মাত্র ১৬ টাকায় ইউরোপের এই শহরে বাড়ি কেনা যায়, তবে...

ক্রোয়েশিয়ার ছোট্ট শহর লেগ্রাদ
ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের দেশ ক্রোয়েশিয়ার ছোট্ট শহর লেগ্রাদ। এখন প্রায় দুই হাজার ক্রোয়াটের বসবাস শহরটিতে। কিন্তু মধ্যযুগে হাঙ্গেরীয় সীমান্তবর্তী এই ছোট্ট শহর ছিল লোকে-লোকারণ্য, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। একসময় লেগ্রাদ ছিল ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল শহর। সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সতেরো শতকে এই শহর ইউরোপের গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সে সময় ইতালির ভেনিস থেকে ব্যবসায়ীরা নিয়মিত এই শহরে আসতেন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। কিন্তু ১৯১৮ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের পতন হলে ধীরে ধীরে লেগ্রাদ তার জৌলুশ হারাতে শুরু করে। জনসংখ্যাও কমতে শুরু করে তখন থেকে।

১৯১৮ সালের পর থেকে লেগ্রাদ তার জৌলুশ হারাতে শুরু করে, জনসংখ্যাও কমতে শুরু করে তখন থেকে
ছবি: রয়টার্স

কম জনসংখ্যা যখন দুশ্চিন্তার কারণ

এই শতাব্দীতে এসে লেগ্রাদের জনসংখ্যা কমে যায় আশঙ্কাজনক হারে। ব্যাপারটা এমন হয়, শহরজুড়ে পুরোনো সব পরিত্যক্ত বাড়ি, কিন্তু কোথাও কোনো মানুষ নেই! বাড়িগুলোয় প্রাণ নেই, শহরে নেই কোনো চাঞ্চল্য। কম জনসংখ্যা নিয়ে লেগ্রাদের প্রশাসন বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। শহরটির হারিয়ে যাওয়া জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের আগে দরকার পর্যাপ্ত অধিবাসী। অন্যান্য অঞ্চলের ক্রোয়াটদের এই শহরে বসতি স্থাপনে আকর্ষণ তৈরি করতে ২০১৮ সালে লেগ্রাদের প্রশাসন অভিনব এক উদ্যোগ চালু করে। সে বছর থেকে শহরের পরিত্যক্ত বাড়িগুলো তারা মাত্র ১ কুনায় বিক্রি করতে শুরু করে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ টাকা মাত্র!

উদ্যোগটির প্রভাব

এভাবে বেশ কিছু বাড়ি বিক্রিও হয়েছে। নতুন অধিবাসী পেয়েছে এই শহর। লেগ্রাদ প্রশাসনের এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হয়েছিল, তা জানাতে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার গণমাধ্যম সংস্থা এইচআরটি (হারভাৎস্কা রেডিওটেলিভিজিজা) বলছে, ঠিক পাঁচ বছর আগেও এত শিশু এই শহরে ছিল না, এখন যত আছে। ২০১৮ সালের পর থেকে শিশুর সংখ্যা এতটা বেড়ে গেছে যে শহরে নতুন একটা ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করতে হয়েছে।

লেগ্রাদ শহরের পরিত্যক্ত বাড়িগুলো মাত্র ১ কুনায় বিক্রি করতে শুরু করলে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে
ছবি: রয়টার্স

রয়টার্সের তথ্যমতে, ২০২১ সালে লেগ্রাদ প্রশাসন ১৯টি পরিত্যক্ত বাড়ি বসবাসযোগ্য করে তুলতে সক্ষম হয়। সেখান থেকে ১৭টি বাড়িই বিক্রি হয়ে যায়। বাড়িপ্রতি দাম সেই ১ কুনাই ছিল। তবে পরিত্যক্ত বাড়িগুলো বসবাসের জন্য খুব ভালো করে সংস্কার করা প্রয়োজন। মজার ব্যাপার হলো, লেগ্রাদের প্রশাসন প্রতি বাড়ির মালিককে ২৫ হাজার কুনা প্রণোদনাও দিয়েছে বাড়ি সংস্কারের জন্য, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার মতো।

চাইলেই কি লেগ্রাদে সস্তায় বাড়ি কেনা যাবে?

এ বছরের শুরুতে লেগ্রাদ প্রশাসন আরও এক ব্যাচ বাড়ি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে চাইলেই যে কেউ লেগ্রাদের বাড়িগুলো থেকে যেকোনো একটির মালিক হতে পারবেন না। পকেটে প্রায় ১৬ টাকা থাকলেই ইউরোপের মধ্যযুগীয় এই শহরে আপনি বাড়ি কিনতে পারবেন না। বাড়ি কেনার আবেদন করতে হলে বয়স হতে হবে ৪৫ বছরের নিচে। দেশটিতে বৈবাহিক বা বিবাহবহির্ভূত অংশীদারত্ব থাকতে হবে এবং অবশ্যই ক্রেতার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকা চলবে না। শুধু এটুকুই নয়। ক্রেতার নামে আগে থেকে কোনো সম্পদ বা জমি নিবন্ধন করা থাকলে ব্যাংকে যত টাকাই থাকুক না কেন, লেগ্রাদের বাড়িগুলো কেনার বেলায় অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। বসবাস শুরু করার পর থেকে কমপক্ষে ১৫ বছর সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে প্রশাসনকে।

লেগ্রাদে বাড়ি কিনতে চাইলে সেখানে বসবাস শুরু করার পর থেকে কমপক্ষে ১৫ বছর স্থায়ীভাবে থাকতে হবে
ছবি: রয়টার্স

লেগ্রাদই প্রথম নয়

কোনো এলাকার জনসংখ্যা বাড়াতে গৃহীত এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার দৌড়ে ক্রোয়েশিয়াই প্রথম দেশ নয়, এর আগে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র সিসিলিতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সিসিলির সে গল্প আজ থাকুক, অন্যদিন!

সূত্র: সিএনবিসি ও বিজনেস ইনসাইডার

আরও পড়ুন