ছেলেবেলার কোনো স্মৃতি...
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: বাবার কথাই বলব। বাবা আমাদের আশপাশের সব গরিব শিল্পীদের টুলের ওপর বসিয়ে তাঁদের গান শুনতেন। শুনে সম্মানী দিতেন। তাঁদের সঙ্গে ‘আপনি’ করে কথা বলতেন। যাদের মেথরানী বলা হয়, তাদের ‘মা’ ডাকতেন। সব মানুষের জন্য ভালোবাসার শিক্ষা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি।
প্রথম আলো :
বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: আমার জন্ম এই বাংলার বরিশালে। বাংলাদেশ আমার মূল পিতৃভূমি। ভালো তো লাগবেই।
আপনার গানে মানুষই মূল জায়গায়...
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: মানুষই আমার ঈশ্বর। মানুষের কাছেই আমি ঋণী। মানুষই সবকিছু উত্পাদন করে। উত্পাদনের সঙ্গে যুক্ত পৃথিবীর ৮৫ ভাগ মানুষ। এই ৮৫ ভাগ মানুষ উত্পাদন বন্ধ করে দিলে আমরা বাঁচতাম না। এখন বাকি ১৫ ভাগ মানুষ, যারা ওই ৮৫ ভাগ মানুষের ওপর নির্ভরশীল। তারা বলছে, ওই ৮৫ ভাগকে তাদের মধ্যে আনতে হবে। অথচ মূল ভাবনাটা হওয়া উচিত, ওই ৮৫ ভাগ মানুষ আমাদের ১৫ ভাগকে রাখবে কি না।
প্রথম আলো :
গণসংগীতকে কীভাবে দেখেন?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: গণসংগীত হচ্ছে ভক্তিগীতিরই একটা রূপ। জনতার বিশাল শক্তির কাছে আত্মোত্সর্গ করেই সংগীত করতে হয়।
কোনো অসাধারণ স্মৃতির কথা বলবেন?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: স্কুলে নাটক হতো। সিক্সে পড়ার সময় নাটকে ‘বিমলের গান’ ছিল। সে গানটির সুর দিয়েছি এবং গেয়েছি। সুরটা আপনাআপনি এসেছিল মাথায়। সেই গান গেয়ে এক ক্লাসমেটের কাছ থেকে রুপার মেডেল পেয়েছিলাম। এরপর কত সম্মান, কত মেডেল পেলাম, কিন্তু সেই প্রথম মেডেলের কথা ভুলতে পারি না।
প্রথম আলো :
কাকে গুরু বলে মানেন?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: প্রতিটি মুহূর্তে আমি মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছি। মানুষই আমার গুরু।
প্রথম আলো :
গণসংগীত করতে হলে কোন ধরনের প্রস্তুতি দরকার?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: আমি লেনিনের বইয়ের এবিসিডি জানি না। এর মানে এই নয়, আমার মানুষকে ভালোবাসার অধিকার নেই। ওই মৌলবাদীপনার কোনো সুযোগ নেই। লেনিন না পড়েও কেউ দেশপ্রেমিক হতে পারেন, মানুষকে ভালোবাসতে পারেন এবং গণসংগীত গাইতে পারেন।
আপনি সচরাচর গান গাওয়ার সময় বাদ্য ব্যবহার করেন না। আপনি কি বাদ্যের বিরুদ্ধে?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: বাজনার বিরুদ্ধে আমি নই। বব ডিলানের গান আমার দারুণ ভালো লাগে। তবে আমি স্বচ্ছন্দবোধ করি বাদ্য ছাড়া। কোমল কণ্ঠে গণসংগীত হয়, সে ধারণাও দেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রথম আলো :
যা একদম পছন্দ করেন না—
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: ভণ্ডামি।
প্রথম আলো :
শিশুদের জন্য আপনি অনেক কিছুই করছেন...
প্রতুল মুখোপাধ্যায়: সুকুমার রায়ের হ-য-ব-র-ল নিয়ে সুর করে একটি অ্যালবাম করেছি ২০০৪ সালে। লেখালেখি করি শিশুদের জন্য। এ ছাড়া কবিদের কবিতায় সুর দিতে পছন্দ করি। (ঈষৎ সংক্ষেপিত)
সাক্ষাৎকার: মেহেদী মাসুদ