‘দ্যাটস আ ব্যাড শট’—আমরা কি এ কথা বলা বন্ধ করতে পারি?

ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বেন স্টোকস। গত জুনে তাঁর লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে প্লেয়ার্স ট্রিবিউন ডটকম। পড়ুন নির্বাচিত অংশ।

বেন স্টোকস
ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে একটা অনুরোধ করতে চাই। এই অনুরোধ কোচ, ক্লাবের ক্যাপ্টেন, ধারাভাষ্যকার, ক্রিকেটের ভক্ত বা দর্শক—সবার কাছে।

‘দ্যাটস আ ব্যাড শট (বাজে একটা শট)’—এ কথাটা বলা কি আমরা বন্ধ করতে পারি?

আমি জানি, কেন আমরা সবাই এ কথায় অভ্যস্ত। ক্রিকেট কখনো কখনো একটু অদ্ভুত। এই খেলা ভীষণ জটিলও। প্রতিটি পদক্ষেপকেই বিচার করা হয় এর ফলাফল দিয়ে। একজন ব্যাটসম্যান যদি বড় শট খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন, তখনই আমরা চট করে বলে বসি, ‘শটটা বাজে ছিল।’

এ কথা আমি বহুবার শুনেছি।

‘ওহ, বাজে শট! কেন যে সে এই শটটা খেলতে গেল?’

কিন্তু সত্যিই কি শটটা বাজে?

শট তখনই বাজে হয়, যখন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান। ভিন্ন কোনো বলে একই শট খেলে আপনি হয়তো বল সীমানার ওপারে পাঠিয়ে দেবেন। ভুল করার বা আউট হওয়ার ভয় আমাদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে। এবং ধীরে ধীরে ভয়টা বাড়ে।

আরও পড়ুন

একটু বোধ হয় বেশি বলে ফেললাম। কিন্তু ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে আমরা এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই একটা নতুন চর্চা করার চেষ্টা করছি। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছি, যেখানে দলের সবাই নির্ভয়ে খেলতে পারে। আমি জানি সব সময় এটা সম্ভব হয় না, কিন্তু সক্ষমতাটা আমাদের আছে।

আমরা চাই আমাদের খেলোয়াড়দের মনে এই আত্মবিশ্বাসটা থাকুক: তোমার কাজে সারা দেশের মধ্যে তুমি সেরা বলেই তোমাকে নেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুই যেন তোমার সামনে বাধা না হয়। নিজেকে প্রকাশ করো। দেখাও, তুমি কী পারো। ব্যর্থ হতেই পারো। তাতে কি? অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে আমি তোমার পিণ্ডি চটকাব না।

বেন স্টোকস চান, খেলোয়াড়রা যেন মাঠে নির্ভয়ে খেলতে পারেন
ছবি: রয়টার্স

কথাটাকে আবার ভুলভাবে ব্যাখ্যা করবেন না। বলছি পরাজয়ে কিছু আসে–যায় না, তার মানে এই নয় যে হেরে যেতে আমার খারাপ লাগে না। আমি পরাজয় ঘৃণা করি। দলের সবাই করে। আমরা সবাই প্রতিটি ম্যাচ জিততে চাই। কিন্তু সফল হওয়ার প্রথম শর্তই হলো তোমাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। ক্রিজে দাঁড়িয়ে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। ভয় না পাওয়া মানে তোমার কিছুতে কিছু যায়–আসে না। কিন্তু ওই মুহূর্তটাতে আর সব ভুলে নিজের সেরাটা দেওয়াই মুখ্য।

ক্রিকেট খেলাটা খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এতটাই দ্রুত, আগে যা কখনো হয়নি। টি–টোয়েন্টি, হানড্রেডের (১০০ বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট) মতো ফরম্যাটগুলো এত টাকা আর সুযোগের হাতছানি দিচ্ছে, ১৫ বছর আগেও যা কেউ ভাবতে পারেনি।

আমি যখন বড় হয়েছি, তখন টেস্ট ম্যাচে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে বড় আর কিছু ছিল না। এখনো আমি এটাই মনে করি। তার মানে কিন্তু এই না যে আমি পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। আমি জানি, ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার খুব অল্প দিনের। নিজের এবং পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটা খুব স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন

এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়ে আমাদের বরং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত। হ্যাঁ, এ–যাত্রায় আমরা হয়তো অনেক মেধাবী খেলোয়াড়কে হারাব। খেলার কোন ধরনটা তোমাকে রোমাঞ্চিত করে, অনুপ্রাণিত করে—টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই প্রশ্নের উত্তর একজন খেলোয়াড়ের ভেতর থেকেই আসতে হবে।

আমরা ড্রেসিংরুমে একটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে চাই। খেলোয়াড়েরা যেন নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারে। কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘দলে ঢুকতে হলে আমাকে কী করতে হবে,’ অধিনায়ক হিসেবে আমি ব্যাপারটা খুব উপভোগ করি। বাইরে থেকে আমাদের দলের পরিবেশটা খুব আনন্দময় মনে হয় বলেই তো নতুনেরা এর অংশ হতে চায়। এ জন্য ব্রেন্ডনকে (ম্যাককালাম) কৃতিত্ব দিতেই হয়। দলের প্রধান কোচ হিসেবে এমন একটা পরিবেশ তিনিই গড়ে তুলেছেন। ব্রেন্ডন সব সময় বলেন, “আমরা এখানে এসেছি যেন সুযোগ থাকতে থাকতেই কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে যেতে পারি। এই জায়গায় তুমি কিন্তু খুব বেশি দিন থাকতে পারবে না। আর দিন শেষে ওই স্মৃতিটাই সব।”’

আমরা চাই খেলোয়াড়, ভক্ত, দর্শক—সবাই খেলাটা উপভোগ করুক। সবকিছুর ওপরে এটাই সত্য। হ্যাঁ, ক্রিকেটা একটা খেলা, এর সঙ্গে অনেক কঠোর পরিশ্রম জড়িত, কিন্তু দিন শেষে এটা একধরনের বিনোদন।

হাজারো মানুষ আমাদের খেলা দেখতে আসেন, লাখো মানুষ টিভির সামনে বসে খেলা দেখেন, কারণ তাঁরা বিনোদিত হতে চান। হ্যাঁ, আমরা নিশ্চয়ই জিততে চাই। কিন্তু সঙ্গে এ-ও চাই যেন যাঁরা নিজেদের অর্থ ও সময় খরচ করে খেলা দেখছেন, তাঁরা যেন বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলতে পারেন, ‘বাহ! দারুণ একটা দিন গেল।’

ইংরেজি থেকে অনূদিত