জয়া আহসানের এই দিকটা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না

জয়ার সঙ্গে পার্বতী থিরুভোথু
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বলে রাখি, শুটিংয়ে ডায়েটের অত ধার ধারেন না জয়া আহসান। বলিউডের শুটিংয়ের দিনগুলোয় কী খাননি এই ঢালিউড অভিনেত্রী। আর শুধু কি একা খেয়েছেন; জুটিয়েছিলেন আরেক সই। তিনি পার্বতী থিরুভোথু। এই অভিনেত্রীকে না চিনলে মালয়ালম ছবি ‘চার্লি’, ‘বেঙ্গালোর ডেজ’ দেখে ফেলুন। তিনি তেসা ও সারা চরিত্র দিয়ে তুমুল আলোচনায় এসেছিলেন। এই পার্বতীর সঙ্গেই জোট বেঁধে সমানতালে খেয়েছেন জয়া। আর নিজ হাতে রান্না করে এই খাওয়াকে যেন শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বলিউডের আরেক দাপুটে অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠি। আসুন সেই গল্পই শুনি।

‘কড়ক সিং’ সিনেমার শুটিং দিয়ে প্রথমবার বলিউডে পা রেখেছেন জয়া। শুটিং চলত নিচতলায়। শুটিং শেষ করে বা বিরতি দিলেই সব শিল্পী চলে যেতেন দ্বিতীয় তলায়। সেখানেই পঙ্কজ ত্রিপাঠির রুম। জয়া আহসান ছাড়াও ভিড় জমানোদের তালিকায় ছিলেন পার্বতী থিরুভোথু, বলিউড অভিনেত্রী সানজানা সাঙ্ঘি, পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। তাঁরা সবাই মিলে পঙ্কজ ত্রিপাঠির রুমে শুরু করতেন আড্ডা।

খাওয়ার সঙ্গে চলত আড্ডা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

এই ফাঁকে খাবার পরিবেশনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। আড্ডার ফাঁকে খাওয়াটাই প্রধান হয়ে ওঠে জয়ার কাছে। তত দিনে পঙ্কজ ত্রিপাঠির কল্যাণে বিহারের নানা খাবার চেনা হয়ে গেছে। বিহারের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম লিট্টি–চোখা। বলা যায়, এটা তাদের জাতীয় খাবার। ত্রিপাঠির তৈরি করা খাবারের মধ্যমণি হয়ে থাকত এই লিট্টি-চোখা। খাবার খেতে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হতে থাকে।

কখনো বিহারি লিট্টি, কখনো বিহারি মাটন নিয়ে শুটিং সেটে হাজির হতেন ত্রিপাঠি। মাঝে মাঝে মমও আসত। এসব খাবারের সঙ্গে ত্রিপাঠির বাড়ি থেকে আসা সস যোগ করত ভিন্ন মাত্রা। সবার প্রশ্ন, এসব খাবার কি তিনি নিজেই রান্না করতেন। সবাই জানতেন, এই অভিনেতা হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করেছেন। রান্নার ব্যাপারে ভীষণ শৌখিন। নিয়মিত রান্না করেন। জয়ার কাছ থেকে জানা গেল, একেবারেই ফ্রিজের খাবার খান না পঙ্কজ।

পঙ্কজের বাড়ি থেকে আসত বিশেষ সস
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

