টুপি ওড়ানো, কালো গাউন, সমাবর্তনের এসব প্রথা কেমন করে এল

সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাতে পান তাঁদের শিক্ষাজীবনের বহুল আকাঙ্ক্ষিত সনদ। এই দিনে তাঁরা বিশেষ পোশাক পরে হাজির হন। পরনে থাকে কালো গাউন, হুড আর চার কোনা টুপি। আরও বেশ কিছু অলিখিত নিয়ম আছে সমাবর্তনের। কীভাবে এসবের প্রচলন হলো?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন
ছবি: প্রথম আলো

চাই বিশেষ পোশাক

১২ শতকের দিকে ইউরোপে যখন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন থেকেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ ধরনের পোশাকের প্রচলন শুরু। এই ধরনের অনুষ্ঠান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শীতকালে বা শীতল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতো। তাই ছাত্রছাত্রীদের উষ্ণ রাখতে এবং অন্যদের থেকে আলাদা করতে শুরুতে বিশেষ গাউন, হুড ও টুপি পরার প্রচলন শুরু হয়। লম্বা সময় ধরে এ ধরনের পোশাক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। যদিও শুরুতে গাউন, হুড বা টুপির জন্য কোনো রং নির্দিষ্ট করা ছিল না।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অপরাহ্‌ উইনফ্রে
ছবি: রয়টার্স

গাউনের রং কেন কালো

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পোশাকে বড় পরিবর্তন আসে ১৮৯৪ সালে। এই সময় আমেরিকান ইন্টারকলেজিয়েট কমিশন নিউইয়র্কের কলম্বিয়াতে সমাবর্তনের পোশাক, হুডের স্টাইল ও রং নির্ধারণের উদ্দেশে একটি সভা আহ্বান করে। সেই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সমাবর্তনের জন্য সব পোশাকই কালো হবে। স্নাতকের গাউন পয়েন্টযুক্ত হাতা দিয়ে তৈরি করা হবে আর স্নাতকোত্তরের গাউন হবে সিল্কের তৈরি লম্বা হাতাওয়ালা। হুডগুলোও তৈরি হবে গাউনের মতো একই উপকরণ দিয়ে। শুধু এর দৈর্ঘ্য ডিগ্রির সঙ্গে পরিবর্তিত হবে। তবে গাউনের জন্য নির্দিষ্ট রং কালো হলেও ভিন্ন ভিন্ন অনুষদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের হুড ব্যবহারের অনুমতি ছিল, যা এখনো প্রচলিত।

চার কোনা টুপি যে কারণে

সমাবর্তনের টুপি সময়-সময় অনেক বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। শুরুর দিকে গোলাকার সমাবর্তন টুপির প্রচলন লক্ষ করা যায়। যদিও সমাবর্তন টুপির জন্য সর্বাধিক প্রচলিত শৈলী হলো মর্টারবোর্ড ক্যাপ, যা সমাবর্তন গাউনের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। ক্যাথলিক চার্চ, পণ্ডিত ও অধ্যাপকদের ব্যবহৃত বিরেটা নামে পরিচিত টুপি থেকে এই টুপিগুলো ১৫ শতকে বিকশিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যদিও গির্জায় বিরেটার উত্পত্তি ১৩ শতকের দিকে।

মর্টারবোর্ড নামটি এসেছে মূলত আকৃতি থেকে। এটি আদতে নির্মাণশ্রমিকদের (স্টোনমাসন) মর্টার বহন করার জন্য ব্যবহৃত বর্গাকার বোর্ডের মতো। তাই কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, টুপিটি চার কোনা কারণ, এটি মর্টারবোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করে। উত্পত্তি নিশ্চিত নয়, তবে সমাবর্তনের টুপি হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই স্টাইল পছন্দ করেছেন বলেই হয়তো এটি টিকে গেছে।

সমাবর্তনের টুপি ওড়ানোও একটি রীতি
ছবি: প্রথম আলো

টুপি কেন আকাশে?

১৯১২ সালে আমেরিকান নেভাল একাডেমি প্রথম সমাবর্তন টুপি আকাশে নিক্ষেপ করা শুরু করে। এর কারণ হলো, পূর্ণাঙ্গ অফিসার হওয়ার আগে নৌবাহিনীর গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম দুই বছর মিডশিপম্যান হিসেবে কাজ করতে হতো। যখন মিডশিপম্যানরা স্নাতক হন, তখন অফিসারদের কাছে একটি নতুন টুপি দেওয়া হতো। সে সময় তাঁরা তাঁদের পুরোনো টুপিগুলো আকাশে উড়িয়ে দিতেন। সেই থেকেই এটি ধীরে ধীরে দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, যা আজকে উচ্ছ্বাসের প্রতীক হয়ে বিশ্বজুড়ে সব শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

রেশম থোবার প্রচলন

শিক্ষার স্তরের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ১৪ শতকের দিকে সমাবর্তনের টুপির সঙ্গে ট্যাসেল বা রেশমি থোবার প্রচলন শুরু হয়। একজন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করার পর ট্যাসেলটি ডান থেকে বাঁয়ে সরাতে পারেন। গ্র্যাজুয়েশনের আগে এই ট্যাসেল একজন শিক্ষার্থীর জন্য সময়ের প্রতীক। যখন এটিকে এক পাশ থেকে অন্য পাশে সরানো হয়, তখন ডিগ্রি সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করা হয়। সাধারণ এই ব্যাপার ধীরে ধীরে ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।