স্কুলপড়ুয়া তানজীমের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে জার্নালে
তানজীম রেদওয়ান পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। ঢাকার বিএএফ শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম কলেজে। ১৪ বছর বয়সী এই কিশোরের একটা গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ডিসকভার সাসটেইনেবিলিটি জার্নালের ‘কিউ টু’ বিভাগে। গবেষণার শিরোনাম ‘অ্যানালাইজিং দ্য সোশিওইকোনমিক ফ্যাক্টরস অব অ্যাডলেসেন্ট ম্যালনিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ ইউজিং বেস্ট ওয়র্স্ট মেথড।’ অর্থাৎ কিশোর–কিশোরীদের অপুষ্টিতে ভোগার সামাজিক–অর্থনৈতিক কারণ ও তার বিশ্লেষণ।
বাবাকে একটি পেশাদার স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের অধীনে গবেষণা করতে দেখেই মূলত আগ্রহ জেগেছিল তানজীমের। কিন্তু পুষ্টিসংক্রান্ত বিষয় বেছে নেওয়া কেন? ‘মা-বাবা প্রায়ই বলতেন, ঠিকমতো খাও। না হলে অপুষ্টিতে ভুগবে। অন্যদিকে ছোটবেলা থেকেই জীববিজ্ঞানে আমার উৎসাহ বেশি। দুটো মিলিয়ে এ বিষয়ে কাজ করার কথা মাথায় আসে।’
পুষ্টি বা অপুষ্টি নিয়ে কোথায় কী গবেষণা হয়েছে—শুরুতে বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে তানজীম। এই কাজটা করতে গিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মো. আব্দুস সবুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এই শিক্ষক নিজেও গবেষণা–অন্তঃপ্রাণ। স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরের প্রবল আগ্রহ দেখে তিনিই গবেষণার খুঁটিনাটি হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন। গবেষণাপত্রের সহলেখকও ছিলেন তিনি।
গবেষণার কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের (আইএনএফএস) শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। সেখানেই প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে তানজীম। এ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আইএনএফএসের অধ্যাপক রুহুল আমিনের প্রতি সে কৃতজ্ঞ।
কাজটি করতে গিয়ে তানজীমের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বয়স। ‘গবেষণার বয়স হয়নি’, ‘তুমি কি সত্যিই সিরিয়াস?’—এমন সব কথা তার কানে এসেছে। তবে সে থেমে যায়নি। এমনকি আইএনএফএস তাকে আরও গবেষণা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
তানজীমের কাজ সরাসরি তত্ত্বাবধানের অভিজ্ঞতা থেকে প্রভাষক মো. আব্দুস সবুর বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে দেখেছি, অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থীরাও কাজে ফাঁকি দেয়। কাজ দিলে ঠিকঠাক করে না। অথচ এ বয়সেই গবেষণার প্রতি তানজীমের প্রবল আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছি। কোনো নতুন দক্ষতা রপ্ত করার ব্যাপারেও সে বেশ ভালো। তাড়াতাড়ি শিখে ফেলতে পারে। গবেষণাটি যে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, সেটার মানও বেশ ভালো।’
তানজীমের অনেক বন্ধু নাকি এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, তার একটা গবেষণাপত্র আছে। তবে যারা বিষয়টি বুঝেছে, তারা ঠিকই অভিনন্দন জানিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ই–মেইল দিয়ে সাহায্য করেছে। অধ্যক্ষের শুভকামনাও তার সঙ্গে ছিল।
স্কুলপড়ুয়া আরও শিশু-কিশোরদের গবেষণায় আগ্রহী করতে ‘প্রজেক্ট কিউ টু’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে তানজীম রেদওয়ান। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে চায় সে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘প্রথমে নিজের আগ্রহের বিষয়ে যথেষ্ট শিক্ষিত হতে চাই। এরপর জীববিজ্ঞান–সংশ্লিষ্ট গবেষণাধর্মী ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার ইচ্ছে আছে। এককথায় বললে গবেষণা খাতে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’
তানজীম জানাল, সম্প্রতি হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মাইক্রোবায়োলজি সোসাইটির ‘জুনিয়র ফেলো প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ সে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্লোবাল হেলথ লিডারস কনফারেন্স ২০২৫’–এ যোগ দেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে তার কাছে।