বাবার মৃত্যুর পরদিনও পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম
দরিদ্র পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার সুযোগ পান তাঁরা। আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা তাঁদের দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ জন ও ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসির সহযোগিতায় ৮৬ জনসহ মোট ১২৮ জন এ পর্যন্ত এই বৃত্তি পেয়েছেন। ৭৬ জনের এরই মধ্যে স্নাতক শেষ হয়েছে, যাঁদের অনেকেই দেশে-বিদেশে ভালো অবস্থানে আছেন। ২০২৫ সালেও বৃত্তি পেয়েছেন ১০ জন। পড়ুন তাঁদের একজন—মৌলভীবাজারের দীপ্তি যাদব–এর গল্প।
২০১১ সালে আমার বাবার ক্যানসার ধরা পড়ে। মায়ের ওপর সংসারের এসে পড়ে সব দায়িত্ব। শমশেরনগর চা–বাগানের একজন চা–শ্রমিক আমার মা। বাবা অসুস্থ, কাজে যেতে পারেন না। তবু তো ছিলেন, কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি চলে গেলেন। পৃথিবীতে সেই দিনটাই মনে হয় আমার সবচেয়ে খারাপ দিন। তখন অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। বাবার মৃত্যুর পরদিনও পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কারণ, বাবাই বলতেন, এ সমাজে টিকে থাকতে হলে পড়াশোনাই তোমার একমাত্র অস্ত্র।
টাকার অভাবে অনেক সময় বই কিনতে পারিনি। ২০২২ সালে এসএসসিতে যখন জিপিএ–৫ পেলাম, খুশিটা ঠিক উদ্যাপন করতে পারছিলাম না। কারণ, কলেজে পড়তে পারব কি না, তখনো নিশ্চিত ছিলাম না। সবাই বলত, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। আর আমার মনে হতো, বাবা থাকলে হয়তো এসব কথা শুনতে হতো না। আমাদের পড়ালেখার খরচ জোটানোর জন্য চা–বাগানে দুই বেলা কাজ করতেন মা। তাঁর পরিশ্রমের প্রথম ফলস্বরূপ ভাইটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকি। কোথাও যখন সুযোগ হলো না, আবার শুরু হলো সেই একই চাপ—মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় অবশেষে এইউডব্লিউতে সুযোগ হয়। মায়ের দৈনিক আয় ১৭৮ টাকা। অসুখ-বিসুখের জন্য প্রতিদিন কাজেও যেতে পারেন না। আশা করি, অদ্বিতীয়া বৃত্তি আমাদের জীবনটা একটু সহজ করবে।