ভুল মাপ ও আকারের জুতা–স্যান্ডেল পরলে শরীরের কত ক্ষতি হয়, জানেন?

ধারণা করা হয়, মানুষ পায়ে জুতা বা স্যান্ডেল গলিয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে। জুতা আবিষ্কারের কাহিনি যা–ই হোক না কেন, এটি যে পায়ের সুরক্ষার জন্যই তৈরি হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধীরে ধীরে জুতা–স্যান্ডেল হয়ে উঠেছে ফ্যাশন ও স্টাইলের অন্যতম অনুষজ্ঞ। তবে পায়ের সুরক্ষার জন্য তৈরি জুতা–স্যান্ডেল ভুল মাপ ও আকারের হলেই সমস্যা। অস্বস্তি তো আছেই, পাশাপাশি দেখা দেয় শারীরিক নানা সমস্যা। তাই ফ্যাশনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ শরীরের সুস্থতা, আর সে কারণেই সঠিক মাপের জুতা–স্যান্ডেল পরা অত্যন্ত জরুরি।

জুতা–স্যান্ডেল ভুল মাপ ও আকারের হলে অস্বস্তি তো আছেই, পাশাপাশি দেখা দেয় শারীরিক নানা সমস্যাছবি: আনস্প্ল্যাশ

জুতা–স্যান্ডেলের মাপ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন

দৈনন্দিন জীবনে পোশাকআশাক নিয়ে আমরা যতটা সচেতন, জুতা–স্যান্ডেল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত ততটা মনোযোগ দিই না।

অথচ জুতা–স্যান্ডেল শুধু পায়ের সুরক্ষাই দেয় না; বরং আমাদের পুরো শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে সবচেয়ে জরুরি।

এ কারণেই আরামদায়ক মনে হলেও ভুল মাপ, ডিজাইন ও আকারের জুতা–স্যান্ডেল অজান্তেই নানা শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

ভুল মাপের জুতা–স্যান্ডেল পায়ে ও নখে ব্যথা, কড়া, কেলাস, এমনকি পায়ের আকার পরিবর্তিনের কারণ হতে পারে।

ভুল মাপ ও আকারের জুতা–স্যান্ডেলের ক্ষতি

প্রথমে গোড়ালিতে ভর দিয়ে এরপর পা সামনের দিকে ফেলতে হয়, এটাই হাঁটার সঠিক নিয়ম। মাটিতে চাপ দেওয়ার আগে পায়ের আঙুলগুলো ছড়িয়ে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়া ঘটে আমাদের অজান্তেই, যা মূলত ‘মাসল মেমোরি’র কারণেই হয়।

কিন্তু ভুল মাপের জুতা–স্যান্ডেল পরলে এই স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে হাঁটাচলায় দেখা দেয় সমস্যা।

চওড়া পায়ের কোনো ব্যক্তি সরু জুতা পরলে তাঁর পা স্বাভাবিকভাবে মাটিতে ঠিকমতো বসতে পারে না। ফলে মাটিতে ঠিকমতো পা ফেলা যায় না। এতে নিতম্ব ও পিঠের নিচের অংশের পেশিগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ দেয়।

ভুল মাপের জুতা পরলে হাঁটার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যেতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ছোট ছোট সমস্যাই ক্রমাগত ব্যথার দিকে নিয়ে যায়, যা হাঁটাচলার ছন্দ নষ্ট করে। পাশাপাশি হাড়ের জয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পরে এবং চলাফেরায় ভারসাম্য নষ্ট করে।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের ‘জার্নাল অব ফুট অ্যান্ড অ্যাঙ্কেল রিসার্চ’–এর এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মাত্র ২৮ থেকে ৩৭ শতাংশ মানুষ সঠিক মাপের জুতা–স্যান্ডেল পরেন।

অর্থাৎ একটি বড় অংশ নিজেদের অজান্তেই পায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিয়ে এবং অস্বস্তি নিয়ে চলাফেরা করেন। আর এর প্রভাবে সারা শরীরে ক্লান্তি ও ভারসাম্যহীনতার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

তবে কেন এসব শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা জরুরি। কারণ, এটাই পা ব্যথা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে প্রথম ধাপ।

