জেনে নিন গাছে কলম করার পদ্ধতি

কলম করার উপযুক্ত সময় জুন-আগস্ট মাস
ছবি : কবির হোসেন

অনেকে এই সময় গাছের কলম করে নিজে লাগান, অন্যকে উপহার দেন। কলম কয়েক ধরনের হতে পারে। দাবা কলম, ছেদ কলম, জোড় কলম, গুটি কলম ইত্যাদি। কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, বাড়িতে সহজেই আমরা গুটি কলম করতে পারি। এই পদ্ধতিতে একটি গাছে একই ধরনের নতুন আরেকটি চারা উৎপাদন করা যাবে। উপযুক্ত সময় জুন-আগস্ট। জবা, লেবু, পেয়ারা, কামিনী, টগর, রঙ্গনগাছে গুটি কলম করা যায়। পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে এক উদ্ভিদের শাখা কেটে নিয়ে অন্য উদ্ভিদে সংযোজন করা যায়, এতে একটি ফুলের গাছে নানা রঙের ফুল আনা সম্ভব।

কলম করার পদ্ধতিতে একটি গাছে একই ধরনের নতুন আরেকটি চারা উৎপাদন করা যাবে
ছবি : কবির হোসেন

গাছ ও শাখা নির্বাচন

কলম করার জন্য দেড়-দুই বছর বয়সী গাছের ডাল নির্বাচন করতে হবে। এর বেশি বয়সী গাছের পেনসিলের মতো মোটা ডালেও গুটি কলম করা যায়। মাতৃগাছ থেকে পেনসিলের মতো মোটা ডালকে বেছে নিতে হবে। পেনসিলের মতো ডালটির মধ্যে একটি গিঁটের নিচে কলমটি করতে হবে।

যা প্রয়োজন

বাকল তোলার জন্য ধারালো ছুরি, মাটির পেস্ট মোড়ানোর জন্য পলিথিন, পলিথিন দিয়ে ঢাকা মোড়কটি বাঁধার জন্য সুতলি ও মাটির পেস্ট।

গুটি কলম করার জন্য প্রথমেই মাটির পেস্ট তৈরি করতে হবে। জৈব সারমিশ্রিত ৩ ভাগ এঁটেল মাটি ও ১ ভাগ পচা গোবর বা পচা পাতা একত্রে পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেস্টটিতে প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। মাটিতে পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। একটু শক্ত অথচ হাত দিয়ে টিপলে নরম হবে, এ রকমভাবে তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন

কলম করার পদ্ধতি

কলম করার জন্য দেড়-দুই বছর বয়সী গাছের ডাল নির্বাচন করতে হবে
ছবি : কবির হোসেন
  • প্রথমে মাতৃগাছে পেনসিলের মতো মোটা একটি ডাল বেছে নিতে হবে। মাতৃগাছের নির্বাচিত ডালের আগা থেকে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা একটি গিঁটের নিচে কলমটি করতে হবে।

খেয়াল রাখবেন যেন, ডালটির শক্ত কাঠটিতে আঘাত না লাগে
ছবি : কবির হোসেন
  • ডালের মধ্যে একটি গিঁটের নিচে তিন-চার সেন্টিমিটার মাপে ডালের ছাল ধারালো ছুরি দিয়ে গোল করে কাটতে হবে। সাবধানে কেবল ডালটির বাকল উঠিয়ে ফেলতে হবে। ডালটির শক্ত কাঠটিতে আঘাত লাগানো যাবে না।

আরও পড়ুন
কলম করা ডালটি চার-পাঁচ সপ্তাহ রাখার পর বড় টবে লাগানোর উপযুক্ত হয়ে যাবে
ছবি : কবির হোসেন
  • বাকল ওঠানোর পর কাঠে লেগে থাকা সবুজ রঙের আবরণটি ছুরির উল্টো দিক দিয়ে চেঁছে নিতে হবে।

মাটির পেস্টটি যেন ঠিকমতো বসে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে
ছবি : কবির হোসেন
  • মাটির পেস্টটি ডালের কাটা অংশে দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। যেন বাকল তোলা পুরো জায়গায় ঠিকমতো মাটির পেস্টটি বসে।

কলম করা ডাল, অর্থাৎ গুটির মধ্যে শিকড় আসতে সময় লাগে আড়াই-তিন মাস
ছবি : কবির হোসেন
  • ঢেকে দেওয়ার পর পলিথিন দিয়ে মাটির বলটি ঢেকে দিয়ে ওপরে, নিচে এবং দুই দিকে সুতলি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। পলিথিন ছাড়া কাপড় বা নেট দিয়েও পেঁচিয়ে নেওয়া যায়। কলম করা ডাল, অর্থাৎ গুটির মধ্যে শিকড় আসতে সময় লাগে আড়াই-তিন মাস। দুই-আড়াই মাসের মধ্যেই শিকড় বেরিয়ে যায়। প্রথমে সাদা রঙের শিকড় দেখা যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, মাটি যেন না শুকিয়ে যায়।

পলিথিন স্বচ্ছ হলে বাইরে থেকেই শিকড়গুলো দেখতে পাবেন
ছবি : কবির হোসেন
  • শিকড় যখন খয়েরি বা তামাটে হবে, তখন গুটিসহ ডালটি গাছ থেকে কেটে নিতে হবে। গুটির পলিথিন সরিয়ে ডালটি পলিথিনের ব্যাগ অথবা টবে ছায়াঘেরা জায়গায় রেখে দিন। চার-পাঁচ সপ্তাহ রাখতে হবে।পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে কলম করা ডালটি লাগানোর কিছুদিন পরই পলিথিন ব্যাগের ভেতরে শিকড় দেখা যাবে। পলিথিন স্বচ্ছ হলে বাইরে থেকেই শিকড়গুলো দেখতে পাবেন। নিয়মিত পানি দিতে হবে। কলম করা ডালটি চার-পাঁচ সপ্তাহ রাখার পর বড় টবে লাগানোর উপযুক্ত হয়ে যাবে।