ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ (ইউআরসি) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোবোটিকসের বড় প্রতিযোগিতাগুলোর একটি। যেখানে সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা একত্র হন। সঙ্গে থাকে তাঁদের তৈরি বিশেষ রোবট যান—যা মঙ্গল গ্রহে বিচরণ করতে সক্ষম। কোন রোবট মঙ্গলের অনুরূপ পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে, নভোচারীদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে পারবে, জরুরি সময়ে কারও নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, প্রাণের সন্ধান পেতে সাহায্য করতে পারবে, প্রতিযোগিতায় এসব পরখ করে দেখেন বিচারকেরা। প্রিলিমিনারি ও মূল পর্ব—দুই ভাগে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রিলিমিনারি পর্বে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছেন না মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থীরা। তহবিলের অভাবে আগেও তাঁদের একাধিকবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জে যত কাণ্ড
২০১৪ সালে প্রথমবার ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জে অংশ নেন এমআইএসটির শিক্ষার্থীরা। সেবার ভালো কিছু না হলেও ২০২১ সালেই চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। যদিও করোনার কারণে সে বছর প্রতিযোগিতা হয়েছিল অনলাইনে। ২০২২ সালের প্রিলিমিনারি পর্বে আসে সর্বোচ্চ নম্বর। তখন থেকেই তহবিল–সংকটের শুরু। এমআইএসটি মঙ্গলবার্তার সেবার আর মূল পর্বে যাওয়া হয়নি। আর এবার? এবারও ৯০–এর বেশি নম্বর নিয়ে ১ নম্বর অবস্থানে আছেন তাঁরা। তহবিলের অভাবে এবারও কি ভেস্তে যাবে সব পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, পরিশ্রম?
রোভার চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়া দলটির নাম এমআইএসটি মঙ্গলবার্তা। দলে শিক্ষার্থী আছেন ৩৫ জন। একেকজন প্রকৌশলের একেক শাখায় পড়েন। তবে মূল প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সুযোগ হলে অংশ নেবেন সাতজন—কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের জাওয়াদুর রহমান (দলনেতা), রাশিদ উল ইসলাম, আবরার ফাইয়াজ খান, যন্ত্রকৌশল বিভাগের আল-আমিন রশিদ (সহ-দলনেতা), আহমেদ আহনাফ ও ফয়সাল হোসেন। পরামর্শক হিসেবে আছেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক শাহ মো. আহসান সিদ্দিক।
প্রস্তুত মার্স রোভার—ফিনিক্স ৪.০
২৯ মে থেকে ১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের হ্যাঙ্কসভিলে অবস্থিত নাসার মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে প্রতিযোগিতাটি হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে এমআইএসটির মার্স রোভার—ফিনিক্স ৪.০। এবার রোভারটির চলাচলের পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। জিপিএসের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারবে, মার্কার শনাক্ত করতে পারবে। একই সঙ্গে মাটি পরীক্ষা, মাটিতে পাওয়া পাথরের ধরন নির্ণয়েও সক্ষম ফিনিক্স ৪.০। রোভারটি যেন যেকোনো দিকে চলাচল করতে পারে, সে জন্য চাকাগুলোকে পরিবর্তন করে নতুন স্টিয়ারিং পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। আর দূরের জিনিস দেখার জন্য যুক্ত করা হয়েছে উন্নত সংস্করণের ভিডিও ক্যামেরা। দলনেতা জাওয়াদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পটি মূলত ধারাবাহিক উন্নয়নভিত্তিক। প্রতিবছর খুব যে বেশি পরিবর্তন করা হয়, এমন নয়। তবে আগের চেয়ে আরও উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। চাকার ডিজাইন, স্টিয়ারিং মেকানিজম, আর্ম, মূল বডি স্ট্রাকচার ইত্যাদিতে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে।’
কত টাকা প্রয়োজন
২০২২ সালে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রোবট ফিনিক্স ২.০ বানিয়েছিল এমআইএসটি মঙ্গলবার্তা। এবার ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বানিয়েছে উন্নত প্রযুক্তির রোবট ফিনিক্স ৪.০। এরই মধ্যে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে পেয়েছে সর্বোচ্চ নম্বর। এবারও কি তহবিলের অভাবে মূল প্রতিযোগিতায় যাওয়া হবে না! জাওয়াদুর রহমান বলছিলেন, ‘রোবট বানানোর খরচ আমাদের প্রতিষ্ঠান বহন করে। কিন্তু মূল প্রতিযোগিতার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জের ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণ করতে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছি। বাকি টাকার জন্য আমরা স্পনসর খুঁজছি।’ মূল পর্বে যাওয়ার সুযোগ পেলে ভালো কিছু করা সম্ভব, সে কথা দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন জাওয়াদ।