কর্মক্ষেত্রে ‘তুই’, ‘তুমি’ না ‘আপনি’ সম্বোধনটি যখন যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন

অচেনা মানুষকে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন করতে নেই—এ তো সবারই জানা। কর্মক্ষেত্রেও এই অলিখিত নিয়মটাই মেনে চলা হয়। তবে সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিন যাঁদের সঙ্গে কাটানো হয়, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই একাত্মতা গড়ে ওঠে। ফলে ‘তুমি’তে নেমে আসে ‘আপনি’ সম্বোধন। এমনকি ‘তুই’ সম্বোধনেও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। উল্টোটাও ঘটে। পূর্বপরিচিত ব্যক্তি, যাঁদের সঙ্গে সব সময় ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধনে আলাপ হয়, তাঁদের সঙ্গে অফিসের ভিন্ন পরিবেশে ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলারও প্রয়োজন পড়ে।

ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলেও স্থান-কাল বিবেচনায় অনেক সময়ই ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে।
ছবি: প্রথম আলো

সত্যিকার অর্থে সম্বোধনের একেবারে বাঁধাধরা কোনো আইন না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত ধারার সঙ্গে মানানসই সম্বোধনটি বেছে নেওয়াই সমীচীন। বাংলা ভাষার এই তিনটি সম্বোধনের মধ্যে ‘আপনি’ সম্বোধনটিকেই সম্মানসূচক ধরা হয়। তাই পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গেই ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলাটা শোভনীয়, তা তিনি পদমর্যাদায় আপনার চেয়ে ছোট বড় বা যা-ই হোন না কেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলেও স্থান-কাল বিবেচনায় অনেক সময়ই ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে। এই যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিটিংয়ের সময়। তবে এ বিষয়গুলো পুরোপুরিভাবেই নির্ভর করে কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতির ওপর। অর্থাৎ, এগুলো আপেক্ষিক বিষয়। এমনটাই বলছিলেন মানবসম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান করপোরেট কোচের মুখ্য পরামর্শক যিশু তরফদার।

সহকর্মী যখন বন্ধু

সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতেই পারে। বন্ধুত্ব হওয়ার পর অফিসের নিত্যনৈমিত্তিক কাজের সময় ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধনে বাধা নেই। কিন্তু যদি এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়, যেখানে অন্য অফিস থেকে কেউ এসেছেন, যেখানে গুরুতর কোনো বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেখানে ‘তুই’ সম্বোধনে একে অন্যের সঙ্গে কথা না বলাই ভালো। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্বোধন বদলে ফেলতে হয়।

অফিসের নিত্যনৈমিত্তিক কাজের সময় ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধনে বাধা নেই।
ছবি: প্রথম আলো

আত্মীয়, বন্ধু কিংবা অনুজ যখন সহকর্মী

ব্যক্তিগত জীবনে আগে থেকে যে সম্পর্কই থাকুক, অফিসে তিনি আপনার সহকর্মী। করপোরেট সংস্কৃতিতে পূর্বপরিচিত ব্যক্তিকে হুট করে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন না করাই ভালো, এমনকি তিনি বয়সে আপনার ছোট হলেও। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। অফিসের রোজকার কাজের মাঝে ব্যক্তিজীবনের ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধনে ক্ষতি নেই। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘আপনি’ সম্বোধনও করতে হতে পারে, এমনকি স্বামী-স্ত্রী হলেও। বিশেষ করে এই পূর্বপরিচিত ব্যক্তিদের কেউ যদি পদমর্যাদায় আপনার চেয়ে বড় হন, আনুষ্ঠানিক মিটিংয়ে ‘আপনি’ সম্বোধনেই কথা বলুন।

বয়স নাকি পদমর্যাদা?

আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ হয়তো আপনারই অফিসে যোগ দিয়েছেন আপনার চেয়ে উঁচু কোনো পদে। আপনার উচিত তাঁর সঙ্গে ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলা। অবশ্য তিনি যদি ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধনে কথা বলতে অনুরোধ করেন, তাহলে আপনি সেটা করতেই পারেন। তবে এ ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখবেন, মিটিংয়ে এবং বাইরের কারও উপস্থিতিতে পদমর্যাদার ভিত্তিতে আলাপচারিতা করাটাই যুক্তিসংগত। আবার আপনি নিজে উঁচু পদের দায়িত্বে থাকলেও অন্যদের সঙ্গে ‘আপনি’ সম্বোধনেই কথা বলুন, বিশেষত করপোরেট সংস্কৃতিতে এই ধারাই অনুসৃত হয়। আপনি যাঁকে দেখেই বুঝতে পারছেন তিনি আপনার চেয়ে বয়সে বড়, তিনি যদি পদমর্যাদায় ‘ছোট’ও হন, তাহলেও কখনোই তাঁকে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন করবেন না। এটা অভদ্রতা। আপনি পদমর্যাদায় যতই বড় হন, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন করলে আপনি মানুষ হিসেবে নিজেকেই ‘ছোট’ করে ফেললেন।