শরিফুলের খাতা এখন বিক্রি হয় নিয়মিত
ছবি: সংগৃহীত

আগে একটা আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন শরিফুল। সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। বাধ্য হয়ে দুই বছর পর কাজটা ছেড়ে দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে ভেবেছেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনোটিকেই ঠিক জুতসই মনে হচ্ছিল না। সর্বশেষ, খাতা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। শরিফুল বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম অন্য কোম্পানির খাতা বিক্রি করব। কিন্তু হিসাব করে দেখলাম, এতে তেমন একটা লাভ থাকবে না। এরপর নিজেই খাতা প্রস্তুত করে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। গত মার্চ থেকে তিনি খাতা বিক্রি করছেন। মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন, এখন মূলধনই ১৫ হাজার টাকা। শরিফুল জানালেন, এ পর্যন্ত খাতা বিক্রি করেছেন প্রায় ২ হাজার।

একদিন নিজের একটা খাতা তৈরির কারখানা হবে, মনে এমন স্বপ্নই লালন করেন শরিফুল। পদ্মা সেতু নামটা এই স্বপ্নেরই ফল। শরিফুলের ভাষায়, পদ্মার ওপর সেতু হতে পারে, একসময় এটি ছিল স্বপ্ন। আমি যে স্বপ্ন দেখি, সেটি বাস্তবায়নও একইভাবে কঠিন কাজ। সেখান থেকে পদ্মা সেতুর সঙ্গে মিলিয়ে খাতার নাম পদ্মা সেতু।

বর্তমানে চার ধরনের খাতা বিক্রি করেন শরিফুল। ৬৮, ৮০ ও ১০০ পৃষ্ঠা। দাম যথাক্রমে ২০, ২৫, ৩০ ও ৪০ টাকা। খাতাগুলো নিজে তৈরি করে নিজেই বিক্রি করেন। প্রথমে নিজ জেলা গাইবান্ধা থেকে খাতার মলাট ও কাগজ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় প্রেসে ডিজাইন, কাটিং, নামকরণের কাজগুলো করেন। সবকিছু শেষ হলে খাতাগুলো বাঁধাইয়ের কাজ করেন।

গাইবান্ধায় খাতা প্রস্তুত হলেও বিক্রয়-বিপণনের কাজটা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের রেলওয়ে স্টেশন, শহীদ মিনারে মাঝেমধ্যেই খাতা নিয়ে বসেন শরিফুল। এ ছাড়া নিজ কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ থেকে সহপাঠী, বন্ধুবান্ধবসহ বিভিন্ন জন খাতা সংগ্রহ করেন। শরিফুলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তাঁর খাতাই মানুষ কেন কিনবে? উত্তরে বলেন, বাজারের অন্যান্য খাতার চেয়ে আমার খাতার কাগজের মান ভালো। আর দামও তুলনামূলকভাবে কম।

খাতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান করতে চান এ কথা আগেই জানিয়েছিলেন। শরিফুল এবার যোগ করলেন, ‘আমি চাই, আমার কারখানার খাতা সারা বাংলাদেশে বিক্রি হবে। যার একটা সম্ভাব্য নাম ইতিমধ্যে ঠিক করেছি—‘শরিফুল পেপার হাউস’। পাশাপাশি আরও দুটি পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি হলো কলম, অন্যটি স্কেল। দুটি পণ্যই হবে কাগজের, পরিবেশবান্ধব।