আরও পড়ুন

কেমন জুতা–স্যান্ডেল পরবেন

  • বিনা ব্যথা ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য এমন জুতা–স্যান্ডেল পরুন, যা পায়ের স্বাভাবিক গতির নড়াচড়ায় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

  • এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন সঠিক মাপের জুতা নির্বাচন। তাই জুতা কেনার সময় খেয়াল রাখুন যেন আপনার পায়ের আঙুলের সামনে অন্তত ১ সেন্টিমিটার জায়গা থাকে।

  • জুতার সামনের দিকটা বেশি সরু না হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আঁটসাঁট জুতা পায়ের আঙুলে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে পায়ে হতে পারে প্রদাহ ও ব্যথা। জুতা আরামদায়ক না হলে তা চলাফেরার ওপরও প্রভাব ফেলবে।

  • হাঁটার সময় প্রতিবার পা মাটিতে ফেলার সময় পায়ের পাতা মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ের আকৃতি পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন মূলত আঘাত সয়ে নিতে ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে। যেসব জুতা–স্যান্ডেল এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে বাধা দেয় না, তেমন জুতা–স্যান্ডেল পরলে পায়ের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়ে না। এতে পা সুস্থ থাকে।

আরও পড়ুন

কোন ধরনের জুতা–স্যান্ডেল ক্ষতিকর

কিছু নির্দিষ্ট ধরনের জুতা বা স্যান্ডেল তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এর মধ্যে আছে হালকা স্যান্ডেল, যাকে আমরা বলি চপ্পল।

এ ধরনের স্যান্ডেল পরলে পায়ের আঙুলগুলোকে স্যান্ডেলের পৃষ্ঠ আকড়ে ধরে রাখতে হয়, ফলে আঙুলগুলো ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না।

আর এই ছড়িয়ে পড়া ঠিকভাবে হাঁটাহাঁটির জন্য জরুরি। এটা বিঘ্নিত হলে পায়ের পাতাসহ পায়ের পেছনের পেশিগুলোতেও ব্যথা ও টানের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
এ ছাড়া পায়ের পাতার সামান্য আর্চ সাপোর্টযুক্ত চ্যাপ্টা ও তলা বা ওপরের অংশ ছিঁড়ে গেছে, এমন জুতা–স্যান্ডেলও হাঁটুব্যথার কারণ হতে পারে।

আর হাই হিল পরলে শরীরের ভারসাম্য সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। ফলে পায়ের পাতা ও পিঠের নিচের অংশে প্রচণ্ড চাপ পড়ে।

স্লিপ-অন, খুব পাতলা ও হালকা মিনিমালিস্ট বা প্ল্যাটফর্ম জুতা–স্যান্ডেল স্বাভাবিক নড়াচড়া ও ভারসাম্যে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনে
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদিকে স্লিপ-অন, খুব পাতলা ও হালকা মিনিমালিস্ট বা প্ল্যাটফর্ম জুতা–স্যান্ডেল স্বাভাবিক নড়াচড়া ও ভারসাম্যে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনে। ফলে পেশিগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

এমনকি একজোড়া জুতা–স্যান্ডেলের একটিতেও কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে হাঁটার ধরন পরিবর্তন হতে পারে।

যদি এক পায়ে ঠিক মাপের জুতা–স্যান্ডেল না থাকে এবং সেটি অস্বস্তিকর হয়, তবে মাটিতে সম্পূর্ণ পায়ের তালু পড়বে না। এতে অন্য পায়ের ওপর বেশি ওজন পড়বে। ফলে সেই পাশের হাঁটু, নিতম্ব ও পিঠের নিচের অংশে অতিরিক্ত চাপ পড়বে।

আরও পড়ুন

শেষ কথা

যেকোনো কারণেই হোক, ভুল মাপ বা আকারের জুতা–স্যান্ডেল পরলে পায়ের অস্বস্তি থেকে শরীরে অন্যান্য অঙ্গের অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

দৈনন্দিন কাজের জন্য খুব উঁচু বা একেবারে নিচু জুতা–স্যান্ডেল না পরাই ভালো। এমন জুতা–স্যান্ডেল পরুন, যা পায়ের মাপের ও আরামদায়ক।


সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ

আরও পড়ুন