বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষে আবার ‘চাকরির পড়ালেখা’ কেন

‘সুযোগ পেলে লেখাপড়ার যে নিয়ম বদলে দিতাম’ — এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। পড়ুন নির্বাচিত লেখাগুলোর মধ্য থেকে একটি।

একাডেমিক শিক্ষাই যদি চাকরির ভিত গড়ে দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই নিজ বিষয়ের পড়ালেখাকে গুরুত্ব দেবেন
ছবি: প্রথম আলো

ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, বিজ্ঞান বিভাগে পড়লে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়। বাণিজ্যে পড়লে ব্যাংকার, মানবিকে পড়লে শিক্ষক কিংবা বিসিএস ক্যাডার...। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখছি, চিত্রটা আদতে উল্টো। বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রিগুলোর ওপর নির্ভর করে চাকরির সুযোগ নেই বললেই চলে।

আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। স্নাতক শেষে আমি যেভাবে চাকরির প্রস্তুতি নেব, ঠিক একই প্রস্তুতি নেবেন বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা। এটা খুবই দুঃখজনক যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক চাকরির সুযোগ ও পরিবেশ দেশে নেই। আমাদের দেশে কেন এই অবস্থা তৈরি হলো? যিনি যে বিষয়ে পড়বেন, তিনি সেই বিষয় সংশ্লিষ্ট চাকরি পাবেন না—তাহলে শিক্ষা খাতে সরকারের এত খরচ ঠিক কী কাজে লাগছে?

বিষয়ভিত্তিক চাকরি না পেলে একজন শিক্ষার্থীর নিজ বিভাগের পড়াশোনার যে মৌলিক জ্ঞান বা ভিত্তি, একটা সময় এর আর অস্তিত্ব থাকে না। কেননা, শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগীয় পড়াশোনাকে অবহেলা করেন।

সাদিয়া ইসলাম, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

কাজেই আমি মনে করি, যদি এমন একটা নীতি হতো, কেউ তাঁর অনুষদের বাইরে অন্য বিষয় চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবেন না, তাহলে সমাজে ‘চাকরির পড়া’ নামে কিছু থাকত না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো চার থেকে ছয় বছর আমি পড়ালেখা করছি, ডিগ্রি নিচ্ছি। তাহলে চাকরির জন্য আমাকে আবার নতুন করে কেন পড়তে হবে? একাডেমিক শিক্ষাই যদি চাকরির ভিত গড়ে দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই নিজ বিষয়ের পড়ালেখাকে গুরুত্ব দেবেন।

সাধারণ জ্ঞান মানুষকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু বর্তমানে এটাই হয়ে গেছে চাকরি পাওয়ার হাতিয়ার। যদি বিষয়ভিত্তিক চাকরির সুযোগ থাকত, তাহলে সরকারের ব্যয় কাজে লাগত। গবেষক তৈরি হতো, একেকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষায়িত লোক আরও বেশি পেতাম। তাই আমি সুযোগ পেলে যে বিষয়ে পড়ালেখা, সে বিষয়ে চাকরির পথ তৈরি করতাম।

পাঠক, সুযোগ পেলে আপনি লেখাপড়ার কোন নিয়মটা বদলে দিতেন? লিখে পাঠাতে পারেন এই ইমেইলে: [email protected]