জানেন কি সিলেট অঞ্চলের কিছু এলাকায় এখনো মানুষ মাটির বিস্কুট খায়
লাল ও কালচে রঙের একধরনের বিস্কুট, যা সিলেট অঞ্চলে ‘ছিকর’ নামে পরিচিত। এই বিস্কুটের বিশেষত্ব হলো এটি তৈরি হয় মাটি দিয়ে। সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় এই বিস্কুট এখন দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে।
যদিও বিষয়টি শুনতে অনেকের অবাক লাগে। কিন্তু সিলেটে এই মাটির বিস্কুটের বেশ চাহিদা রয়েছে। কেজি দরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সিলেট থেকে ছিকর সংগ্রহ করে নিয়ে যান অনেকে।
ছিকর তৈরি হয় টিলা বা পাহাড়ের মিহি এঁটেল মাটি দিয়ে, যা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে আগুনে পোড়ানোর পর তৈরি হয় মাটির বিস্কুট। স্বাদ হালকা টক ও মিষ্টি ধরনের বলে গর্ভাবস্থায় অনেকে ছিকর খেতে পছন্দ করেন। আগুনে পুড়িয়ে ছিকর তৈরি করার জন্য এতে কিছুটা পোড়া গন্ধ থাকে। আগুনে পোড়া অংশ লালচে ও কিছুটা কালো রঙের হয়ে থাকে।
সিলেটের কিনব্রিজ এলাকায় ৩৫ বছর ধরে ছিকর বিক্রি করেন মো. শহীদুল ইসলাম। বললেন, বেচাকেনা ভালো। কেউ কেউ একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ কেজি কিনে নিয়ে যান। গড়ে মাসে তিনি ৩০ কেজির মতো ছিকর বিক্রি করেন।
সিলেটের একেক অঞ্চলে একেক স্বাদের ছিকর পাওয়া যায়। সিলেটের বিশ্বনাথের লালাবাজার; ওসমানীনগরের গোয়লাবাজার, গোলাপগঞ্জ; সুনামগঞ্জের ছাতকসহ হবিগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে তৈরি হয়ে থাকে ছিকর। প্রথমে টিলা বা পাহাড়ের মিহি এঁটেল মাটি সংগ্রহ করে পানিতে ভিজিয়ে নরম করা হয়। এরপর মাটিগুলো হাত দিয়ে মেখে মণ্ড তৈরি করা হয়। এ সময় মাটির সঙ্গে গোলাপজলসহ কিছু উপকরণ মেশানো হয়। পরে হাত দিয়ে মণ্ডগুলোকে চ্যাপটা আকৃতি করে রোদে শুকানো হয়।
রোদে শুকানোর পর চাকু দিয়ে বিস্কুটের মতো ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এবার চুলায় পুড়িয়ে তৈরি হয় মাটির বিস্কুট। এরপর সেগুলো সিলেটের বিভিন্ন বাজারে দোকানদারদের কাছে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কেজি দরে খুচরা ১২০ টাকায় বিক্রি হয় ছিকর। পাইকারিতে কিনলে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দাম পড়বে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা রোকসানা খানম বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন ছিকর খাওয়া শুরু করেন।
এখনো ছেলেদের বললে তাঁরাই কিনে এনে দেন। সিলেটের কুমারগাঁও এলাকার বাসিন্দা রিয়াদ আহমদ বলেন, তিনি আত্মীয়স্বজনের জন্য ছিকর কিনে প্রায়ই যুক্তরাজ্যে পাঠান। এক মাস আগে তিনি কিনব্রিজ এলাকা থেকে দুই কেজি ছিকর কিনে দিয়েছিলেন।
মাটির বিস্কুট ছিকরের স্বাদের সঙ্গে আপনার জিব যদি অভ্যস্ত না হয়, তাহলে এর স্বাদ আপনার ভালো লাগবে না। তবে যাঁরা একবার এর স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তাঁরা অনেকটা অভ্যাসের মতো ছিকর খেয়ে থাকেন।
মাটির এই বিস্কুট খাওয়া স্বাস্থ্যকর কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন বলেন, মাটি যত উন্নত মানের হোক না কেন, এতে ভাইরাস বা কৃমির ডিম থাকতে পারে। এই মাটির বিস্কুট খাওয়া ক্ষতিকর কি না, তা নিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক তথ্য নেই। অনেক এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এই বিস্কুট খান। এতে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।