কলকাতা পর্ব তো দারুণ হলো…
আমি অভিভূত। কলকাতাবাসী এই অনুষ্ঠানে তাঁদের সবটা উজাড় করে দিয়েছেন। তিলোত্তমা কলকাতা আমাকে যা দিল, এই প্রাপ্তি কোনো দিন ভুলব না।
প্রথম আলো :
সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে কলকাতায় কেন এই আয়োজন করলেন?
উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে আমি ‘শতকণ্ঠে বাংলা গান’ অনুষ্ঠানটি করেছি। এরপর মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতায় গিয়ে অনুষ্ঠানটি করব। গত বছর ঢাকায় করার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় সেটি করা হয়নি। কলকাতায় সেই সুযোগটা তৈরি হয়ে গেল।
কীভাবে তৈরি হলো?
মাস ছয়েক আগে কলকাতার বাংলা নাটক ডটকমের অমিতাভ ভট্টাচার্য তাঁদের ‘সুরজাহা’ নামের অনুষ্ঠানে গান গাইতে আমাকে আমন্ত্রণ জানান। তাঁর আমন্ত্রণে আমি রাজিও হই। তারপরই মনে হলো, কলকাতায় যখন যাচ্ছি, সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে জ্যামিং (একত্র হওয়া) করি। এই ভেবে ফেসবুকে পোস্ট দিই। আমার ধারণা ছিল ২৫ থেকে ৩০ জনকে পাব। কিন্তু সেই পোস্টে অভূতপূর্ব সাড়া পেলাম। শত শত মানুষ পোস্ট শেয়ার করলেন, গান গাওয়ার আগ্রহের কথা কমেন্ট করে জানালেন। তারপর তো আর মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই।
প্রথম আলো :
তারপর চলে এলেন…
২৬ জানুয়ারি কলকাতায় যাই। সাতটি দেশ থেকে আমার বন্ধুরা আসে নিজেদের খরচে। কলকাতার যারা যুক্ত হয়েছে, তারাও নিজের খরচে এসে যুক্ত হয়। ২৭ থেকে ৩০ জানুয়ারি ‘শতকণ্ঠে বাংলা গান’-এর মহড়া করি। কলকাতা বইমেলায় প্রথম অনুষ্ঠান করি ৩১ জানুয়ারি। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের মঞ্চে সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ মিলে গান করেছি। ১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার মহাজাতি সদন হলে ছিল আমাদের বিদায়ী অনুষ্ঠান। সেদিন মঞ্চে এসে কথা বলেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
আপনাদের সহায়তা করল কে?
অনেকেই। তবে এত বড় আয়োজনের পেছনে কোনো সংগঠন ছিল না, কমিটি ছিল না, এমনকি আমাদের অনুষ্ঠানের কোনো সঞ্চালকও ছিলেন না। আমি অনেক সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এক হাজার টি-শার্ট চেয়েছি, কয়েক শ শাড়ি চেয়েছি, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী সেগুলো দিয়েছেন; কিন্তু কোনো অর্থ নিইনি।
প্রথম আলো :
‘শতকণ্ঠে বাংলা গান’-এর উদ্যোগ প্রথম কবে নিলেন?
আমি ছোটবেলা থেকেই ঝাঁকে চলতে পছন্দ করি। খেলাঘর, উদীচী শিল্পগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেই তাপস আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসছি, সেটা আমি মানতে পারতাম না। নিজের দায়মুক্তির জায়গা থেকে ২০০৩ সালে শতকণ্ঠে গান করার উদ্যোগটা নিই। এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) ক্রেসগি অডিটরিয়ামে শতকণ্ঠে হাজার বছরের বাংলা গানের একটা অনুষ্ঠান করে ‘আমরা কজন’। পৌনে চার ঘণ্টার অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে দুই বাংলার বাংলাভাষী ১৪৬ জন ছেলেমেয়ে গান গায়।
আপনার পেশা তো গান নয়…
আমি গান ভালোবাসি। গান আমার পেশা নয়। ১৯৯১ সালে আমি দ্বিতীয় মাস্টার্স করতে ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে আসি। তারপর আমি ব্যবসা করতাম। একটি রেস্তোরাঁর মালিকানায় অংশী ছিলাম। রেস্তোরাঁ ব্যবসা ২৪ ঘণ্টা লেগে থাকার কাজ। সাত বছর পর একদিন মনে হলো, এই কাজ আমার জন্য নয়। এরপরই গান করব বলে সেই ব্যবসা থেকে সরে আসি। এখন আমি আমার শহর প্রভিডেন্সে মেয়রের অফিসে হিসাবরক্ষক। ৩২ বছর প্রবাসে থাকি, তবে বাংলাদেশ আমার বুকে বাস করে।
প্রথম আলো :
কলকাতা পর্ব তো শেষ হচ্ছে, এরপর?
কলকাতা পর্ব শেষ করে আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছি। এরপর আমরা হয় নিউইয়র্ক পর্ব করব, নয়তো ঢাকা পর্ব করব। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে কয়েকটি সংগঠন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।