ধরেই নিয়েছিলাম, মোটরসাইকেলটা নিশ্চয় আমিই পাচ্ছি

আজ জুন মাসের তৃতীয় রোববার, বাবা দিবস। এ উপলক্ষে আমার পাঠকের কাছে আহ্বান করেছিলাম ‘বাবার কাছে খোলা চিঠি’। এই চিঠিটি লিখেছেন বিত্তজিৎ দেব

বাবার সঙ্গে বিত্তজিৎ দেব
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বাবা,

মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা? সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার ‘তোমার মতো হওয়া’ খেলার শুরু। তোমার শার্ট পরে সারা বাড়ি ঘুরঘুর করতাম। প্যান্টও পরার চেষ্টা করতাম। কিন্তু প্যান্টের নিচ দিয়ে কেন যে আমার পা বেরোয় না, সেটাই মনে হতো রহস্য! তোমার অফিসের জুতাও আমার পরা চাই। তোমার মতো শেভ করতে গিয়ে একবার গালও কেটে ফেলেছিলাম। বকেছিলে খুব। পরে আবার কাছে টেনে আদরও করেছ, কিন্তু আমি গাল ফুলিয়ে বসে ছিলাম।

একবার তোমার সঙ্গে বাজারে গেলাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ জুতার ফিতা খুলে গেল। নিচু হয়ে বসে ফিতা বাঁধা শেষ করে দাঁড়িয়েই দেখি তুমি নেই। কাঁদো কাঁদো হয়ে গিয়েছিলাম। ঝাপসা চোখে যখন দেখলাম, তোমার মতো কেউ একজন আমাকে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে আসছে, প্রাণ ফিরে পেয়েছিলাম!

আরেকটা দিনের কথাও আমার স্মৃতিতে বেশ টাটকা। বয়স তখন পাঁচ কি ছয়, গিয়েছিলাম বিজয় দিবসের মেলায়। সেখানেই প্রথম র‍্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করতে দেখি। প্রথম পুরস্কার ছিল নীল রঙের একটা মোটরসাইকেল। তোমাকে দিয়ে টিকিট কিনিয়ে আমি ধরেই নিয়েছিলাম, মোটরসাইকেলটা নিশ্চয় আমিই পাচ্ছি। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে বসে ছিলাম, বাবা মোটরসাইকেল নিয়ে আসবে। বাধ্য হয়ে তুমি সেই রাতের বেলা আবার মেলায় গিয়েছিলে র‍্যাফেল ড্রয়ের ফলাফল জানতে। শেষমেশ কী বলে আমাকে বুঝিয়েছিলে জানি না, কিন্তু পরদিন ঘুম থেকে উঠেই মোটরসাইকেলের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম।

স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াতে কী যে ভালো লাগে! মা বলে, খুব ছোটবেলায় তোমাকে কাছে পেলে আমি দিনদুনিয়া সব ভুলে যেতাম। কেন যেন মনে হয়, এখনো আমি তেমনই আছি। তোমাকে খুব ভালোবাসি বাবা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন