যে ৭ কাজে নিজের শক্তি-সময় অপচয় করবেন না
আয়, ব্যয় ও অপচয়ের প্রশ্ন এলেই আমাদের সামনে ভাসতে থাকে টাকার হিসাব–নিকাশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টাকার গুরুত্ব জেনে আসা আমরা তাই টাকা খরচ করি খুব বুঝেশুনে। অথচ কথাটা যে আমাদের শক্তি ও সময়ের বেলাতেও খাটে, সেই কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই! টাকার ব্যয় নিয়ে আমরা যতটা চিন্তিত, নিজেদের শক্তি ও সময় নিয়ে ততটা নয়। আসুন দেখে নিই এমন সাত জায়গা, যেখানে আমরা নিজের অজান্তেই অনেকখানি শক্তি নষ্ট করে ফেলি।
অপ্রয়োজনীয় কাজ নিজের কাঁধে নেওয়া
এটা হয় মূলত আমাদের ‘না’ বলতে না পারার কারণে। আমরা প্রায়ই এমন সব কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলি, যেগুলো আমাদের কোনো কাজে আসে না। অথচ সেখানে আমাদের শক্তি খরচ করে ফেলি অনেকখানি। তাই যেকোনো কাজ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই কাজ আপনার বর্তমান বা ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে কোনো কাজে আসবে কি না। উত্তর যদি ‘না’ হয়, তবে এসব কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলুন।
যেকোনো কাজ নিখুঁতভাবে করতে চাওয়া
মিস্টার পারফেকশনিস্ট হওয়ার এই বাতিককে সব সময়ই অবশ্য খারাপ বলার সুযোগ নেই। কিন্তু কখনো কখনো নিজের স্বার্থেই আপনার এই খুঁতখুঁতে মনোভাব থেকে সরে আসা উচিত। বিশেষ করে যে অনানুষ্ঠানিক কাজগুলোতে ছোটখাটো কমতি থাকলেও সমস্যা হয় না, সেই কাজগুলোর পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ও শক্তি খরচ করার কোনো মানে আছে?
অতীত নিয়ে আফসোস
অতীত নিয়ে আফসোস করা মানুষের আরেকটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মার্কিনদের ওপর করা এক জরিপে পাওয়া যায়, ৮২ শতাংশ আমেরিকানই তাঁদের অতীত নিয়ে আফসোস করেন। মাঝেমধ্যে অতীতের কথা মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু আপনি যদি দিনের বেশির ভাগ সময়ই অতীতে ‘কী করলে কী হতো’ ধরনের চিন্তা করে কাটিয়ে দেন, সব ইতিবাচক শক্তি অতীতের পেছনেই ব্যয় করেন, তবে আপনি কীভাবে বর্তমানকে সামনে এগিয়ে নেবেন?
সবাইকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা
পৃথিবীতে কেউ কোনো দিন সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি, পারবেও না। সবার কাছে সব সময়ই ‘বাহবা’ পাওয়ার তাড়না থেকেই মূলত এমন ভুল আমরা করে থাকি। শুধু অন্যদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য এমন সব কাজে আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই, যেগুলো আমাদের সময় ও শক্তি দুটিই নষ্ট করে। ফলাফল? গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের আর করা হয়ে ওঠে না।
নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করা
আমাদের আরও একটা শক্তি খরচের জায়গা হলো, দুশ্চিন্তা করা। এমন সব বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণত দুশ্চিন্তা করি, যে বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই, চাইলেও আমরা এসব বিষয়ে কোনো কাজ করতে পারব না। কাজেই এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিন্তা ও কাল্পনিক বাজে পরিস্থিতির ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকা আপনার সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু করবে না। শান্ত থাকুন, ধৈর্যশীল হোন এবং নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়গুলো সহজভাবে গ্রহণ করতে শিখুন।
নিজের সঙ্গে নেতিবাচক কথোপকথন
না, আপনি একা নন। বরং বহু মানুষই এ কাজ করে থাকে। সময় পেলেই নিজের মনের সঙ্গে নানা নেতিবাচক কথাবার্তা বলতে থাকে। ফলে এই নেতিবাচকতা প্রভাব ফেলে আপনার শরীর ও মনের ওপর। কাজ করার অনুপ্রেরণা পাওয়াও তখন আপনার জন্য হয়ে পড়ে অনেক বেশি কঠিন। কাজেই এমন অভ্যাস ঠিক করে ফেলুন। একান্তই নিজের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস যদি ছাড়তেই না পারেন, তবে ইতিবাচক কথা বলুন। স্বপ্ন আর আশার গল্প করুন নিজের সঙ্গে। নেতিবাচকতার ফাঁদে পড়ে নিজের জীবনীশক্তি ক্ষয় করা নিশ্চয়ই কোনো কাজের কথা নয়?
নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগে আমরা নিজেরা যতটা না সফল হতে চাই, তার চেয়ে বেশি সফলতা অন্যদের দেখাতে চাই। ফলাফল? প্রদর্শনীর এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যাওয়া। সব সময় কে আপনাকে ছাড়িয়ে গেল, আপনি কাকে ছাড়িয়ে গেলেন, সেটা নিয়ে পেরেশানির মধ্যে থাকা। এসব করতে গিয়ে হতাশা চলে আসে, কমতে থাকে কাজ করার শক্তি। কাজেই অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার এই ভয়ংকর খেলা থেকে বের হয়ে আসুন। প্রতিযোগিতা যদি করতেই হয়, নিজের সঙ্গে করুন। এতে একদিকে যেমন হতাশা আসার সুযোগ পাবেন না, তেমনি বন্ধ হয়ে যাবে অপ্রয়োজনীয় শক্তির অপচয়ের পথও।
অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ওয়ারেন বাফেটের একটা উক্তি খুব জনপ্রিয়—‘আপনি যদি এখন প্রয়োজনের চেয়ে শৌখিনতাকে প্রাধান্য দিয়ে বেশি ক্রয় করতে থাকেন, তবে একদিন আপনাকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোও বিক্রি করে দিতে হবে।’
শক্তি আর সময়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। আপনি যদি আপনার শক্তির সুষম বিন্যাস না করতে পারেন, প্রয়োজনীয় কাজে সময় ও শক্তির বিনিয়োগ করতে না পারেন, তবে আপনার পক্ষে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে যথেষ্ট শক্তি খরচ করা সম্ভব হবে না। আপনার জীবনের সফলতার জন্যই তাই ওপরের সাতটি জায়গা আপনার সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।
তথ্যসূত্র: মিডিয়াম, দ্য লাইফস্টাইল টাইম