মনে হচ্ছিল, ওই মুহূর্তে মা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ
প্রথম বর্ষেই সিনিয়রদের সমাবর্তন দেখার সুযোগ পেয়েছি। সেবার দূর থেকেই সব দেখেছিলাম। স্নাতকদের সে কি রোমাঞ্চ! শিক্ষক, অতিথিদের বক্তব্যও ছিল অনুপ্রেরণাদায়ী। চার বছর পেরিয়ে আমার সামনেও সেই রঙিন সময় এসে হাজির। তবে এবারের বিষয়টি একেবারেই আলাদা। সমাবর্তনের আগেই আমি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিই। একদিকে শিক্ষার্থী হিসেবে সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ, আবার শিক্ষক হিসেবে সমাবর্তন আয়োজনের প্রস্তুতির সঙ্গেও আমি যুক্ত। আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ, স্নাতকোত্তরে ৪-এ ৪ সিজিপিএ অর্জনের জন্য আমি আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক নেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আগের কয়েকটি দিন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, অতিথিদের আমন্ত্রণসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিল পুরো ক্যাম্পাস। রঙিন পতাকায় সেজেছিল পুরো ক্যাম্পাস। বেশ একটা উৎসব-উৎসব আমেজ। ভর্তি পরীক্ষার পরে এই ক্যাম্পাসে একদিন প্রবেশ করেছিলাম। সদ্য তারুণ্যে পা রাখা আমি কৌতূহল নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম চারপাশ। চিনতাম না কোথায় ক্লাস, কোথায় ক্যানটিন। সেই প্রাঙ্গণ থেকেই সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী জীবনের বিদায়ঘণ্টা বাজল।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন এক দিকে নিজের সমাবর্তন সনদ গ্রহণ, অন্য দিকে শিক্ষক হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ—সব মিলিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আনন্দ আরও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ, আমার মা-ও ছিলেন উপস্থিত। আনন্দে মায়ের চোখ-মুখও যে ঝলমল করছে, সেটা তাঁকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাত থেকে স্বর্ণপদক নেওয়ার অভিজ্ঞতা অল্প শব্দে বলে বোঝানো যাবে না। জীবনে আর এমন সুযোগ আসবে কি না, জানি না। যখন মঞ্চে আমার নাম ডাকা হয়, তখন মায়ের মুখটা দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল, ওই মুহূর্তে সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমি ধীরগতিতে মঞ্চের ঠিক মাঝখানে চলে যাই। সালাম দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদের হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অভিজ্ঞতা। কিন্তু সময়টা নিশ্চয়ই আমার স্মৃতিতে ফিরে আসবে বারবার।
লেখক: প্রভাষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)