ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ: ক্যাম্পাস মাতিয়ে আটে পা
সারা বছর নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মাতিয়ে রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ (ডিইউসিএস)। আগামীকাল ৫ সেপ্টেম্বর ৮ বছরে পা দেবে এই সংগঠন। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও সাফল্যের ছাপ রেখে চলেছে।
ডিইউসিএসের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বসন্ত উৎসব। এতে গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে তারা। এই আয়োজনে থাকে নাগরিক যান্ত্রিকতায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন লোকজ উপাদান যেমন নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, সাপের খেলা, বানরনাচ, পুতুলনাচ প্রভৃতি। পাশাপাশি সংগঠনের সদস্যদের নাচ-গান এবং আমন্ত্রিত ব্যান্ডগুলোর পরিবেশনাও ক্যাম্পাস মাতায় প্রতিবছর।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রথম সারির নাট্যদলগুলোর অংশগ্রহণে প্রতিবছর ‘নাট্য উৎসব’–এর আয়োজন করে ডিইউসিএস। এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তিনজন নাট্যকর্মীকে দেওয়া হয় ‘নাট্যজন সম্মাননা’। শোকের মাস আগস্টে করা হয় ‘বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা’। এ ছাড়া মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী, পয়লা বৈশাখসহ বিভিন্ন বিশেষ দিবসে অনুষ্ঠান তো আছেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংগঠনের আয়োজনে ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে বেশ প্রশংসা পেয়েছে। বর্তমানে এ সংগঠনের সদস্যসংখ্যা প্রায় ৬৫০ জন।
শুরু থেকেই সংগঠনের মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের কাজ মূলত সংস্কৃতমনা মানুষদের এক করা আর সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করা। আমাদের কাজ শুধু ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের চাওয়া পুরো বাংলাদেশের মানুষের মননে সাংস্কৃতিক চেতনার জাগরণ ঘটানো। সেই লক্ষ্যেই সংগঠনের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় সংগীত, নৃত্যকলা, গীতিনাট্য, কবিতা, নাট্যকলা, সাহিত্য, উপস্থাপনাসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন উপাদান আমরা নিয়মিতই তুলে আনি আমাদের বিভিন্ন আয়োজনে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা অন্বেষণ ও বিকাশ ঘটানোর প্রয়াসে বিভিন্ন সময়ে ‘অন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করে ডিইউসিএস। এখানে দেশের নামী শিল্পী ও প্রশিক্ষকেরা আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও নৃত্যবিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালাও পরিচালনা করেন নিয়মিত। প্রতিবছর প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুণীজনদের রচনা সংবলিত ক্রোড়পত্র ‘রং’। মার্কিন দূতাবাসের প্রকল্প প্রজন্ম ওয়েভের ‘শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী’তেও সহযোগী ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ।
ক্যাম্পাসের গণ্ডির বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে ডিইউসিএসের সদস্যরা। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সংগঠনটি একাধিকবার বিজয়ী হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি দুই বাংলার ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’-এ তাঁদের পরিবেশনা পেয়েছে সুনাম। এ ছাড়া ভারত, চীন, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে সংগঠনটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা তুলে ধরেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের বর্ষপূর্তি আয়োজনের ব্যাপারে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট সাদিয়া আশরাফী বলেন, ‘আমাদের বর্ষপূর্তি আয়োজনটা সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে হয়। আয়োজনে সংগঠনের সাবেক সব সদস্যদের যুক্ত রাখতে চেষ্টা করি। আয়োজনের দায়িত্বটা আমরা মূলত সংগঠনের অনুজদের হাতে তুলে দিই। পুরো ব্যাপারটা তারাই দেখে। প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।’