চারবারের চেষ্টায় চিভনিং বৃত্তি পেয়েছেন, যুক্তরাজ্যে পড়ছেন তিনি
বৃত্তি নিয়ে যাঁরা ভিনদেশে পড়তে যান, তাঁদের অনেকেরই একটা নিজস্ব সংগ্রামের গল্প থাকে, যে গল্প হয়তো অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এমনই একজনের কথা শুনেছেন ফুয়াদ পাবলো
মিজানুর রহমানের জন্ম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মাদারগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল প্রবল। সেই ভালোবাসাই তাঁকে কৃষি ও জীববিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। একসময় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে ভর্তি হন। ঢাকার কংক্রিটের জঙ্গলে এসে ক্যাম্পাসের গ্রামীণ পরিবেশ দেখে ভালো লেগে যায়, তাই অন্য কোথাও ভর্তির কথা ভাবেননি। এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শুধু ক্লাস আর পরীক্ষায় সীমাবদ্ধ ছিল না। বিতর্ক, কুইজ প্রতিযোগিতা, খেলাধুলাসহ নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় নটর ডেম কলেজ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তুরস্কে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার পর কর্মজীবন শুরু হয় একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে, সহসম্পাদক হিসেবে। পরে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন নন-ক্যাডার হিসেবে তুলা উন্নয়ন বোর্ডে যোগ দেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, শুধু চাকরিই যথেষ্ট নয়, আরও গভীরভাবে গবেষণা করতে হবে, আরও নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে। তিনি উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশে তুলা উৎপাদনের আধুনিকায়ন, কৃষকের সমস্যা সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং উদ্ভাবনী কৃষিনীতি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন।
ব্রিটিশ সরকারের চিভনিং স্কলারশিপের কথা শোনার পর আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন মিজান। তবে এটি বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি, হাজারো প্রার্থী আবেদন করেন। পরপর তিনবার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যানের ই–মেইল পান তিনি। সাধারণত এই পর্যায়ে এসে অনেকে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু মিজান তা করেননি। নিজের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে, নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন তিনি। চতুর্থবার আবেদনের পর আসে সাফল্য।
ব্রিটিশ সরকারের চিভনিং বৃত্তিসহ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড থেকে মলিকুলার বায়োলজি ও বায়োটেকনোলজিতে মাস্টার্স করার সুযোগ পান মিজানুর রহমান। শেফিল্ড বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বায়োমেডিকেল সায়েন্সে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এখানে গবেষণার সুযোগ পেয়ে তিনি মূলত জৈবপ্রযুক্তি, সিন্থেটিক বায়োলজি ও সিস্টেম বায়োলজি নিয়ে কাজ করছেন। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর উপায়, তুলা ফসলের নতুন জাত উন্নয়ন এবং জিনপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিপণ্যের মানোন্নয়নের ওপর গবেষণা করছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘চিভনিং কর্তৃপক্ষ শুধু ভালো সিজিপিএ বা পরীক্ষার স্কোর দেখেন না। তাঁরা দেখেন নেতৃত্বগুণ, সমাজে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। যাঁরা সরকারি চাকরি বা করপোরেট খাতে কাজ করছেন এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চান, আমি তাঁদের বলব, ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে হবে।’