প্রেমিকের থুতনিতে নাড়া দিয়ে বলে আসলাম, ‘বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কেড়ে’

‘ছুটির দিনে’র আহ্বানে ভালোবাসার টক–ঝাল–মিষ্টি গল্প লিখে পাঠিয়েছেন পাঠক। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগেই পড়ুন বাছাই এমনই একটি লেখা।

ছুটির দিনের ভালোবাসা দিবসের আয়োজনে মডেল হয়েছেন তিথি ও টুটুল
ছবি: সুমন ইউসুফ

আমার প্রেমের গল্পে রবিবাবু ঘাপটি মেরে ঢুকে গেছেন, তার জন্য অবশ্য আমি দায়ী না, দায়ী আমার সর্বহারা প্রেমিক। যদিও অফিশিয়ালি সে কখনো আমার প্রেমিক ছিল না। অনেকটা প্রেমিকের মতোই আরকি। সেটাও সমস্যা না, সমস্যা অন্য জায়গায়। যে আমার প্রেমিকের মতো, তার নামটা এমন ফুলের নামে যে ফুলের গাছভর্তি কাঁটা আর কাঁটা। এমন কাঁটাময় নাম ধরে ডাকলে যদি শেষমেশ সম্পর্কটা না টেকে!

তাকেই বললাম, ‘তোমার আর কোনো নাম নাই?’

কিছুক্ষণ ঘাড় চুলকে বলল, ‘আমার একটাই নাম, দুইটা ছাগল আকিকা করে এই নাম রাখা হয়েছে।’

‘অহ!’

এই দুই ছাগল আকিকা নিয়ে আবার আরেক কাহিনি। ছাগল দুইটার একটা নাকি জবাই করার আগে পালিয়ে গিয়েছিল, আর জন্মের সময় নাকি খুবই টাকাপয়সার টানাটানি চলছিল সংসারে। সেই ঘর পালানো ছাগল খুঁজে তারপর আকিকা করে নাম ফিক্সড করা হলো।

‘দেখছ, তোমার নামটাই ঝামেলার, একটা ভালো নাম ঠিক করো।’

আমার প্রেমিক মহাশয় আবার ঘাড় চুলকানো শুরু করল। কোনো কিছুতে দিশা না পেলেই তার চুলকানি শুরু হয়ে যায়।

‘পাই না তো নাম, আমার নামটাই থাকুক না,’ এমন করুণ গলায় বলল যে পাষাণ হৃদয়ও গলে যাবে। কিন্তু আমি তো পাষাণ না, আমি হচ্ছি নারী। এত সহজে গললে চলবে কেন!

‘উঁহু, অন্য নামই লাগবে। এমন কাঁটা গাছ থেকে যে ফুল হয় আর সেই ফুলে কোনো মানুষের নাম থাকলে একটা কুফা লাগবেই লাগবে।’

প্রেমিক মহাশয় কিছুতেই রাজি হচ্ছে না, টানাটানির সংসারে দুই দুইটা ছাগল জবাই করে রাখা নাম।

‘আরে বুদ্ধু, তোমার তো আর সার্টিফিকেটের নাম বদলাতে বলছি না। শুধু যে নামে ডাকা হয়, তার বদলি একটা নাম রাখবে।’

অবস্থা এমন, নামের জন্যই না সম্পর্কটা কেঁচে যায়! ওই যে বললাম না কাঁটা গাছের ফুলের নামে নাম আর সে মানুষ কতই–বা সুবিধার হবে।

‘নাম না রাখলে হয় না?’ এবার একটু জোর দিয়েই বলল।

‘শুনো, নাম এখন কোনো ব্যাপারই না। একটা নতুন নাম রাখি, দেখবে দুদিন বাদে মনে হবে এটাই তোমার আসল নাম।’

মাথা নিচু করে বেচারা ভাবতে লাগল। আমিও সহজে ছাড়ার পাত্রী নই। নাম তো একটা দিতেই হবে, কাঁটা গাছের ফুল নিয়ে আমি থাকতে পারব না, ইম্পসিবল।

ঘণ্টাখানেক বিভিন্ন ক্যাটাগরির নাম নিয়ে ঝোলাঝুলি হলো। কোনো নামই তার পছন্দ হয় না। আসলে কি অন্য নামে যেতে চায় না, এটা নাকি অন্য মানুষের শরীরে আত্মা আটকে যাওয়ার মতো ব্যাপার-স্যাপার!

একসময় আমার যথেষ্ট সদ্য হওয়া নতুন প্রেমিক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল, ‘আমার আর এই সব ভালো লাগছে না, এই একটা নাম নিয়ে কি নিষ্ঠুর জমিদারের মতো আচরণ করছ। আমার নামটা ছাড়া আর কি সম্বল আছে! তা নিয়েও তোমার মাথাব্যথা! যা মন চায় রাখো, আমি তো সর্বহারা উপেন হয়েছি এখন। প্রেম এত প্যারার কে জানত!’

প্রেমিক মহাশয় জানতেও পারল না সে যে নিজের একটা নাম বের করে ফেলেছে।

‘আহা, রাগ করো কেন—সমস্যার সমাধান তো হয়েই গেছে।’

আমার সদ্য প্রেমিক খুবই অবাক, ‘কখন হলো? দুই ঘণ্টা ধরে না এটা নিয়ে যুদ্ধ হচ্ছে!’

‘তুমিই তো ঠিক করলে তোমার নাম।’

‘আমি!’

‘হ্যাঁ, তুমি—বললে না সর্বহারা উপেন হয়েছ আর আমি সব কেড়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছি কি না।’

উপেন নামটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আসার আগে প্রেমিকের থুতনিতে নাড়া দিয়ে বলে আসলাম, ‘বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কেড়ে।’

নৌশিন নুজহাত ইসলাম: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