ক্লাস শেষে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় স্ক্রিনে আমাদের খেলা দেখেছে
ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষ হলো গত ১৫ ডিসেম্বর। সেমিফাইনালে ওঠা চারটি দলের অধিনায়কেরা এবারের টুর্নামেন্ট নিয়ে কী বলছেন? শুনেছেন মৃণাল সাহা
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন প্রতিবছর এই টুর্নামেন্টের অপেক্ষায় থাকে। আমরা যেহেতু ধারাবাহিকভাবেই ভালো খেলছি, তাই আমাদের আগ্রহটা ছিল আরও বেশি। প্রথম বছর আমরা বাদ পড়েছিলাম সেমিফাইনালে। দ্বিতীয় বছর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে ফাইনালে পরাস্ত হতে হয়। এ বছর তাই জোরপ্রস্তুতি ছিল শিরোপা জয়ের জন্য। গত দুই বছর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টুকটাক সাহায্য পেলেও এ বছর তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। আমরা সেই সহযোগিতার মান রাখতে পেরেছি। আমাদের দলে বেশির ভাগই পেশাদার খেলোয়াড়। তবে এআইইউবিতে প্রতিবছর বিভাগগুলোর মধ্যেও খেলা হয়, সেখান থেকে বেশ কয়েকজন উঠে আসে। এবার জাতীয় স্টেডিয়ামে যখন ফাইনাল হলো, তখন ক্যাম্পাসে ক্লাস চলছিল। ক্লাস শেষে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় স্ক্রিনে আমাদের খেলা দেখেছে। আমরা যখন শিরোপা নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরি, তখন ফুল দিয়ে আমাদের বরণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের আনন্দই অন্য রকম। আশা করি, এ ধরনের আয়োজন আরও হবে এবং দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেবে।আক্কাস আলী, অধিনায়ক, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
আয়োজনে অংশ নেওয়ার পর থেকেই লক্ষ্য ছিল—আমাদের লড়াই হবে শিরোপার জন্য। সে লক্ষ্যে টুর্নামেন্টের এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। যদিও আমরা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি একটুর জন্য, তবে নিজেদের পারফরম্যান্সে আমরা খুশি। টুর্নামেন্টে বাকি দলগুলোর বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেই জিতেছি, ফাইনালেও সেই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পেরেছিলাম; কিন্তু দুর্ভাগ্য, ম্যাচ জিততে পারিনি। এবার আমাদের দলে সুযোগ পাওয়া বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই খেলোয়াড় কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। তাঁদের থেকে বাছাই করেই টুর্নামেন্টের জন্য খেলোয়াড় নেওয়া হয়; কিন্তু খেলোয়াড় কোটার বাইরেও বেশ কয়েকজন দলে সুযোগ পেয়েছেন। নিজেদের প্রতিভায় তাক লাগিয়ে তাঁরা দলে প্রবেশ করেছেন। শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরাই এই টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি মনে করি, এখান থেকে বাছাই করে ভালো খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।আরাফাত মিয়া, অধিনায়ক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভালো দিক ছিল—জাতীয় স্টেডিয়ামে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের আয়োজন। যে কারণে খেলার উন্মাদনা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আমাদের আশা ছিল শিরোপা জিতেই ঘরে ফিরব; কিন্তু সেটি হয়নি। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও আমরা সেমিফাইনালে খেলেছি। আমাদের দলে বেশ কয়েকজন পেশাদার খেলোয়াড় ছিলেন, যাঁরা জাতীয় পর্যায়ে খেলেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়া হয় নিয়মিত খেলাধুলা করার; কিন্তু পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় সারা বছর খেলার সুযোগ থাকে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পরবর্তী সময়ে যেন আমরা আরও ভালো করতে পারি। আশা করি, এই আয়োজন আরও বড় করে হবে। একসময় রহমত মিয়া, মোহাম্মদ রিদয় এই আয়োজনে খেলেছেন, যাঁরা পরে জাতীয় দলেও খেলেছেন। এমন আয়োজন চলতে থাকলে আশা করি ভবিষ্যতের তারকা এখান থেকেই উঠে আসবে।মোহাম্মদ আল আমিন হোসেইন, অধিনায়ক, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এবারই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে কোনো দল ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পেল। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা শেষটা ভালো করতে পারিনি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল চট্টগ্রাম থেকে আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়া। এ নিয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটু সমস্যা তৈরি হয়েছিল, যার প্রভাব পড়েছে মাঠে। বাকি পুরো টুর্নামেন্ট অনেক ভালো হয়েছে। প্রতিবছর টুর্নামেন্টের আগে একটি বাছাইপর্বের ডাক দেওয়া হয়। সেখান থেকে খেলোয়াড় বাছাই করে আমরা দল গোছাই। এ ছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও খেলাধুলার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। আমরা যেন ভালো করতে পারি, সেই চেষ্টা তাঁদের থাকে। আমরা আশা করব, এই টুর্নামেন্টে যাঁরা ভালো খেলেছেন, তাঁদের জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ করে দেওয়া হবে। তাঁরা যেন তাঁদের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারেন, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।খান আসিফ, অধিনায়ক, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি