রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে এসব তথ্য জানতেন কি?

৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কাটিয়েছেন তিনি বর্ণাঢ্য জীবন। রাজপরিবারে ঘটেছে কত না কাহিনি! রটেছে নানান খবর। সব মিলিয়ে এখানে থাকছে রানির জীবনের চমকপ্রদ কিছু তথ্য।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২)
ফাইল ছবি: এএফপি
  • কদিন আগেই রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহনের ৭০ বছর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাকিংহাম প্যালেস। অথচ এলিজাবেথের কখনোই রানি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, তাঁর বাবারও রাজা হওয়ার কথা ছিল না। রাজপরিবারের নিয়মের কারণেই অনেকটা লটারি জেতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট (ডিউক অব ইয়র্ক)। রাজা পঞ্চম জর্জের ছোট ছেলে হওয়ায় সিংহাসনে বসার সুযোগ তাঁর ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চম জর্জের বড় ছেলে অষ্টম এডওয়ার্ডের রাজা হওয়ার কথা। কিন্তু অষ্টম এওয়ার্ড বিয়ে করেছিলেন এক ডিভোর্সি নারীকে। যে কারণে তাঁর রাজা হওয়ার সুযোগ আর ছিল না। ঠিক সে সময়ে ভাগ্য খুলে যায় প্রিন্স অ্যালবার্টের, ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহন করেন তিনি। এরপর হিসাব অনুযায়ী অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর বড় মেয়ে হিসেবে ১৯৫২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

  • ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে এ যাবত সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা ব্যক্তি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মাত্র এক বছর বয়সে, ১৯২৭ সালে, এলিজাবেথের ছবি ছাপা হয় ভোগ ম্যাগাজিনে। তিন বছর বয়সে মা ডাচেস অব ইয়র্কের সঙ্গে রানির ছবি ছাপা হয় বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। যে ছবি খুব দ্রুত সারা বিশ্বে ছোট্ট এলিজাবেথকে তারকা করে তুলেছিল। ছবিটি তুলেছিলেন রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির বিখ্যাত আলোকচিত্রী মার্কাস অ্যাডামস।

  • রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আরও একটি পারিবারিক নাম ছিল। নামটি তাঁর কাছে ছিল বিশেষ কিছু। সেটা অবশ্য কখনো কারো সামনে বিশেষভাবে উল্লেখ করেননি। তবে নানা সময়ে সেটা প্রকাশ পেয়েছে। রানি যখন নিজের নাম উচ্চারণ করতে পারতেন না, তখন তাঁকে মা-বাবা আদর করে ডাকতেন লিলিবেট। রয়্যাল ভাষ্যকার ও সাংবাদিক ডেইজি ম্যাকান্দ্রো এক সফরে এ নাম প্রকাশ্যে আনেন।

রানির আরেক নাম ছিল লিলিবেট
ছবি : রয়টার্স
  • তবে নামটি যে রানির খুব প্রিয়, সেটা আরও জোরালো হয় গত বছর এপ্রিলে তাঁর স্বামী প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর পর। ফিলিপের কফিনে রানি তাঁর হাতে লেখা একটি নোট রাখেন, যার নিচের দিকে তিনি সই করেন লিলিবেট নামে। ২০১২ সালে সেলি বেডেল স্মিথের লেখা রানির জীবনীভিত্তিক বইয়েও নামটির উল্লেখ আছে। সেই ভালোবাসার পারিবারিক নামটি এখনো রাজপরিবারে থেকে যাবে নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে। কীভাবে? এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম গত বছরের চার জুন। দাদি ও মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই হ্যারি তাঁর নতুন সন্তানের নাম রেখেছেন লিলিবেট ডায়ানা!

  • প্রিন্স ফিলিপ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয় ১৯৩৯ সালে। সে সময় এলিজাবেথ ছিলেন ১৩ বছরের কিশোরী। ১৮ বছরের প্রিন্স ফিলিপ তখন ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজের ক্যাডেট। গ্রিসের ক্ষমতাচ্যুত রাজার ভাইপো প্রিন্স ফিলিপের প্রেমে এলিজাবেথই প্রথম মজেছিলেন বলে জানা যায়। অবশ্য বিয়ের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। মাঝে বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দুজনের মধ্যে চলছিল চিঠি বিনিময়। ফিলিপ সে সময় রয়্যাল নেভিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর নীল চোখ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন এলিজাবেথ।

প্রিন্স ফিলিপ ভালোবেসে রানি ‘সসেজ’ নামেও ডাকতেন
ছবি: সংগৃহীত
  • বিয়ের পর আর দশটা দম্পতির মতো তরুণ এলিজাবেথ ও ফিলিপের মধ্যেও মানোমালিন্য হয়েছিল বলে নানা সময়ে খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে এলিজাবেথ রানির দায়িত্ব গ্রহণের পর। তবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল খুনসুটিরও। রানি এলিজাবেথকে প্রিন্স ফিলিপ ভালোবেসে কখনো ডাকতেন ‘সসেজ’। আবার কখনো শুধুই ‘ডার্লিং’ বলতেন। রানি যখন দায়িত্ব নিয়ে দেশ-বিদেশ ছুটছিলেন, ফিলিপ তখন দুহাতে সামলেছেন সন্তান ও পরিবার আর দশটা বিষয়আশয়।

বিবিসি, ব্রিটিশ ভোগ, ইয়াহু, হ্যালো, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য লিটল প্রিন্সেস অবলম্বনে হাসান ইমাম