ডুমস্ক্রলিং—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ক্রল করাই যখন চাকরি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিল, মিম আর ভিডিও দেখতে দেখতে কখন যে সময় পেরিয়ে যায়, তা টের পাই না আমরা অনেকেই। কিন্তু কেমন হতো, যদি এভাবে স্রেফ স্ক্রল করেই টাকা কামানো যেত? শুধু টাকা নয়, একেবারে পাকাপাকি চাকরি?
ডুমস্ক্রলিং কী
ঘুম থেকে উঠেই সকালটা শুরু হয় ফোন হাতে নিয়ে। কতক্ষণ মনের অজান্তে স্ক্রল করা, এরপর আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছাড়া। অনেকেরই সকালের রুটিন হয়ে গেছে এটা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবে বিরামহীন স্ক্রলিংয়ের একটা নাম আছে—ডুমস্ক্রলিং।
করোনা মহামারির সময় সবাই যখন চার দেয়ালে বন্দী, তখন ফোনই ছিল বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম জানালা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাজারো কনটেন্টের ভিড়ে খুঁজে নিতে হতো সুখ-দুঃখ। তখন থেকেই ডুমস্ক্রলিং শব্দটির উৎপত্তি।
ডুমস্ক্রলিং যখন চাকরি
ভারতের ক্রিয়েটিভ ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি মঙ্ক এন্টারটেইনমেন্ট। সংক্ষেপে মঙ্ক–ই নামে পরিচিত এই কোম্পানি ব্র্যান্ড ও কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ও ভিডিও প্রোডাকশনের মতো সেবা দেয়।
এর সহপ্রতিষ্ঠাতা বিরাজ শেঠ সম্প্রতি লিংকডইনে একটি পোস্ট দিয়ে জানান, তাঁদের কোম্পানি ডুমস্ক্রলার খুঁজছে। তবে সবাই নিজেকে ডুমস্ক্রলার বলতে পারবেন না। ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের স্ক্রিনটাইমের স্ক্রিনশট দিয়ে প্রমাণ করতে হবে, তাঁরা আদতেই ডুমস্ক্রলার।
অদ্ভুত চাকরির খবর নতুন কিছু নয়। এর আগেও ওয়াটার স্লাইডে চড়ে, ঘুমিয়ে, হাঁটাহাঁটি করে টাকা কামানোর উপায় বাতলে দিতে দেখেছি আমরা অনেককে। কিন্তু এই চাকরির ধরনটা একটু আলাদা।
ট্রেন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক
স্ক্রল করার চাকরি মানেই শুধু স্ক্রল করে যাওয়া নয়। স্ক্রল করা বাদে আরও অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। এই চাকরির মূল উদ্দেশই হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে হালনাগাদ থাকা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে প্রতিমূহূর্তে বদলে যাচ্ছে ট্রেন্ড। আজ এই জিনিস জনপ্রিয় তো পরের দিন কেউ ভাবছেই না সেটা নিয়ে। কোম্পানিগুলোও তাল মেলাচ্ছে এই ট্রেন্ডের সঙ্গে।
মজার ব্যাপার হলো, এসব ট্রেন্ড কোনো কোম্পানি তৈরি করছে না। বরং ট্রেন্ডগুলো তৈরি হচ্ছে আপনা–আপনি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালানো সাধারণ ব্যক্তিদের মাধ্যমেই। যে কারণে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি দিয়েই বিচার করতে হয় এসব ট্রেন্ডকে। সেখান থেকেই এসেছে স্ক্রলিং করার চাকরি।
কী করতে হয় ড্রমস্ক্রলিংয়ে
স্ক্রলিং করা মানে শুধু স্ক্রল করে যাওয়া নয়। বরং প্রতিমূহুর্তে নোট নেওয়া, কখন কোন ট্রেন্ড চলছে, কোন ট্রেন্ড প্রভাব বিস্তার করছে। কারা, কখন, কীভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে, সবই এক জায়গায় জড়ো করা।
স্ক্রল করতে করতে এসব তথ্য বের করে আনতে হবে ব্যবহারকারীকে। একে ঠিক স্ক্রলিং করার চাকরি না বলে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবেও ধরা যায়। প্রায় সব বড় বড় কোম্পানিতেই এখন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার পদটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ডুমস্ক্রলিংয়ের প্রভাবে এই পদে একটু রদবদল এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ভবিষ্যৎ কী
তবে দিনে টানা এতক্ষণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজর রাখা স্বাস্থ্যের ওপর বেশ বাজে প্রভাব ফেলবে। শুধু চোখ নয়, বিনোদনের জন্য টানা স্ক্রলিং করা আর জীবিকার জন্য স্ক্রলিং করার মধ্যেও আছে বিস্তর ফারাক।
যে কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। তাই ভবিষ্যতে যদি এটি দীর্ঘমেয়াদি চাকরি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তা কতটুকু মানসিক প্রশান্তি দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হার্ভার্ড হেলথ