‘আশা করি ভালো আছেন’ নয়, ই–মেইলের শুরুটা করুন এমনভাবে, যাতে পাঠক পুরোটা পড়ে ফেলেন

বাক্যটি দিয়ে শুরু করলে অনেক সময় পাঠক পুরো ই–মেইল আর পড়েও দেখেন না। বরং এমন কিছু লিখে ই–মেইল শুরু করুন, যাতে আপনার পুরো বার্তাটি পড়ার জন্য পাঠক আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

ই–মেইলের শুরুতেই যদি মনোযোগ পাওয়া না যায়, বাকিটা কেউ পড়বেই নাছবি: প্রথম আলো

বাক্যটি কেন গুরুত্ব হারাচ্ছে

ই–মেইল লেখার সময় আমরা প্রায়ই একটা কথা বলি—‘আশা করি ভালো আছেন’ বা ইংরেজিতে লেখি, ‘হোপ ইউ আর ওয়েল’। এই বাক্য লেখা হয় ভদ্রতার খাতিরেই এবং এতে দোষেরও কিছু নেই। কিন্তু এখন এত বেশি ব্যবহার হয় যে কেউ কেউ ই–মেইলের শুরুতে এই বাক্য দেখলে বাকিটা আর পড়েও দেখেন না।

বিশেষ করে ই–মেইলটা যদি এমন কাউকে পাঠান, যাঁর সঙ্গে অনেক দিন পর কথা হচ্ছে, তাহলে তাঁর কাছে এই বাক্য নিতান্তই যান্ত্রিক বা আগ্রহহীন বলেও মনে হতে পারে। অর্থাৎ ই–মেইলে এ ধরনের বাক্য হয়ে গেছে ‘অটো পাইলট’–এর মতো।

মানুষের হাতে এখন সময় খুব কম। তাই ই–মেইলটা কারও নজরে আনতে চাইলে শুরুতেই এমন কিছু বলতে হবে, যাতে পাঠক একটু থামেন, মনোযোগ দেন।

আরও কিছু ভুলভাল শুরুর ধরন

যান্ত্রিক বাক্য: আমরা অনেক সময় ই–মেইলের শুরুটা এমন করি, যেটা পড়লে মনে হয় যেন কোনো যন্ত্র কপি–পেস্ট করে দিয়েছে। অর্থাৎ ওই একই বাক্য আপনি অনায়াসে শতজনকে পাঠাতে পারেন। আদতে এ ধরনের বাক্য মনোযোগ আকর্ষণ করে না।

হঠাৎ সাহায্য কামনা বা কিছু চাওয়া: কারও সঙ্গে আগে কোনো দিন কথা হয়নি, এমন অবস্থায় সরাসরি সাহায্য কামনা করলে বা কিছু চাইলে সেটা হুট করে অচেনা কারও কাছে টাকা ধার চাওয়ার মতো ব্যাপার।

ফাঁপা শুভকামনা: ‘হ্যাপি মানডে’ বা ‘আশা করি সপ্তাহটা ভালো যাচ্ছে’—অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কথা অহেতুক। পাঠকও বুঝে ফেলে যে এসব বলার জন্য বলা। তার চেয়ে বরং যাঁকে লিখছেন, তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে আরও নির্দিষ্ট কিছু যোগ করুন। যেমন কেউ যদি ছুটির দিনে নিয়মিত মাছ ধরতে যান, তাঁকে লিখুন, ‘আশা করি, ছুটির দিনটা মাছ ধরে ভালোই কাটিয়েছেন।’

আরও পড়ুন

তাহলে ই–মেইলের শুরুটা কেমন হওয়া উচিত

খুব সহজ কথা দিয়ে। মানে আপনি যেভাবে বাস্তবে কথা বলেন, সেভাবেই শুরু করুন। সেটা হতে পারে আগের কোনো আলাপের প্রসঙ্গ টেনে, কিংবা একটু আন্তরিক ভঙ্গিতে। কিছু উদাহরণ দেখুন—

আগের কিছু মনে করিয়ে দিন: যাঁকে ই–মেইল করছেন, তাঁর সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকলে (সেটা অল্প দিনের হলেও), এই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। এর আগে আপনাদের কথোপকথন যেখানে শেষ হয়েছিল, সেটার সূত্র ধরিয়ে দিলে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

যেমন—

  • ‘গত মাসে অমুক ইভেন্টে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কথা বলে ভালো লেগেছিল।’

  • ‘গতকালের মিটিংয়ে আপনার একটা আইডিয়া খুব মনে ধরেছে।’

ইতিবাচকভাবে শুরু করুন: ইতিবাচক শব্দ কিংবা বাক্য দিয়ে শুরু করলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহী কিংবা আগ্রহী হন। আর আপনি যখন শুরুতেই উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কাজের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তখন বিপরীত দিকে থাকা ব্যক্তিটিও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

যেমন—

  • ‘এই প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। একটা আপডেট ছিল।’

  • ‘গত পরশু আমাদের যে আলাপ হলো, সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। একটা আইডিয়া শেয়ার করতে চাই।’

ই–মেইলের শুরুতেই যদি মনোযোগ পাওয়া না যায়, বাকিটা কেউ পড়বেই না। তাই যেভাবে আমরা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি, সেভাবেই শুরু করুন।

সময়ের কথা মাথায় রাখুন: যাঁকে ই–মেইল লিখছেন, তিনি হয়তো ভীষণ ব্যস্ত কিংবা তাঁকে ই–মেইল করতে হয়তো বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে ফেলেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ব্যস্ততা কিংবা আপনার দেরি করার প্রসঙ্গটি আসতেই পারে, তবে এতেও বাহুল্য বর্জন করুন।

যেমন—

  • ‘জানি, এখন আপনার অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে, তারপরও ভাবলাম, এই সুযোগটা যেন আপনার চোখ এড়িয়ে না যায়।’

  • ‘আগামী সপ্তাহের ডেডলাইনের বিষয়টা আপনাকে একটু মনে করিয়ে দিলাম, যাতে সব ঠিকঠাক থাকে।’

তাঁদের প্রসঙ্গেই বলুন: ই–মেইলে এ ধরনের শুরু তখনই করবেন, যখন সেটা হবে জনসংযোগ, যোগাযোগরক্ষা বা প্রচার–প্রচারণার খাতিরে।

যেমন—

  • ‘আপনার সাম্প্রতিক প্রজেক্টটা দারুণ হয়েছে। কিছু বিষয় তো আমার খুব ভালো লেগেছে।’

  • ‘লিংকডইনে আপনার অমুক বিষয়ক পোস্টটা খুব ভালো লাগল, তাই ভাবলাম, ধন্যবাদ জানাই।’

সূত্র: এমএসএন

আরও পড়ুন