‘লকডাউন’ যেন শ্রীমঙ্গলের চাকরি হারানো নাইমুলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে

নিজের দোকানের সামনে নাইমুল ইসলামছবি: লেখক

করোনা আতঙ্কে অনেকেই যখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরছিলেন, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নাইমুল ইসলামকেও তখন ঢাকা ছাড়তে হয়েছিল। কারণ, সব বন্ধ। চাকরি নেই, যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেটাও পুরো খালি। পাড়া–মহল্লা জনশূন্য। রেস্তোরাঁয় পাচকের কাজ করে জমানো ২০ হাজার টাকা ছিল একমাত্র সম্বল। সেই টাকা নিয়ে বেকার অবস্থায় ফিরে এলেন নিজ এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। এক মাস, দুই মাস করে বেকার অবস্থায় কাটিয়ে দিলেন চারটি মাস। জমানো টাকাও শেষ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়েদেয়ে দিন পার করাটা কষ্টকর হয়ে পড়ল। তখন মায়ের সম্মতি নিয়ে সবজি বিক্রি শুরু করেন। তাতেও কুলাচ্ছিল না। অতঃপর বাবার পরামর্শে নিজের জানা হাতের কাজকে পুঁজি করেই বাবার দোকানের একপাশে খুলে বসলেন চায়ের দোকান। নাম দিলেন ‘লকডাউন টি স্টল’। লকডাউনের সময় শুরু হয়েছিল বলে এমন নাম। এই নাম পাল্টে পরে হয় ‘লকডাউন টি অ্যান্ড কফি’ আর বর্তমান নাম ‘ক্যাফে লকডাউন টি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড’। ট্রেড লাইসেন্সেও এই নামই আছে।

আরও পড়ুন
নাইমুল ইসলামের ‘ক্যাফে লকডাউন টি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড’
ছবি: লেখক

প্রথম দিন ১৭০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। রং চা, দুধ চা দিয়ে শুরু হলেও আস্তে আস্তে যুক্ত হয় জুস ও ফাস্ট ফুড। ফাস্ট ফুডের মধ্যে লকডাউনের স্পেশাল চাওমিন আর চটপটির স্বাদ মানুষের জিবে লেগে যায়। চায়ের মধ্যে মালাই চা আর পানীয়ের মধ্যে লেবু ও পুদিনা পাতার শরবত। একই স্বাদ ধরে রাখতে পারায় নাইমুল ইসলামকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিক্রির টাকার অঙ্কটা ১৭০ থেকে বাড়তে বাড়তে ৩০০, ৪০০, ৫০০ হয়ে এখন দৈনিক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। শুক্রবার বিক্রির হিসাবটা প্রায় ১০ হাজারে পৌঁছে যায়। এর মধ্যে খরচের পরিমাণটাও অবশ্য বেড়েছে।

বাবার দোকানের পাশে ছোট্ট একটু জায়গা নিয়ে শুরু করলেও এখন ভাড়া নিতে হয়েছে নতুন জায়গা। শুরুর দিকে নিজে সবকিছু করলেও এখন দুজন কর্মচারী রাখতে হয়েছে। দোকানে একে একে যোগ হয়েছে চেয়ার, সোফা, শোকেস, মাইক্রোওভেন, তিনটি ফ্রিজ, বড় বার্নার-ছোট বার্নার মিলিয়ে তিনটি চুলা। প্রথমে ৫০০ টাকার মালামালও ছিল না। এখন দোকানে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মালামাল। এগুলোকে নিজের এত দিনের ব্যবসার সম্পদ মনে করেন নাইমুল ইসলাম।

নাইমুল ইসলাম সবার কাছে সুমন নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও কক্সবাজারে রেস্টুরেন্টে চাকরি করেছেন। সেই সুবাদে নিজেই হয়ে উঠেছেন একজন ভালো পাচক। সে জন্য খাবারের স্বাদ দিয়েই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে আজ সফল বলা যায়। শ্রীমঙ্গলের রামনগর মণিপুরি পাড়ার ‘ক্যাফে লকডাউন টি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড’ এখন মৌলভীবাজার জেলাজুড়েই পরিচিত। কোভিডের ‘লকডাউন’ যেন নাইমুলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।