ঈদের পর ভারী খেয়েও হালকা থাকুন
ঈদের তিন দিন পেরোলেও কাটেনি ঈদের আমেজ। লম্বা ছুটিতে আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িও যাওয়া হচ্ছে। চলছে জম্পেশ খানাপিনা। তবে একটানা বেশ কয়েক দিন ভারী খাবার খাওয়ার কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে স্বাস্থ্যের ওপর। থাকে ওজন বাড়ার ভয়, অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে। উৎসবের খাবার খেয়েও কীভাবে এ সমস্যা এড়ানো যায়, জেনে নেওয়া যাক।
টাঙ্গাইলের সরকারি কুমুদিনী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান বলছিলেন, ‘ঈদে খাবারদাবারের আয়োজন তো হবেই। কোরবানি ঈদে মাংস ছাড়া অতিথি আপ্যায়নও অপূর্ণ মনে হয়। ফলে ভারী খাবার থাকবেই। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে স্বাস্থ্যও থাকবে ঠিকঠাক।’ মাংসের কোন অংশ খাওয়া হচ্ছে, শর্করাজাতীয় খাবার ও তেল-চর্বি কতটা খাওয়া হচ্ছে, মূল খাবারের পর কী খাওয়া হচ্ছে—এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিলেন তিনি।
শর্করাতেই ক্যালরির ভার
চাল, আটা, ময়দা, আলু—সবই শর্করাজাতীয় খাবার। প্রতিদিনের ক্যালরির একটা বড় অংশ এ–জাতীয় খাবার থেকেই পাই আমরা। পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ভাত, রুটি, পরোটা— এসব খাবারই শর্করার উৎস। দাওয়াতে গিয়ে পোলাও, বিরিয়ানি বা খিচুড়ির মতো খাবার খেতে হবে পরিমিত। নাহলে ক্যালরির পরিমাণ কম রাখা মুশকিল। বিরিয়ানির সঙ্গে মস্ত একখানা আলু নিলে ক্যালরির পরিমাণ অনেকটা বাড়বে। দুপুর বা রাতের দাওয়াতে পোলাও, সকালে পরোটা—তাতেও সেদিনের মোট ক্যালরির পরিমাণ বাড়বে। সারা দিনের ক্যালরির একটা হিসাব করা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। খেয়াল রাখতে হবে, মোট ক্যালরির পরিমাণ যাতে খুব বেশি না বাড়ে। তেল–চর্বিতেও বাড়ে ক্যালরি, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
যেভাবে ভারসাম্য রাখতে পারেন
সকালে পরোটা না খেয়ে রুটি খাওয়া ভালো। লাল আটার রুটি হলে আরও ভালো। লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার খেলে সহজে ক্ষুধা লাগে না। দুপুরে দাওয়াত থাকলে তো সেখানে গেলেনই। রাতে দাওয়াত থাকলে আবার দুপুরে নিজের বাড়িতে লাল চালের ভাত কিংবা সুগন্ধি চালের ভাত খেতে পারেন। এসব খাবারে তো আর ভারী খাবারের তেল বা ঘি নেই। কাজেই ক্যালরির মাত্রা কম। দাওয়াতে যাওয়ার আগে না খেয়ে থাকার ভুলটা করে বসবেন না যেন। তাতে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাবে।
মাংস খাবেন বুঝেশুনে
নির্দিষ্ট কোনো রোগের কারণে মাংস খেতে নিষেধ না থাকলে আপনি বেশ খানিকটা মাংস খেতে পারেন উৎসব আয়োজনে। তবে মাংসের চর্বি খাবেন না। মগজ, মাথা, গলা ও পাঁজরের মাংস, ভুঁড়ি, মজ্জা, পায়া যতটা সম্ভব কম খাবেন। তেলতেলে ঝোলের অংশ এড়িয়ে চলুন। কম তেলে রান্না করা খাবার সবচেয়ে ভালো।
সালাদে হোক ঈদ আয়োজন
ঈদের খাবারের আয়োজনে সালাদ চাই-ই চাই। তাতে পুষ্টি যেমন মিলবে, তেমনি ক্যালরি নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে। সুস্থতার এক অন্যতম শর্ত হলো নিমন্ত্রণে সালাদের আয়োজন রাখা। সুস্বাদু সালাদের আয়োজন থাকা প্রয়োজন উৎসবে।
আরও যা
খাবারের পর মিষ্টান্ন খাওয়ার সময় পরিমিতি বজায় রাখুন। চিনি, মধু, গুড়েও রয়েছে বেশ খানিকটা ক্যালরি। এগুলোর মধ্যে চিনিতে ক্যালরির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ বাড়িতে চিনি দিয়েই মিষ্টান্ন করা হয়। তবে বাকিগুলোও চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়। কৃত্রিম চিনিও স্বাস্থ্যকর উপকরণ নয়। মিষ্টান্নে শর্করাও থাকে। যেমন পায়েসে আছে চাল, ফালুদাতে নুডুলস। তাই মিষ্টান্ন পরিমিত খাওয়াই সেরা সমাধান।
টক দই খেতে পারেন। হজমেও উপকার হবে।
পর্যাপ্ত পানি খাবেন। খাবার খাওয়ার মিনিট কুড়ি আগে এবং মিনিট কুড়ি পরে এক গ্লাস পানি বা স্বাস্থ্যকর কোনো পানীয় খেতে পারেন।
ঘরে তৈরি মিষ্টি পানীয় ও বাজারের প্যাকেটজাত বা বোতলজাত পানীয়—সবই এড়িয়ে চলুন।
বোরহানি, টক দই দিয়ে তৈরি পানীয়, তেঁতুল পানি, গোটা জিরা টেলে তৈরি করা জিরা পানি কিংবা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করা পানীয় খেতে পারেন। এসব পানীয় হজম সহায়ক। ফলের রসও খেতে পারেন। এগুলো খেলে ওজন বাড়ার ভয়ও নেই।
কাবাব, নুডুলস বা অন্য কোনো পদের সঙ্গে সস বা কেচাপ নেবেন না। বরং পর্যাপ্ত সালাদ নিন।
খাওয়ার কিছুক্ষণ পর হাঁটাহাঁটি করুন।