এক সময় পার্বতীর সঙ্গে নিজের দারুণ একটা মিল খুঁজে পেলেন জয়া। তাঁরা দুজনই ভোজনরসিক। এভাবেই বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। খাবারের সময় তাঁরা পাশাপাশি বসতেন। দুজন দেখতেন কে কী খাচ্ছেন। জয়া হেসে বলেন, ‘শুটিংয়ে আমি প্রচুর খাই। পার্বতীও খাচ্ছিল। দুজন কথা বলতাম আর খেতাম। দেখা যেত অন্য কিছু খেলেও মিষ্টি সবাই কম ধরত। কিন্তু আমার তো দুটো করে রসগোল্লা লাগবেই। শুটিং হবে আর মিষ্টি থাকবে না, তা হবে না। দোকান থেকে ভালো মিস্টি আনানো হচ্ছে। আমি আর পার্বতী মিষ্টিটা বেশি খেতাম। শুধু মিষ্টি না লিট্টি–চোখাও আমি আর পার্বতী বেশি খেতাম। কী যে একটা অবস্থা! আমরা আর্টিস্ট হয়েও এত খাবার খাচ্ছি—দেখাদেখি সবাই সব খাবার খাওয়া শুরু করে দিল। দেখা যেত হেলদি ফুড থাকত। কিন্তু আমরা কেউই হেলদি ফুডের দিকে যেতাম না। সবাই খেত টেডি খাবার।’

জয়া বলেন, ‘খাবারের সঙ্গে অভিনয়ের একটা যোগসূত্র খুঁজে পেতেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। তিনি খাবারের সময় বলতেন, রান্না আর অভিনয় প্যারালাল। উপাদান কমবেশি হলে গড়বড় হয়ে যায়। অভিনয়ে যদি কমবেশি হয়, তাহলে দর্শকদের পছন্দ হবে না। আবার রান্নায় হলুদ, লবণ, মরিচ—কোনোটা কমবেশি হলে সেই খাবারটাকেও কেউ ভালো বলবে না। এটা আমরাও স্বীকার করি। এসব নিয়ে আমাদের ভালো সময় কাটত। তিনি বাঙালি খাবার খুব পছন্দ করতেন। ইলিশ, বেগুনভাজা। বাংলাদেশের ইলিশ সেখানে পাওয়া যায় না। আমি আবার কখনো বেগুন ভাজি খেলে তাঁকে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতাম। আমাদের বেগুনভাজাটা অন্য রকম। এটা কিন্তু সবাই পারে না। খাবার নিয়ে কত কথা হতো।’  

রান্নার ব্যাপারে ভীষণ শৌখিন পঙ্কজ ত্রিপাঠি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শুটিংয়ে খাবার নিয়ে দারুণ সময় কেটেছে। এক সময় এমন হতো যে অন্যদের মতোই শুটিংয়ের ফাঁকে খাবারের জন্য অস্থির হয়ে থাকতেন জয়া। ভাবতেন, কখন লাঞ্চ ব্রেক হবে। তারপরই খাবার টেবিলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের খাবার দেখে চোখ কপালে উঠত। কারণ, শুটিংয়ে কেউ এসেছিলেন বিহার থেকে, কেউ  গুজরাট, কেউ দিল্লি। যে কারণে খাবার টেবিলে বিভিন্ন প্রদেশের খাবার থাকত। জয়া ছাড়া সবাই কিছু না কিছু নিজস্ব সংস্কৃতির খাবার নিয়ে আসতেন। জয়া বলেন, ‌‘নানা কম্বিনেশনের খাবার দেখে বোঝা যেত খাবারে কত বৈচিত্র্য। আমি দেখতাম কে কোন খাবার খাচ্ছে। পরে আমিও সব খাবার ট্রাই করতাম।’

এই খাওয়ার মাঝেই পঙ্কজ ত্রিপাঠি, পার্বতীদের কাছ থেকে একদিন বায়না আসে, ‘জয়া দিদি আমাদের বাঙালি তেহারি খাওয়ান।’ ‘আমি যে কী করি। সরিষার তেলের তেহারি। কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি,’ সেদিনের কথা মনে করে হেসে ওঠেন জয়া। ‘এখানে তো হবেও না। বাংলাদেশের মতো তেহারি আর বিরিয়ানি, এখানে মাথা ঠুকলেও রান্না করা সম্ভব নয়। আমি তাদের বললাম, “এটা বাকি রইল। কখনো আমার বাড়িতে এলে খাওয়াব।”’