানভীর। তিনি বলেন, ‘জিআরই স্কোর আমাকে কেবল একাডেমিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে আমি যেকোনো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারি।’

আরও পড়ুন