সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের গবেষকদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে গড়ে ওঠে ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’। আর ২০১২ সাল থেকে চালু হয় ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জেনোসাইড স্টাডিজ’ নামের একটি ডিপ্লোমা কোর্স। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে সংঘটিত গণহত্যা ছাড়াও পূর্বাপর নানা গণহত্যার ইতিহাস নিয়ে গবেষণাই এখানে প্রাধান্য পায়। তবে কোর্সটি শুধু স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও পেশাদারদের জন্য প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন

‘আমার কিছু হবে না’ বলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাবা

শুধু সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারেন গবেষণা কার্যক্রমে। সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের জাদুঘরে আছে গণহত্যার ধ্বংসাবশেষ, গণহত্যা ও গণ সহিংসতা–সম্পর্কিত পোস্টার, ছবিসহ নানা ধরনের মুদ্রিত ও ভিজ্যুয়ালসামগ্রী। এসবও শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করছে।

সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের গবেষণা ও বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ পর্যন্ত ২৬টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত প্রায় ১১ বছরের তথ্য আছে। এই তথ্য আমরা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় নিজেদের সংগ্রহে রেখেছি। এ ছাড়াও ইউসিএলএ (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস)-এর সঙ্গে রোহিঙ্গা–সংকট নিয়ে আমরা গবেষণামূলক কাজ করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) ও বাংলাদেশের পুলিশের সঙ্গে আমাদের কাউন্টার টেরোরিজম নিয়ে প্রকল্প আছে। এভাবেই বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি।’

গণহত্যা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হুমায়ূন কবিরের সঙ্গে কথা হলো তাঁর সাম্প্রতিক প্রকল্প নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটি এখনো জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি পায়নি। এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েই আমরা এখন কাজ করছি। রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়ায় সংঘটিত গণহত্যাগুলো কীভাবে স্বীকৃতি পেল, ওখান থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি, এখন সেসব বিশ্লেষণ চলছে।’

কথায় কথায় ‘ইয়ুথ অ্যান্ড টলারেন্স’ নামের একটি কোর্সের কথাও বললেন হুমায়ূন। জানালেন, এই কোর্সটি নবীন শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে করতে পারেন। ১২ জনের অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে। হুমায়ূন বলেন, ‘এখানে ডিপ্লোমা কোর্সটি মূলত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্স, যা বছরের দুটি সময়ে করা যায়। মোট আসনসংখ্যা ৪৮। সাধারণত ছয় মাসে কোর্স শেষ হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কোর্স দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্যই উন্মুক্ত। কর্তৃপক্ষ জানায়, একজন ভারতীয় ও একজন কানাডীয় নাগরিকও বর্তমানে এখানে ডিপ্লোমা করছেন।

ঢাকার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন ইসরাত আমিন। সম্প্রতি গণহত্যা অধ্যয়নের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন। ইসরাত বলেন, ‘১৯৭১ সালের গণহত্যা নিয়ে খুব বেশি জানতাম না। অপরাধবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার সময় একটা কোর্স করতে গিয়ে এ বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। আমি এখনো কর্মক্ষেত্রে ঢুকিনি। মানবাধিকারের ওপর পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। গণহত্যা ব্যাপারটিও মানবাধিকারের সঙ্গে জড়িত। তাই এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করছি। যেন নিজে সমৃদ্ধ হতে পারি, পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও কিছু জানাতে পারি।’