বিষয় ভিন্ন হলেও একসঙ্গেই পড়েছি

স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়—শিক্ষাজীবনের একেকটা ধাপ। নতুন নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়। তবে একই বন্ধুর সঙ্গে জীবনের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করার অভিজ্ঞতাও কারও কারও আছে। তাঁদের বন্ধুত্বটা কেমন? এই বিষয়েই পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার, বন্ধু দিবসে পাঠকের লেখা নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

স্কুলজীবন থেকে শুরু করে বুয়েটেও তাঁরা পড়েছেন একসঙ্গে
ছবি: সংগৃহীত

জানুয়ারি ২০০৯। নতুন স্কুল, নতুন ক্লাস। রুমভর্তি নতুন মুখের সামনে যখন পা রেখেছি, তখনো জানতাম না ওই ক্লাস রুমটাতেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মানুষের দেখা পাব। টিফিন ব্রেকে একসঙ্গে বসে টিফিন খাওয়া থেকে শুরু হয়েছিল, আজ আমরা স্কুল, কলেজ পেরিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশলী হয়ে কর্মজীবন শুরু করতে যাচ্ছি। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হওয়া এই আমাদের এখনো প্রতিদিনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনা একে অপরকে না বলা পর্যন্ত শান্তি হয় না। সপ্তাহে অন্তত এক দিন দেখা না হলে আমাদের ভালো লাগে না।

আরও পড়ুন

যখন ছোট ছিলাম, একসঙ্গে বসে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব, একসঙ্গে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াব, প্রভাবশালী ‘বস-লেডি’ হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেব। কিন্তু তখন এসব শুধু স্বপ্নই মনে হতো। ভাবতাম কলেজের পর হয়তো জীবনের পরিক্রমায় এই বন্ধুত্ব আর আগের মতো থাকবে না, আমরা হারিয়ে যাব। এইচএসসি পরীক্ষার পর ভর্তিযুদ্ধও আমরা একসঙ্গে লড়েছি। একে অন্যকে পড়াতাম, ভেঙে পড়লে সাহস দিতাম। অবশেষে ভাগ্যের অবিশ্বাস্য আশীর্বাদে আমরা একসঙ্গে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাই।

শুরু হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। ক্লাস, ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা, গভীর রাতে হলের মাঠে আড্ডা থেকে শুরু করে কনসার্ট দেখা, দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো। একেকজন একেক বিভাগের হলেও দিন শেষে বা লাঞ্চ ব্রেকে দেখা করে একটু আড্ডা না দিলে দিনটা অপূর্ণ মনে হতো। টার্ম পরীক্ষা এলে দেখা যেত ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ও একসঙ্গে বসে পড়ছি।

একজনের বিভাগীয় অনুষ্ঠানে বাকিরা হাজির হয়ে যেতাম, একসঙ্গে উপভোগ করতাম। যেকোনো ট্যুরের পরিকল্পনা হলেও আগে নিশ্চিত করতাম, একসঙ্গে যেতে পারব কি না। এভাবেই সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতে করতে আমরা হলিক্রস স্কুলের ক্লাস সিক্স থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পার হয়ে এখন এক নতুন মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি।

এ বছর আমাদের গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেল। এবার হয়তো সত্যি সত্যিই যার যার পথ আলাদা হয়ে যাবে, আগের মতো জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ আর একত্রে নেওয়া হবে না। কিন্তু এত দিনে আমরা এটা জানি, যেখানেই যাই, যত ব্যস্তই থাকি না কেন, আমাদের একজনের প্রয়োজনে বাকিরা প্রাণ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, ঠিক পরিবারের সদস্যরা যেমনটা করে। আমাদের এই প্রাণের টান আমাদের একসঙ্গে বেঁধে রাখবে, হারিয়ে যেতে দেবে না। ভালোবাসি পাগলামি আর দুষ্টুমিতে ভরা আমার এই ছোট্ট পরিবারটাকে।