ভাইরাল গাণিতিক সমস্যাটি কি সমাধান করতে পারবেন?

টিকটক ও ফেসবুকে প্রায়ই কিছু গাণিতিক সমস্যা ভাইরাল হতে দেখা যায়। তাতে হয়তো লেখা থাকে, ‘এই অঙ্ক মেলাতে পারবেন শুধু জিনিয়াসরাই।’ তারপর এক লাইনে থাকে কিছু সংখ্যা, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগচিহ্ন। অনেকে দেখেই ভয়ে স্ক্রল করে চলে যান। ভাবেন, ‘বাবা রে! এ আমার কম্ম নয়!’ অনেকে কাগজ-কলম নিয়ে কিংবা মনে মনে অঙ্ক কষে কমেন্টে উত্তর দেন। উত্তর পোস্ট করার পর দেখেন, একেকজন একেক উত্তর দিচ্ছেন। অন্যদের উত্তরের সঙ্গে নিজের উত্তর মিলছে না। তখন আসে চিন্তা, ‘অঙ্কটা করতে কি ভুল করলাম? সঠিক উত্তর আসলে কোনটা?’

গাণিতিক সমস্যাটি কী

অঙ্কটি মেলাতে পারবেন?
ছবি: প্রথম আলো

যত গর্জে তত বর্ষে না

পঞ্চম শ্রেণির সরল অঙ্কের নিয়ম মনে আছে তো? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। সমস্যাটি সরল অঙ্কের সূত্র দিয়েই সমাধান করতে হবে। কিন্তু শুরুটা করবেন কীভাবে? আগে যোগ, নাকি অন্য কিছু?

সরল অঙ্কের ক্রমটি আবার মনে করিয়ে দিই—BODMAS। এখানে, B = ব্র্যাকেট (বন্ধনী), O = অর্ডার, D = ডিভিশন (ভাগ), M = মাল্টিপ্লিকেশন (গুণ), A = অ্যাডিশন (যোগ), S = সাবট্রাকশন (বিয়োগ)।

সরল অঙ্কে এই ক্রম মেনে সবার আগে সমাধান করতে হবে ব্র্যাকেট অর্থাৎ বন্ধনীর ভেতরের অংশ। বন্ধনী তিন ধরনের—প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। প্রথম বন্ধনীর ভেতরের অংশ সবার আগে সমাধান করতে হয়। তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বন্ধনীর ভেতরের অংশ।

সূত্রটি যেভাবে প্রয়োগ করা হয়

সমাধানের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্র্যাকেটের পরই আসে অর্ডার। যেমন ঘাত (Power), বর্গমূল (Root) ইত্যাদি। এরপর আসে সাধারণ যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের পালা।

BODMAS সূত্র অনুসারে ডিভিশন ও মাল্টিপ্লিকেশন, অর্থাৎ ভাগ ও গুণ করতে হয় যোগ-বিয়োগের আগে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সমাধানের ক্ষেত্রে ভাগ ও গুণ সমান অগ্রাধিকার পায়। আবার যোগ ও বিয়োগের অগ্রাধিকারও পরস্পরের সমান।

ধরা যাক, কোনো একটি সমস্যায় গুণ আর ভাগ পাশাপাশি আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি গুণ আগে করব, নাকি ভাগ? এই একই প্রশ্ন যোগ আর বিয়োগের ক্ষেত্রেও আসে।

এই প্রশ্নের উত্তর হলো, সমাধানের ক্রম হবে বাঁ থেকে ডানে। অর্থাৎ বাঁ থেকে সমাধান শুরু করলে গুণ আর ভাগের মধ্যে যেটি আগে থাকবে, সেটিকেই আগে করতে হবে। যোগ ও বিয়োগের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।

