আরিয়ানের ব্যান্ডে একজনই সদস্য

আরিয়ান চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

এ লেভেলে পড়া আরিয়ান চৌধুরীর প্রিয় শিল্পীর তালিকাটা আগে শুনে নেওয়া যাক। প্রীতম হাসান, তাহসান, বেজবাবা সুমন...।

আর প্রিয় ব্যান্ড? আরিয়ান বলছিল, ‘অর্থহীন, শিরোনামহীন, আর্টসেল, ওয়ারফেজ, আব্বুর ব্যান্ড...’

আব্বুর ব্যান্ড! এই ব্যান্ডের নাম তো আগে শুনিনি।

আমাদের যে ভ্রু কুঁচকে গেছে, ফোনের ওপাশ থেকে আরিয়ানের সেটা টের পাওয়ার কথা নয়। সে বলে চলে, ‘আমার বাবার একটা ব্যান্ড আছে। নাম সাস্টেইন। আমার বাবা আলমগীর চৌধুরী এই ব্যান্ডে বেজ গিটার বাজান। বাবা আর তাঁর বন্ধুরা প্র্যাকটিস করতেন। তাঁদের সঙ্গে থেকে থেকেই তো আমার গানের সঙ্গে প্রেম।’

ও এই তাহলে ব্যাপার।

আরও পড়ুন

ফেসবুক আর ইউটিউব স্ক্রল করে করে যাঁদের গান শোনার অভ্যাস আছে, আরিয়ান চৌধুরী নামটা তাঁদের কাছে অপরিচিত হওয়ার কথা নয়। আরিয়ান একাই একটা ব্যান্ড। ইলেকট্রিক গিটার, বেজ গিটার, কি–বোর্ড, সব সে একাই বাজায়। কণ্ঠও দেয় নিজে। সব কটি আলাদা আলাদা ধারণ করে কম্পিউটারে মাধ্যমে গান তৈরি করে। বিভিন্ন শ্রোতাপ্রিয় গানের কভারই মূলত তাকে পরিচিতি দিয়েছে।

ফেসবুক পেজের নাম ‘আরিয়ান’। সেখানে তার অনুসারীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে। ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাও প্রায় ৯৫ হাজার। বোঝা যায়, অনেকেই শোনেন আরিয়ানের গান।

করোনাকালের ঘরবন্দী সময়টাতে তারকা হয়ে উঠে সে। একসময় নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টায় নিয়ম করে একটা ইংরেজি গান গেয়ে আপলোড করত। এভাবে চলেছে বছরখানেক। সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা তখন এক হাজারের কাছাকাছি। এরপর ২০২১ সালে হুট করেই শূন্য ব্যান্ডের ‘বেহুলা’ গানটার কভার আপলোড করে। সাবস্ক্রাইবার বেড়ে রাতারাতি পাঁচ হাজার হয়ে যায়। আরিয়ান তো অবাক! হঠাৎ অনেক নতুন শ্রোতা পাওয়ার সুযোগটাই কাজে লাগায়। একের পর এক আপলোড করতে থাকে বাংলা গানের কভার। জুটতে থাকে প্রশংসা।

ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা ইংরেজি গানের ভক্ত আরিয়ানের বাংলা উচ্চারণ অত ভালো নয়। নিজের এই ঘাটতি তিনি নিজেই বুঝতে পারে। নতুন নতুন গানের চর্চা করে তাই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। সামনে আর কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল? আরিয়ান বলে, ‘আর কিছুতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ, ইংরেজি গানের তুলনায় বাংলা গানের কম্পোজিশন সহজ।’ তবে হ্যাঁ, আরও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা হলো, মা আর বন্ধুদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করা। শুরুতে অনেকেই বলেছেন, তোমাকে দিয়ে হবে না, এগুলো বাদ দাও। কিন্তু আরিয়ান চেষ্টা চালিয়ে গেছে।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কখনোই কিন্তু গান শেখেনি আরিয়ান। গাইতে গাইতে গায়েন। তবে শিক্ষকের নাম যদি বলতেই হয়, ‘তিনি’ আর কেউ নন, ইউটিউব। আরিয়ান বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই গিটার বাজাতে পারতাম। বাবাকে দেখে শেখা। করোনার সময় ইউটিউব দেখে দেখে বেশ কয়েকটা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেছি। আসলে যার হাতের মুঠোয় ইউটিউব আছে, তার আর কোনো শিক্ষকের দরকার হয় না। ইচ্ছা থাকলে ইউটিউব দেখে সব শেখা সম্ভব।’

তারকাখ্যাতি উপভোগ করছেন কি না, জানতে চাইলে বলে, ‘না, আমি তো কলেজে যাই আর বাসায় আসি। বাসায়ই থাকি। এর বাইরে বের হই না তেমন। বন্ধুও দু–একজন। ওদের সঙ্গে কলেজেই দেখা হয়। নিজের মতো থাকি। গান গাই। আমার আসলে আড্ডা, হইচই, এসব ভালো লাগে না।’

চট্টগ্রামের ছেলে আরিয়ান সামনে এ লেভেল পরীক্ষা দেবেন। ও লেভেলে বিজ্ঞান নিয়ে তার ‘শিক্ষা’ হয়ে গেছে। তাই এ লেভেলে বাণিজ্য নিয়ে পড়ছে সে। ভবিষ্যতে পড়ালেখার বিষয় যা-ই হোক, গান ছাড়বে না, এ কথা জোর দিয়েই বলল।