সবার কাছে নাটক, তাঁদের কাছে পরীক্ষা

এই পরিচালকেরাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবারের নাট্যোৎসবে
ছবি: সংগৃহীত

চরিত্র মোটে তিনটি। এক যুবতী, তাঁর প্রেমিক ও এক প্রৌঢ়। যুবতী ও তাঁর প্রেমিক চারুকলার শিক্ষার্থী, আর প্রৌঢ় শিক্ষক। এই তিন চরিত্রের জটিল, ত্রিভুজ মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের গল্প নিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের নাটক ঈর্ষা যদি আপনি দেখতে চান, ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হাজির হতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের বার্ষিক উৎসব শুরু হচ্ছে ২ অক্টোবর। চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। উৎসবে মঞ্চস্থ হবে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি বাংলা নাটক। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ও রাত আটটায় দুটি করে নাটক দেখানো হবে। উদ্বোধনের দিন থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর।

উৎসবের দিনক্ষণ

এই নাট্যোৎসবের বিশেষত্ব তিনটি।

প্রথমত, নাটক যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁরা পেশাদার কোনো পরিচালক নন। স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

দ্বিতীয়ত, এটি নিছক নাটকের উৎসবই না। ১৫ শিক্ষার্থীর ১০০ নম্বরের ফাইনাল পরীক্ষাও। প্রদর্শনীর দিন শিক্ষকেরা খাতা-কলম নিয়ে নম্বরও দেবেন। কেবল পরিচালকেরাই শিক্ষার্থী নন, ১৫টি নাটকে অভিনয় থেকে শুরু করে মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, রূপসজ্জায় যাঁরা থাকবেন, তাঁরা সবাই কোনো না কোনো বর্ষের শিক্ষার্থী। উৎসবের ভেতর দিয়ে তাঁরা সবাই কোনো না কোনো কোর্সের পরীক্ষা দেবেন!

তৃতীয়ত, এত দিন পর্যন্ত উৎসবে সব ধরনের নাটকই থাকত। এবারই প্রথম কেবল বাংলা নাটক দিয়েই হচ্ছে উৎসব। এরপর হয়তো কেবল ইংরেজি, মার্কিন, গ্রিক বা রোমান নাটক অথবা ভারতীয় বা নির্দিষ্ট কোনো নাট্যকারের নাটক দিয়ে হবে উৎসব।

বিভাগের চেয়ারপারসন কাজী তামান্না হক জানান, তাঁদের বিভাগে পড়াশোনা মানে কেবল কাগজ-কলমের পড়াশোনা না। শিক্ষার্থীদের অনেক সময় নানা জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় চরিত্র পর্যবেক্ষণের জন্য। মুমূর্ষু রোগী, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি, যৌনকর্মী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে রিকশাচালক—সবাইকে চিনতে হয় খুব কাছ থেকে। সংগত কারণেই বিভাগের সবাই সবাইকে চেনেন। কেননা, পড়ার বিষয়ের সঙ্গে মানুষে মানুষে সম্পর্কের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তামান্না বলেন, ‘একজন হয়তো থিওরি পরীক্ষায় খারাপ করেছে, অথচ দেখা গেল অভিনয়ে সে-ই সেরা। আরেকজন হয়তো ভালো লিখতে পারে, কিন্তু যোগাযোগের দক্ষতা নেই বিশেষ। আমাদের কাজ যার ভেতরে যে প্রতিভা আছে, সেটা বের করে আনা। যেন সে ভবিষ্যতে তার শক্তিশালী দিকটা পেশাজীবনে কাজে লাগিয়ে ভালো করতে পারে।’

এই শিক্ষক আরও জানালেন, পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এত পরিশ্রম করেন যে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব রকম অভিজ্ঞতা তাঁদের হয়ে যায়, এটা অনেকটা ‘সারভাইভাল ট্রেনিংয়ের মতো।

এই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিভাগ থেকে বের হয়ে তাঁরা অন্যদের তুলনায় যেকোনো জায়গায় যেকোনো পরিস্থিতিতে সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন। এভাবেই এই বিভাগের প্রাক্তনদের জীবনে পথচলা সহজ হয়ে গেছে।

রিফাত জাহানের নেতৃত্বে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কলাভবন, টিএসসি, নাট্যমণ্ডলে সেলিম আল দীনের লেখা সংবাদ কার্টুন নাটকের রেওয়াজ চলছে। এই নাটকটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে রিফাত বলেন, এটা ১৯৭৩ সালে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর লেখা। তখন অনেকেই অস্ত্র জমা দেয়নি। কে পুলিশ, কে হাইজ্যাকার চেনা দায়।

নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদকে এবারের নাট্যোৎসবে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। এর আগে সেলিম আল দীন, ফেরদৌসী মজুমদার, সৈয়দ শামসুল হক, আলী যাকের, আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার ও আসাদুজ্জামান নূর এই সম্মাননা পেয়েছেন।

আরও পড়ুন