সিঙ্গাপুরে ইউটিউব কার্যালয়ে যা দেখলাম

ইউটিউব সিঙ্গাপুরের আমন্ত্রণে তাঁদের কার্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন এনায়েত চৌধুরীছবি: লেখকের সৌজন্যে

১০০ মিটার স্প্রিন্টে জিতে, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিংবা হিমালয়ের চূড়ায় উঠে যখন কাউকে পতাকা হাতে ছবি তুলতে দেখতাম, ভাবতাম এভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতিটা আসলে কেমন! কখনো কি আমারও এমন কিছু করার সুযোগ হবে? 

২ মের কথা। দাঁড়িয়ে আছি গুগলের সিঙ্গাপুর অফিসে, একই সঙ্গে যেটা গুগলের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলেরও প্রধান কার্যালয়। একটা তলায় ইউটিউবের লোগো-সংবলিত সুসজ্জিত মঞ্চ বানিয়ে রাখা হয়েছে। চোখ পড়ামাত্রই মনে হলো—আমার কাছে এটাই হিমালয়ের চূড়া, স্প্রিন্টের শেষ প্রান্ত। ঝটপট পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম, আর স্বপ্নটা সত্যি হলো।

বলছি ইউটিউব সিঙ্গাপুরের অফিস পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা। বর্তমানে বাংলাদেশে যাঁরা ইউটিউবার হিসেবে সক্রিয়, তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় আমন্ত্রিত হিসেবে আমার এই সুযোগ হলো। কিছুদিন আগে ইফতেখার রাফসানও এই আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।

পৃথিবীর সব জায়গায় কিন্তু গুগল বা ইউটিউব তাদের অফিস বসায় না। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে ভারতে ৪টি অফিস থাকলেও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোয় ইউটিউবের কোনো অফিস নেই। যদিও বাংলাদেশে প্রায় ৩.৩৬ কোটি মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করেন। ৬১ হাজারের বেশি ইউটিউব চ্যানেল এ দেশে আছে। ভারতে এতগুলো অফিস থাকার কারণে তাঁরা নিয়মিত ইউটিউব ফ্যানফেস্ট আয়োজন করতে পারেন, তাঁদের ক্রিয়েটররা খুব সহজেই ইউটিউবের সঙ্গে মিলে ‘ইউটিউব অরিজিনালস’ পাবলিশ করতে পারেন। এ ছাড়া আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, যেটা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে তাঁদের অন্য দেশের ইউটিউবারদের থেকে এগিয়ে রাখে।

অফিসে ঢুকতেই একটা অটোমেটেড টাচ স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ও আমার সহধর্মিণী (পূর্ণতা) ভেতরে ঢোকার টোকেন সংগ্রহ করলাম। কার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি, কখন দেখা করব, সব আগে থেকেই দেওয়া ছিল। আমাদের যোগাযোগ হয়েছিল আবু সালেহ ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি ইউটিউব দক্ষিণ এশিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ম্যানেজার। দরজা দিয়ে ঢোকামাত্রই প্রায় তিনতলা সমান উঁচু একটা স্ক্রিন দেখলাম। এখানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব (যেমন ঈদুল ফিতর, চীনা নববর্ষ) হলে সেটা নিয়ে শুভেচ্ছামূলক লেখা থাকে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষ বা কোম্পানির প্রতিনিধি যখন অফিসে আসেন, তখন তাঁদের এর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়।

ঘুরে ঘুরে কিছু ঘর আমাদের দেখানো হলো, ইউটিউবের কোডাররা যেখানে বসে কাজ করেন। যদিও ভেতরে ঢোকা নিষেধ। যা বুঝলাম, ইউটিউবের অ্যালগরিদম ও বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত দিকটাই এখানে মূলত দেখা হয়। পাশেই একটি বড় ম্যুরাল। গুগলের লোগোসহ সুন্দর ল্যান্ডস্কেপের কাজ। ম্যুরালটা নাকি বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে বদলে যায়। অর্থাৎ বাইরে সূর্যালোক বেশি থাকলে ম্যুরালটাও উজ্জ্বল হয়ে যায়। বাইরে মেঘলা থাকলে ম্যুরালটাও থাকে অন্ধকার। কী সুন্দর আইডিয়া!

অফিসে ঘুমানোর জায়গা!

সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই জায়গায় জায়গায় অনেকগুলো ছোট রান্নাঘর আর কফি কর্নার। সত্যি বলতে প্রথম দেখায় এটাকে অফিস কম, ফুডকোর্ট বেশি মনে হতে পারে। গুগল তাদের কর্মীদের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বেশ সজাগ। এক জায়গায় আমরা নিজ হাতে আপেল আর কমলা মিশিয়ে জুস বানিয়ে খেলাম। এভাবে নাকি সবাই নিজের পছন্দমতো জুস বানিয়ে খেতে পারে। আন্তর্জাতিক, এশীয়, জাপানি— এ রকমভাবে খাবারের জায়গাগুলো ভাগ করা। সবকিছুই বিনা মূল্যে, কিনে খেতে হয় না।

করিডর দিয়ে এগিয়ে একটি টিভি স্ক্রিন দেখলাম, যেখানে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ইউটিউবারদের ভিডিও তুলে ধরা হয়। আমাদের দেশের ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’ ও ‘নাদির অন দ্য গো’ চ্যানেলও এখানে দেখানো হয়েছিল।

এ ছাড়া রয়েছে ‘ন্যাপ রুম’। চাইলেই যে কেউ অফিসে কাজের ফাঁকে এই ঘরে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন। আছে ‘মাল্টিফেইথ রুম’, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজের মতো উপাসনা করতে পারেন। পাশেই একটা ছাদবাগান। দেখলে মনে হবে আস্ত জঙ্গল। ইউটিউব সিঙ্গাপুরের প্রধান সিদ্ধার্থ শ্রীনিবাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম, বাংলাদেশের ইউটিউব-জগতের নানা বিষয় নিয়ে আলাপ হলো। পরে একসঙ্গে দুপুরের খাবার শেষে অফিস থেকে বিদায় নিলাম।

লেখক: এনায়েত চৌধুরী, প্রভাষক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর