ব্যস্ততার ভিড়ে একটা স্বস্তির দিন

শোভাযাত্রা, বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্ল্যাশ মব, খেলাধুলা, র‍্যাফল ড্র—সব মিলিয়ে আয়োজনটি হয়ে ওঠে প্রাণের মিলনমেলা
ছবি: সংগৃহীত

বহুদিন পর, বহু আকাঙ্ক্ষিত ‘ডিএমসি ডে’। গল্প-আড্ডা-স্মৃতিচারণায় ১০ জুলাই পালিত হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শোভাযাত্রা, বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্ল্যাশ মব, খেলাধুলা, র‍্যাফল ড্র—সব মিলিয়ে আয়োজনটি হয়ে ওঠে প্রাণের মিলনমেলা।

প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যালামনাই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান। আরও ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ আবদুল হানিফ, যাঁরা এই মেডিকেল কলেজেরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। মঞ্চ মাতিয়েছেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, কনা ও জনপ্রিয় ব্যান্ড ব্যাকস্টেজ। ডিএমসি ডে উপলক্ষে ম্যাগাজিনও প্রকাশ করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যাচগুলোকে ‘কে’ অক্ষরটির সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়। এ সময়ের নবীনতম ব্যাচ কে-৭৯, ঢোকার অপেক্ষায় আছে কে-৮০। বিস্ময় আর শ্রদ্ধা নিয়ে অগ্রজদের দেখছিলেন ছোটরা। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কে-৬ ব্যাচের ডা. কে এম মাকসুদুর রহমান, যিনি একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ। কে-৪০ ব্যাচের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও হাজির হয়েছিলেন। কথা হলো অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদের সঙ্গে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগের তিনি প্রধান। কে-৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। এখানকার ইট-কাঠ-পাথরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগটা আছে, কিন্তু নেই প্রিয় বন্ধুরা, নেই উচ্ছলতার দিন। উপলক্ষ পেয়ে তাই ছাত্রের মতোই লেকচার গ্যালারিতে বসলেন, ক্যানটিনে গেলেন। তাঁর স্ত্রী ডা. জয়শ্রী সাহার ব্যাচ কে-৫৫, তিনি এখন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ চিকিৎসক এসেছিলেন এ আয়োজনে
ছবি: সংগৃহীত

শুধু স্বামী-স্ত্রী নন, বাবা-ছেলেরও দেখা মিলল। অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। তিনি কে-৩৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর ছেলে ডা. সাইফ হোসেন খানও ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়েছেন। ব্যাচ কে-৬৩। তিনি এখন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার। বলছিলেন, ‘আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজকে গভীর আবেগে অন্তরে ধারণ করি। এখানে এলেই অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে।’

আরও পড়ুন

কে-৬৩ ব্যাচের ডা. তাহমিদা খানম খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা। ১০ বছর পর এলেন ডিএমসি ডেতে। হোস্টেলের যে কক্ষে থাকতেন, সেখানে গেলেন; গেলেন লেকচার গ্যালারি, টিউটোরিয়াল কক্ষ আর অ্যানাটমি ডিসেকশন হলেও। হোস্টেলের ক্যানটিনে চা-ও খেয়েছেন সেই পুরোনো দিনের মতো।

আনিকা ঊর্মি এখন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। ব্যাচ কে-৭৪। ক্যাম্পাস-জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এই মঞ্চে গান গাইলেন। কে-৭১ ব্যাচের ডা. শান্তনু দাশের সঙ্গে তাঁর দ্বৈত সংগীত ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ সবাই ভীষণ পছন্দ করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যান্ড দল ‘ঐকতান’-এর দলগত সংগীতেও ছিলেন। দ্বৈত গানটির সঙ্গে নেচেছেন কে-৭৮ ব্যাচের শ্রেয়া দে। ৭৮তম ডিএমসি ডে উপলক্ষে ফ্ল্যাশ মব করেছিল কে-৭৮। সেই ব্যাচেরই আরেক শিক্ষার্থী এস এম জাহিন জাওয়াদ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন পুরো আয়োজনের বিস্তারিত। ‘ঐকতান’-এর হয়ে অ্যাকুস্টিক গিটার বাজিয়েছেন জাহিন, কণ্ঠও দিয়েছেন। দলীয় গানে অংশ নিয়েছেন কে-৭৯ ব্যাচের জীবন। করেছেন আবৃত্তিও। তিনি বলেন, ‘অগ্রজদের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলো। তাঁদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণাও পেলাম।’