বিশ্বাস করুন, লেখাটা আমিই লিখেছি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রোগ্রাম চ্যাটজিপিটি দিয়ে আস্ত একটা কমিকবই-ই লিখে ফেলেছেন অন্বয় দেবনাথ। কীভাবে কাজটা করলেন? নিজেই জানাচ্ছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

অন্বয় দেবনাথ
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ পরীক্ষার আগেই পাঁচ-সাত দিন বন্ধ থাকে। লম্বা বন্ধের অসুবিধা হলো, পরীক্ষা একেবারে নাকের ডগায় না এলে পড়ালেখায় মন বসে না। উল্টো নানা আইডিয়া মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এমনই একটা আইডিয়া মাথায় এল গত ১৪ জানুয়ারি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে একটা কমিক বই করলে কেমন হয়?

পড়ালেখার পাশাপাশি আমি ‘সায়েন্স বি’ নামে একটি অনলাইন বিজ্ঞানশিক্ষা প্ল্যাটফর্মে ‘কনটেন্ট প্রোডাকশন হেড’ হিসেবে যুক্ত আছি। তাই বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারের খোঁজখবর রাখি সব সময়। ইদানীং ওপেন এআইয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রোগ্রাম ‘ডাল-ই-টু’ এবং ‘চ্যাটজিপিটি’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ভাবলাম, এই প্রোগ্রাম দুটি কাজে লাগিয়েই তৈরি করব কমিক বই।

মুশকিল হলো, ডাল-ই-টু ব্যবহার করতে গেলে ই-মেইলের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ‘ওয়েটিং লিস্টে’ নাম লেখাতে হতো। সেই অপেক্ষমাণ তালিকা ঠেলে ব্যবহার করার সুযোগ আর পাওয়া হয় না।

কমিকের গল্প নাহয় চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে লিখিয়ে নিলাম। কমিকের জন্য ছবি পাই কোথায়? তখন মিডজার্নি নামের ওয়েবসাইটটা মনে ধরল। ওদের ছবিগুলো এত সুন্দর যে দেখে বোঝার উপায় নেই, এগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি।

কাজটা শুরু করে বিপাকেই পড়তে হলো। চ্যাটজিপিটি গল্প লিখে দিচ্ছে, মিডজার্নি ছবি তৈরি করে দিচ্ছে, শুনতে বেশ মজাই লাগে। আদতে তা নয়। কারণ, চ্যাটজিপিটিকে শুধু নির্দিষ্ট একটি বিষয় নিয়ে গল্প লিখতে বললেই হয় না। সে যেন সঙ্গে বর্ণনা, চরিত্র এবং কাহিনির পটভূমি তুলে ধরতে পারে, সেই নির্দেশনাও দিতে হয়। অবশেষে বিস্তর গবেষণা এবং কমান্ডের খুঁটিনাটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির পর মনের মতো একটি কমান্ড খুঁজে পাই। ভাবছিলাম, মানবজাতির শেষ এবং শেষ থেকে আবার শুরুর কোনো ঘটনা নিয়ে কমিক বানাব। চ্যাটজিপিটি মনের মতোই গল্প লিখেছিল। অবশ্য মানুষের মতো জটিল চিন্তাভাবনা এখনো সে করতে পারে না। তার গল্পটাও বেশ সাদাসিধা। কিন্তু ভালো লাগার মতো কিছু চরিত্রও সে তৈরি করেছিল।

চ্যাটজিপিটির বোঝার সুবিধার্থে গল্পটা লিখেছিলাম ইংরেজিতে৷ তাই পুরোটাকেই আবার বাংলা করতে হয়েছে। বইয়ের জন্য একটা সুন্দর নামও ঠিক করে দেয় সে। ‘এক্লিপস অব হিউম্যানকাইন্ড’, অর্থাৎ ‘মানবজাতির গ্রহণ’।

গল্প লেখা শেষে শুরু করি ছবি তৈরির কাজ। এখানেই মূল সমস্যা। মিডজার্নি ভালো মানের ছবি তৈরি করতে পারলেও একই চরিত্র বারবার তৈরি করতে পারে না। কিন্তু কমিক বইয়ে তো একই চরিত্রকে নানা রূপে বারবার দেখাতে হতো। সমস্যা সমাধানে ‘রেফারেন্স ইমেজ’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিই। মূলত মিডজার্নিতে ডিসকর্ডে ছবি আপলোড করে সেটি ব্যবহার করে নতুন ছবি তৈরির সুবিধা আছে। এই সুযোগই কাজে লাগাই, ফলে প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই ৮০-৯০ শতাংশ মিল আনা সম্ভব হয়।

শুরুতে আমি একাই বইটা নিয়ে কাজ করছিলাম। কমিক বই হিসেবে প্রকাশ করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। সায়েন্স বির পেজে ছবি আকারে পোস্ট করব, এটাই ছিল ভাবনা। কিন্তু পরে সায়েন্স বির দলের অন্যদের বিষয়টি জানালে তারা কমিক বই-ই প্রকাশ করার পরামর্শ দিল। সেটা আরেক মহাযজ্ঞ। ফটোশপে আলাদা আলাদা ছবি-লেখা বসিয়ে আস্ত একটা বই বানানো সোজা কথা নয়। নানা জটিলতা শেষে অবশেষে ১৫ জানুয়ারি আমরা বইটা প্রকাশ করতে পারি। দেখতে দেখতে এখন পর্যন্ত ১ লাখের বেশি মানুষ কমিক বইটি ডাউনলোড করে ফেলেছে। কমিক বইটি ডাউনলোড করতে পারেন এই লিংক থেকে।

কমিক বইটা পুরোটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছি বলে ভাববেন না এই লেখাও চ্যাটজিপিটির লেখা। এটা কিন্তু আমিই লিখেছি। বিশ্বাস করুন!