বাড়ি রং করার কথা ভাবছেন? তাহলে এই লেখা আপনার জন্য

বাড়ি বানানোর পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে একজন বাড়ির মালিক সব থেকে বেশি আনন্দ পান বাড়ির রং নির্বাচন ও রং করার সময়। এ অনুভূতিকে আরও জোরদার করতে কোন বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, জানাচ্ছেন জাহিদুল হক

সাদাকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। রং নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলে চোখ বন্ধ করে সাদা বেছে নেওয়া যেতে পারে।
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাড়ি শুধু কাঠামোগতভাবে সুন্দর হলেই হবে না, ভেতর আর বাইরের রংও হতে হবে নজরকাড়া। স্থাপত্যবিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো বাড়ি আলোকিত করে তোলার অন্যতম সহজ উপায় হলো রং। কিন্তু রং নির্বাচন করতে হবে আবহাওয়া, বাড়ির নকশা ও অবস্থান বিবেচনা করে।

যত কম, তত ভালো

রং নিয়ে অনেকেরই একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকেই মনে করেন, যত বেশি রং, তত বেশি সুন্দর। বিষয়টি আসলে তা নয়, একসঙ্গে অনেক রকমের রং শেষমেশ ঘিঞ্জি ভাব তৈরি করে। বিষয়টি যতটা সম্ভব সহজ আর সাধারণ রাখাই ভালো। যখন বাড়ির বাইরের রং হবে, তখন বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। বাইরের দেয়ালের জন্য একটি বা দুটি রং বেছে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি মনে হয়, একটি রং দেখতে একঘেয়ে লাগছে, তাহলে একই রঙের বিভিন্ন শেডও ব্যবহার করা যেতে পারে।

রং বাছাই

রং পছন্দ করার সময় প্রথমে একটি রঙে আটকে না থেকে অনেক রকমের বিকল্প খুঁজে দেখা উচিত। এরপর আবহাওয়া ও চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে মানাবে, এমন রং খুঁজে নিয়ে এক এক করে মিলিয়ে নিতে হবে। ধীরে ধীরে তালিকা ছোট করে বিশেষ পছন্দের দুই বা তিনটি রঙে মনোনিবেশ করতে হবে। সবশেষে সমন্বয় নিয়ে ভাবতে হবে। বাইরের দেয়ালে কালো বা গাঢ় রং ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলোতে ধুলাবালু জমলে বোঝা যায় বেশি।

বাড়ির অবস্থান ও সূর্যের আলো

শুধু দোকানের ক্যাটালগ দেখে দেয়ালে রং নির্বাচন করাটা ভুল হবে। কারণ, দেয়ালের ওপর সূর্যের আলো পড়লে রঙের শেড পরিবর্তিত হতে পারে। তাই রং করার শেষে কেমন দেখতে হতে পারে, আগেই সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে নিতে হবে। এ জন্য কয়েকটি রং ও শেডের নমুনা দেয়ালে লাগিয়ে দেখে নেওয়া যেতে পারে।

রং নির্বাচন করতে হবে আবহাওয়া, বাড়ির নকশা ও অবস্থান বিবেচনা করে।
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাড়ির বাইরের রং পছন্দ করার সময় বাড়ির অবস্থান ও চারপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিতে হবে। কারণ, সবাই চান নিজের বাড়িটিকে আলাদা দেখাক। মনে রাখতে হবে, আলাদা মানেই বেমানান নয়। এ জন্য রং নির্বাচনের আগে বাড়ির চারপাশের পরিবেশ, পটভূমির মেজাজ ও জলবায়ু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।

 স্থায়িত্ব

বাইরের দেয়ালের রং নির্বাচনে সেটার স্থায়িত্ব নিয়েও ভাবতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় অনেকে এড়িয়ে যান। রং যা–ই হোক না কেন, এটি যেন টেকসই হয় আর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যেন কম পড়ে—এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণত স্যাটিন ও এগশেল পেইন্টের স্থায়িত্ব বেশি। সহজে এগুলো পরিষ্কার করা যায়। পাশাপাশি এ ধরনের রঙের ফিনিশিংও ভালো।

এবার দেখে নেওয়া যাক চলতি বছরের রঙের ধারা

 সাদার সঙ্গে পিচ

বাড়ির বাইরের দেয়ালের জন্য চলতি বছরের সেরা সমন্বয় হচ্ছে পিচ রঙে সাদা হাইলাইটার। অর্থাৎ মূল রং হবে পিচ এবং জানালাসহ অন্যান্য জায়গায় সাদা রঙের হাইলাইটার।

 ক্রিম ও বাদামি

দুটি রং বাড়ির বাইরের জন্য সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং মার্জিত সমন্বয়। আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের পরিবেশের সঙ্গে এটি বেশি মানানসই।

নীল ও সাদাকে বলা হয় নিরাপদ আর ক্ল্যাসিক সমন্বয়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

 নীল ও সাদা

সব পরিবেশের সঙ্গে মানায় বলে নীল ও সাদাকে বলা হয় নিরাপদ আর ক্ল্যাসিক সমন্বয়। বলা হয়, নীল রঙের বিভিন্ন শেড বাড়ির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অংশ ইতিবাচকভাবে তুলে ধরে। আবার বাড়ির বাইরে নীল ও সাদার সংমিশ্রণ চোখের জন্য প্রশান্তি ও আনন্দদায়ক।

শুধু সাদা

সাদাকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। রং নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলে চোখ বন্ধ করে সাদা বেছে নেওয়া যেতে পারে। সাদার বিভিন্ন শেডও এখন ট্রেন্ডি।

ধূসর রং

বাড়ির বাইরের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত রং হলো ধূসর। ধূসরের হালকা ও গাঢ় হাজারো শেড রয়েছে। এসব রঙের আলাদা আবেদন রয়েছে।

বাহারি ফিরোজা

ফিরোজা হলো সবুজ-নীলের একধরনের মিশ্রণ। এ ধরনের রং সতেজ অনুভূতি জাগায়। বাড়ির বাইরের রং হিসেবে এটি একটি দুর্দান্ত বিকল্প। আশপাশের যেকোনো বাড়ি থেকে আপনার বাড়িটিকে আলাদা করে তুলবে।

প্রাকৃতিক সবুজ বা মিন্ট গ্রিন

সবুজ একটি সতেজ প্রাকৃতিক রং। এই রং চারপাশের প্রকৃতির সঙ্গে বাড়ির একটি সমন্বয় তৈরি করে। আর কেউ যদি বাড়ির মধ্যে গ্রামীণ আবহ তৈরি করতে চান, তবে কুল মিন্ট গ্রিন রং ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, রংটিতে মন ভালো করার উষ্ণ আবেশ রয়েছে।