বেরোনোর দরজাগুলো কিন্তু নতুন কোনো জগতে ঢোকার রাস্তাও হতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি টিশ স্কুল অব দ্য আর্টসে পড়েছেন ম্যাগি রজার্স। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সমাবর্তন বক্তা হিসেবে হাজির হয়েছিলেন এই মার্কিন গায়িকা।
আজ অনেক বক্তাই তোমাদের বলবেন, আজকের অনুভূতিটা মনে রেখো। কিন্তু আমি যখন এই কথা বলছি, বুঝে নিয়ো এতে কোনো ভুল নেই। কারণ, তোমরা যেখানে বসে আছ, মাত্র ৯ বছর আগে আমিও সেখানে ছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সত্যিকার আমিকে আবিষ্কারের একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। সাহায্য করেছিল আমার বন্ধুরা। ওদের সঙ্গে নিয়েই শিখেছি, কীভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়। চারদিকে তাকাও। যাঁদের দেখতে পাচ্ছ, তাঁরাই তোমার পেশাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
আমি যখন সমাবর্তনে এসেছিলাম, তখন আমাকেও কেউ একজন এ কথা বলেছিল। বিশ্বাস করিনি। কারণ, তখন তো ভবিষ্যৎ নিয়ে রোমাঞ্চিত ছিলাম, ভাবছিলাম কত না নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হবে। এখন বুঝি, কথাটা আসলে মিথ্যা ছিল না।
তুমি যখন জীবনভর শিল্পের সঙ্গে জীবন কাটাতে চাইবে, তোমাকে ঝুঁকি নিতে হবে। অর্থ, জীবনযাপনের ধরন, কিংবা ভালোবাসা—সব ক্ষেত্রেই ঝুঁকি থাকবে। স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নপূরণের মাঝখানের পুরোটা সময় বারবার তোমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। পুরো পৃথিবী বারবার তোমাকে প্রশ্ন করবে, তুমি সত্যিই কি এটা চাও? তোমার যখন মন খারাপ থাকবে, যখন তুমি ক্লান্ত থাকবে, যখন ভেঙে পড়বে, দ্বিধায় ভুগবে, তখনো কি তোমার স্বপ্ন এটাই হবে?
মার্চের এক কুয়াশাভরা দিনে আমার জীবনটা বদলে গিয়েছিল। তোমরা হয়তো ভিডিওটা দেখেছ, বা তোমাদের জোর করে দেখানো হয়েছে। যদি না দেখে থাকো তাহলে বলি। ফেরেল উইলিয়ামসকে নিজের একটা গান শুনিয়েছিলাম। তিনি গানটা পছন্দ করেছিলেন। তাঁর মুখভঙ্গিই ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে যায়। ব্যস, রাতারাতি আমিও বিখ্যাত হয়ে যাই।
মানুষ ভিডিওতে শুধু ওই গানটুকুই দেখেছে, পেছনের কঠোর পরিশ্রমটা দেখেনি। দেখেনি কতবার আমি গান ছেড়ে দিতে চেয়েছি। কত কত গান মুখ থুবড়ে পড়েছে, কত অনুষ্ঠান খারাপ গেছে, কিছুই তাঁদের জানা নেই।
রেডিও সিটি মিউজিক হলের মঞ্চে (নিউইয়র্কের সবচেয়ে বিখ্যাত বিনোদন মঞ্চ) দাঁড়ানোর বড় বিশেষত্ব কি জানো? মঞ্চে দাঁড়ানোর পর স্পটলাইটটা যখন গায়ে পড়ে, অন্ধকার হয়ে যায় পুরো মিলনায়তন, তখন কেবল পেছনের ‘এক্সিট’ লেখা বাতিগুলোই চোখে পড়ে। পেছনে তাকিয়ে দেখো। শেষবার যখন গুনেছিলাম, যত দূর মনে পড়ে ৪৭টা ‘এক্সিট’ চিহ্ন ছিল।
আমি এমন কোনো শিল্পী দেখিনি, যাঁরা কোনো না কোনো পর্যায়ে সব ছেড়েছুড়ে দিতে চাননি। তুমি এখানে এসেছ, কারণ তুমি দারুণ কিছু করতে চাও। শিল্প কোনো খেলা নয়, এটা একটা চর্চা। শিল্পের প্রতি আর নিজের প্রতি আস্থাই বারবার তোমাকে বাঁচাবে। বিশ্বাস করো, যতবার আমি এই স্পটলাইটের নিচে দাঁড়াই, ততবার নিজের চেয়ে বড় কিছু দেখতে পাই।
এই মঞ্চ, এই ভবনের একটা ইতিহাস আছে। শেষবার এই মঞ্চে গেয়েছিল স্লাই অ্যান্ড দ্য ফ্যামিলি স্টোন, এখানেই ভেঙে গেছে তাঁদের ব্যান্ড। ব্রিটনি (স্পিয়ার্স), ম্যাডোনা আর ক্রিস্টিনা (অ্যাগুইলেরা) এই মঞ্চে একসঙ্গে গেয়েছেন। এই মঞ্চেই আমি প্রথম ‘আলাস্কা’ গেয়েছিলাম। ডেভিড বোয়ি, বিয়ন্সে, বহু বিখ্যাতজন এই স্পটলাইটের নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন। আজ তোমরাও সেই ইতিহাসের অংশ।
৯ বছর আগে যখন তোমাদের আসনে বসে ছিলাম, মনে আছে আসন্ন পরিবর্তনের দিকে তাকিয়ে আমার ভয় হচ্ছিল। ভাবছিলাম, যদি জনপ্রিয়তা পেয়ে বসে, আমি কি সেই একই ম্যাগি থাকব? হ্যাঁ, বদলে তো গেছিই। যত নতুন নতুন সৃষ্টি করবে, তত বদলে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই তো হওয়ার কথা। এই যাত্রায় শুধু নিজের কাছে সৎ থেকো।
৯ বছর আগের আমির সঙ্গে আজ দেখা হলে বলতাম, তোমার কাজ হলো শুধু হৃদয়-মন দিয়ে আশপাশটাকে অনুভব করা। বলতাম, তোমার শ্রোতাদের দেখে রেখো, বন্ধুর মতোই। বেশি করে পানি খেয়ো, সানস্ক্রিন মাখতে ভুলো না। শিল্পের মূলনীতিটা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিতাম—মুখে না বলে দেখিয়ে দাও। সংখ্যায় কিছু যায় আসে না। দিন শেষে তোমার গান শুনে লোকে কী অনুভব করছে, সেটাই বড়।
আজ যখন অনুষ্ঠান শেষ হবে, পেছনের ওই এক্সিটগুলোর যেকোনো একটা দিয়েই তুমি বেরোবে। কিন্তু ভুলো না, বেরোনোর দরজাগুলো কিন্তু নতুন কোনো জগতে ঢোকার রাস্তাও হতে পারে। এখন শুধু এ মুহূর্তগুলোকে জড়িয়ে ধরো। কারণ, যখন একবার বেরিয়ে যাবে, যে কথাগুলো বলতে চেয়েছিলে, সেগুলো না বলাই থাকবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত