নিজেকে নিয়ে কেন কৃতজ্ঞ থাকবেন

সপ্তাহজুড়ে কাজ, ডেডলাইন, ব্যস্ততার মধ্যে পেশাজীবন আর ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রাখাই অসম্ভব। এ ছাড়া থাকে সম্পর্কের দোলাচল, চাকরির ক্ষেত্রে রেষারেষি আরও কত কী! তবে এসবের মধ্যেও নিজেকে কখনো কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন? চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এতটা পথ আসার জন্য?


অনেকে ভাবেন, নিজের প্রতি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়? কৃতজ্ঞতা মানে কেবল ধন্যবাদ জানানো নয়। সত্যিকার অর্থেই কৃতজ্ঞ থাকা হলো মনের প্রশান্তি অনুভব করা। এটি জীবনের ছোট ছোট ভালো মুহূর্তকেও গুরুত্ব দিতে শেখায়। শুধু মনে মনে নয়, নিজেকে কেন কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন, তা লিখেও রাখতে পারেন।

প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে আপনি ৩ থেকে ১০টি বিষয় লিখে রাখতে পারেন
ছবি: প্রথম আলো

গ্র্যাটিচিউড জার্নালিং কী

গ্র্যাটিচিউড জার্নালিং করতে আপনি প্রতিদিন বা সপ্তাহে একাধিকবার সেসব বিষয়ই লিখবেন, যেসবের জন্য আপনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। এটি লিখতে পারেন সাদা খাতায়, ডায়েরিতে, ফোনের নোটপ্যাডে কিংবা সুন্দর নকশার কোনো জার্নালে; যেখানে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এভাবে প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে আপনি ৩ থেকে ১০টি বিষয় লিখে রাখতে পারেন। তা হতে পারে এমন সব ঘটনা, যা আপনাকে আনন্দ দিয়েছে, ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছে বা দিয়েছে কোনো জীবনমুখী শিক্ষা। চেষ্টা করবেন বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করে লিখতে, এতে গভীরভাবে তা অনুভব করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

যেভাবে শুরু করবেন

গ্র্যাটিচিউড জার্নালিং লিখতে পারেন সাদা খাতায়, ডায়েরিতে, ফোনের নোটপ্যাডে কিংবা সুন্দর নকশার কোনো জার্নালে
ছবি: প্রথম আলো

সময় নির্ধারণ করুন: সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমানোর আগে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি করুন।

একটা নির্দিষ্ট ডায়েরি বা অ্যাপ নিন: যা আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রতিদিন অন্তত তিনটি বিষয় লিখুন: ভালো লাগার বা মনের রাখার মতো তিনটি বিষয় ডায়েরিতে লিখুন। যেমন ‘আজ সকালে নিজের জন্য প্রিয় খাবার তৈরি করেছি’, ‘দীর্ঘদিনের পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো’, ‘এই কাজের জন্য আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত’ ইত্যাদি।

বিশদভাবে ভাবুন: শুধু কী ঘটনা ঘটেছে, তা নয়, কেন সেটি ভালো লেগেছে, সেটিও লিখুন।

আরও পড়ুন

ভিন্ন ভিন্ন জিনিস লেখা

মঙ্গলবার লিখতে পারেন নিজের কাজে লাগানো কোনো সুযোগ
ছবি: ফ্রিপিক

সপ্তাহে সাত দিন ভিন্ন ভিন্ন জিনিস লিখতে পারেন। যেমন—
১. সোমবার লিখে রাখতে পারেন আপনি যাঁদের ভালোবাসেন, তাঁদের সঙ্গে কাটানো কোনো মুহূর্ত বা ঘটনার কথা।
২. মঙ্গলবার লিখতে পারেন নিজের কাজে লাগানো কোনো সুযোগ।
৩. বুধবার তা হতে পারে সেদিনের ছোট কোনো আনন্দময় ঘটনা।
৪. বৃহস্পতিবার লিখতে পারেন এই সপ্তাহের কোনো চ্যালেঞ্জের কথা, যাতে আপনি সফলভাবে উতরে গেছেন।
৫. শুক্রবার ছুটির দিনে নিজেকে কেমন সময় দিলেন, সেটিই লিখুন নাহয়।
৬. শনি বা রোববার লিখতে পারেন নিজের স্বাস্থ্য বা যত্ন নিয়ে।
নও।

আরও পড়ুন

কেন কৃতজ্ঞ থাকা এত জরুরি

আমরা প্রায়ই এমন কিছুর পেছনে ছুটি, যা আদতে নেই। সফলতার এই ইঁদুরদৌড়ে আমরা নিজেদের অর্জনকে তুচ্ছ করে দেখি, হারিয়ে ফেলি তার গুরুত্ব। অথচ গবেষণা বলছে, নিয়মিত কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনের চর্চা করলে মানুষ মানসিকভাবে আরও সুখী হয়। এমনকি শারীরিকভাবে আরও প্রফুল্ল ও সম্পর্কের দিক থেকেও আরও শক্ত অবস্থানে যায়। এ ছাড়া এটি—

  • মানসিক শান্তি ও ইতিবাচক মনোভাব বাড়ায়

    কৃতজ্ঞ মানুষেরা সাধারণত জীবনের প্রতি আরও সন্তুষ্ট হন। তাঁরা হতাশা, দুশ্চিন্তা কিংবা হিংসা থেকে দূরে থাকেন এবং নিজেদের আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী মনে করেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, কৃতজ্ঞতা মস্তিষ্কের নিউরোপাথগুলোকে নতুনভাবে তৈরি করে, যা আমাদের সুখ ও ইতিবাচক চিন্তা বাড়ায়।

আরও পড়ুন
  • শরীরেও প্রভাব ফেলে

    শুধু মন নয়, কৃতজ্ঞতা ভালো ঘুম, উত্তেজনা হ্রাস, হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেকে কৃতজ্ঞ ভাবেন ও এ নিয়ে চিন্তা করেন বা লেখেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় আরও শান্তিতে ঘুমান এবং সকালে উঠে আরও বেশি শান্তি অনুভব করেন।

প্রতিদিন নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন, কৃতজ্ঞ হোন, লিখে রাখুন
ছবি: পেক্সেলস
  • সম্পর্ক করে আরও মজবুত

    ধন্যবাদ বলা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শুধু ভদ্রতা নয়, এটি একধরনের অভ্যাস। এটি সম্পর্কের মধ্যে আস্থা, সহানুভূতি ও ভালোবাসা বাড়ায়। ফলে কর্মক্ষেত্র, বন্ধুত্ব কিংবা দাম্পত্য জীবন—সবখানেই দেখা যায় ইতিবাচক পরিবর্তন। তাই প্রতিদিন নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন, কৃতজ্ঞ হোন, লিখে রাখুন এবং দেখুন আপনার জীবনে তা কীভাবে প্রভাব ফেলে। কৃতজ্ঞতা লেখার এ অভ্যাস বদলে দিতে পারে আপনার মনোভাব, মানসিকতা, এমনকি জীবনদর্শ।

সূত্র: ইন্সপায়ার হাব ও পেপার অ্যান্ড জেমস

আরও পড়ুন