আরও পড়ুন

সমস্যাটি সমাধান করব কীভাবে

ভাইরাল সমস্যাটিতে কোনো ব্র্যাকেট নেই, কোনো অর্ডারও নেই। তাই এই দুটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। আমাদের জন্য রইল শুধু যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ। আগেই বলেছি, সমাধানের ক্রম হবে বাঁ থেকে ডানে। বাঁ থেকে শুরু করলে প্রথমেই আছে গুণ চিহ্ন। তাই গুণের কাজটিই প্রথমে করতে হবে।

৪ x ৪ = ১৬, সুতরাং দ্বিতীয় পর্যায়টি দাঁড়াবে—১৬ – ৪ ÷ ৪ + ৪।

সূত্র অনুসারে এবার করতে হবে ভাগের কাজ। তাহলে চিত্রটা দাঁড়াবে এ রকম—৪ ÷ ৪ = ১, অর্থাৎ ১৬ – ১ + ৪।

এবার বাকি রইল শুধু যোগ আর বিয়োগ। কোনটা আগে করব? আগেই বলেছি, সমাধানের ক্রম হবে বাঁ থেকে ডানে। বাঁ থেকে শুরু করলে বিয়োগ চিহ্নটিই আগে পড়ে। তাই বিয়োগের কাজ আগে করতে হবে। তাতে দাঁড়াবে—১৬ - ১ = ১৫। অর্থাৎ ১৫ + ৪।

এখন বাকি রইল শুধুই যোগ—১৫ + ৪ = ১৯।

সুতরাং, সমস্যাটির ফল ১৯।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কানেটিকাটের অধ্যাপক আলভারো লোজানো রোভেল্ডো তাঁর ইউটিউব ও টিকটক চ্যানেলে এ রকম সমস্যা এবং সমাধানের ধাপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন

ভুলটা হয় কোথায়

চর্চা না থাকলে অঙ্কে ভুল হবেই
ছবি: পেক্সেলস

চর্চা না থাকলে অঙ্কে ভুল হবেই। স্কুল-কলেজের পর অনেকেই সরল অঙ্ক আর করেন না। তাই যোগ আগে না বিয়োগ আগে, গুণ আগে না ভাগ আগে—এসব প্রশ্নের উত্তর মনে করতে না পেরে ভুল করে বসেন।

আবার অনেকে হয়তো BODMAS ক্রমটি ঠিকই মনে রাখেন; কিন্তু যেসব চিহ্নের একই অগ্রাধিকার আছে, সেসব ক্ষেত্রে যে সবচেয়ে বাঁয়ের চিহ্নটির কাজই আগে করতে হয়, এটি তাঁরা ভুলে যান।

যেমন ৪ x ৪ – ৪ ÷ ৪ + ৪ সমস্যাটি সমাধান করতে গিয়ে BODMAS ক্রমটি মনে করে অনেকে ভাগের কাজটি আগে করবেন, তারপর করবেন গুণ। ব্যাপারটি দাঁড়াতে পারে এ রকম—
৪ x ৪ – ১ + ৪

১৬ – ১ + ৪

এই অঙ্কের ক্ষেত্রে গুণের আগে ভাগ করলেও ফলাফলের কোনো তারতম্য হবে না। কিন্তু গোলমাল বাধবে এর পরের ধাপে।

১৬ – ১ + ৪—এই ধাপে এসে অনেকেই দ্বিধায় পড়বেন। ভাববেন,  BODMAS–এ তো অ্যাডিশন (A), সাবট্রাকশনের (S) আগে। তাই যোগই বোধ হয় আগে করতে হবে।

সরল অঙ্কের যোগ আর বিয়োগ চিহ্নের অগ্রাধিকার যে সমান এবং এ ক্ষেত্রে বাঁ দিক থেকে যেটি আগে আসবে, সেটির কাজ যে আগে করতে হবে, এই কথা অনেকেই ভুলে যান। তাই তাঁরা যোগ আগে করেন এবং পরবর্তী ধাপে লেখেন—১৬ - ৫ = ১১, যা আদতে ভুল উত্তর।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন