খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে শিশু, কী করবেন

একটা বয়স পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে অনেক মায়ের অভিযোগ থাকে ‘আমার সন্তান তো কিছুই খায় না!’ বাড়ন্ত বয়সে সেই অভিযোগের সঙ্গে যোগ হয়—সন্তানের বাইরের খাবারের প্রতি আকর্ষণ। শিশু যখন স্কুলে যায়, তখন তার শরীরে দরকার সুষম খাবার। কিন্তু এই সময়টিতে অনেকেই খাচ্ছে খোলা স্থানের অস্বাস্থ্যকর খাবার। এতে শিশুর শরীরে পুষ্টির ব্যাঘাত ঘটছে। বাড়ন্ত বয়সে শিশুর এই খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে আচরণ ও তাদের পুষ্টি নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার।

খাবার নিয়ে শিশুদের খুঁতখুঁতে আচরণ কেন?

শিশু ও বড়দের খাবারের স্বাদ গ্রহণ প্রক্রিয়া আলাদা। যে খাবারগুলো বড়দের খুব আগ্রহ নিয়ে খেতে দেখা যায়, সেগুলো শিশুদের টানে না। শাকসবজি, ডিম ও দুধের পরিবর্তে তারা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। এই যুগের শিশুদের খাবারের প্রতি আকর্ষণ বোধ না করার আরেকটা কারণ—তাদের অধিকাংশের গৃহবন্দী জীবন। ঘরে বসে টিভি দেখে বা গেম খেলে সময় কাটায় বলে তাদের শারীরিক পরিশ্রম হয় না। ফলে তেমন ক্ষুধা লাগে না। যদি বাইরে ছোটাছুটি কিংবা ঘরেই শারীরিক কসরত করত, তাহলে ক্ষুধা অনুভব হতো, সব খাবারে আকর্ষণ বোধ করত। খেলাধুলার অভাব খাবারের প্রতি শিশুদের অনীহা তৈরির অন্যতম কারণ।

সূত্র: ২০১৭-১০১৮ বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে, ডিজারেবল ডায়েটারি প্যাটার্ন ফর বাংলাদেশ, বারডেম


গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৩১ শতাংশ শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে, ৩৬ শতাংশ শিশু ওজনস্বল্পতা এবং ৫২ শতাংশ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। আর ২১.৭০ শতাংশ শিশুর ভিটামিন এ’র অভাব রয়েছে। ৫২ শতাংশের আয়রন ঘাটতি আছে। জিঙ্কের অভাবে ২৯.৭০ আর লডলাইনে ডেফিশিয়েনসিতে ভুগছে ৪০ শতাংশ শিশু।
শিশুদের এমন পুষ্টি ঘাটতির জন্য সুষম খাবার গ্রহণের অনীহাকেই অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। বাড়ন্ত বয়সের শিশুরা অনেক ক্ষেত্রেই সুষম খাবারের পরিবর্তে বাইরের খাবার যেমন পিৎজা, পাস্তা, ব্রাউনি, বার্গার—এমন নানা ধরনের ফাস্ট ফুডে আকৃষ্ট থাকে। মা-বাবার কাছে তাদের বায়না থাকে এই খাবারগুলোর জন্য। তা ছাড়া এখন ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার দিয়ে পাওয়া যায় এমন মজাদার খাবার।

তাই এ ধরনের খাবারগুলোয় আরও বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠছে শিশুরা। এই মুখরোচক খাবারগুলো শরীরে কোনো পুষ্টি যোগায় না। বরং শিশুদের স্থূলতা, খাবারে অনীহা, খিটখিটে মেজাজের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই অভ্যাস বদলাতে হলে

শিশুকে যখন খাবার খাওয়ানো শুরু হয়, তখন থেকে আমরা দেখতে পাই তাকে মুঠোফোনে বা অন্য মাধ্যমে কার্টুন দেখিয়ে খাওয়ানো হয়। সেই অভ্যাসটি শিশুর বাড়ন্ত বয়সেও থেকে যায়। এতে খাওয়ার সময় সে মুঠোফোন দেখতে থাকে। ফলে খাবারের স্বাদটা সে সঠিকভাবে পায় না। খাওয়ার সময় টেবিলে বসার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খেলে শিশু সুন্দর পারিবারিক আবহ পাবে এবং খাবার গ্রহণটা তার জন্য আনন্দদায়ক হবে।

শরীরের সুষম পুষ্টি বজায় রাখার জন্য দুধ অপরিহার্য
ছবি: সংগৃহীত


এ বয়সে দেখা যায়, অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করে না। কিন্তু শরীরের সুষম পুষ্টি বজায় রাখার জন্য দুধ অপরিহার্য। দুধের স্বাদ বাড়ানোর জন্য এর সঙ্গে পুষ্টিকর ও খাদ্যোপযোগী ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-সমৃদ্ধ পাউডার সাপ্লিমেন্ট’ মেশানো যায়।

এই পাউডার সাপ্লিমেন্টে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান থাকে, যা দুধের সঙ্গে মিশে স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই শিশুরা খাবার খেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
মনে রাখতে হবে, শিশুরা যেহেতু বাইরে তৈরি খাবার বেশি পছন্দ করে, তাই ঘরেই তাদের পিৎজা, পাস্তা, বার্গার বা চিকেন ফ্রাই বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। নানা উপকরণ ও সবজি দিয়ে এই খাবারগুলো বানিয়ে দিলে তাদের বাইরের খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমবে।

নানা উপকরণ ও সবজি দিয়ে এই খাবারগুলো বানিয়ে দিলে তাদের বাইরের খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমবে
ছবি: সংগৃহীত

ঘরে তৈরি খাবারগুলোরে মাধ্যমে সঠিক পুষ্টিও পাবে। নাশতায় বিভিন্ন শাকসবজির পাকোড়া ভেজে দেওয়া যেতে পারে। এতে শাকসবজি তাদের কাছে বিস্বাদ লাগবে না। আর শিশুর পুষ্টি নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন মা-বাবা।