ব্রড ও অ্যান্ডারসনের বন্ধুত্ব যেভাবে হলো

স্টুয়ার্ড ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসন—টেস্ট ক্রিকেটে এমন বোলিং জুটি কি আর কখনো দেখা যাবে? সাম্প্রতিক অ্যাশেজের পর ব্রড যেহেতু ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত এ দুজনকে আর একসঙ্গে দেখা হচ্ছে না। মাঠের বাইরেও কিন্তু দুজনের বন্ধুত্বটা চমৎকার। নিজেদের বন্ধুত্বের নানা দিক নিয়ে ব্রড ও অ্যান্ডারসন ২০১৮ সালে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন দ্য গার্ডিয়ানকে। আজ বন্ধু দিবসে পড়ুন সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ।

দুজন একসঙ্গে মাঠে নামছেন, এই দৃশ্য হয়তো দেখা হবে না আর
ছবি: রয়টার্স

প্রথম দেখা

অ্যান্ডারসন: ২০০৫ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এক ম্যাচে লিস্টারশায়ার ও ল্যাঙ্কাশায়ার মুখোমুখি হয়েছিল। সেবারই প্রথম দেখা। আমরা ছিলাম প্রতিপক্ষ। তবে আমাদের কোনো কথা হয়েছিল বলে মনে পড়ে না।

ব্রড: অবশ্যই কথা হয়নি। কারণ, বন্ধুবৎসল ও সামাজিক প্রাণী তো তুমি নও! মনে আছে ২০০৬-০৭ অ্যাশেজের প্রস্তুতি ক্যাম্পে তুমি ছিলে। দলে না থাকলেও একাডেমির অংশ হিসেবে আমি ছিলাম সেই প্রশিক্ষণে। কিন্তু আগে পরিচয় হয়নি, এমন কারও সঙ্গেই তুমি কথা বলোনি।

অ্যান্ডারসন: আহা, আমি একটু লাজুক, তুমি তো জানো!

টেস্ট ক্রিকেটে এমন বোলিং জুটি আর কি দেখা গেছে?
ছবি: রয়টার্স

২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম একসঙ্গে খেলা

ব্রড: সতীর্থ হিসেবে প্রথম ম্যাচে জয়সূচক রানের সময় আমরা দুজনই ক্রিজে ছিলাম। এরপর এ রকম আর কখনো ঘটেছে বলে মনে পড়ে না।

অ্যান্ডারসন: দুজন মিলে খেলার শেষ দেখে আসা একটা বিরল ঘটনা। এমনকি যেসব খেলা ড্র হয়েছে, সেসবেও শেষে ব্রডিকে আশপাশে দেখা যায়নি। ব্রড, তোমার মধ্যে কিন্তু একটু হেঁয়ালিপনা আছে, তাই না?

ব্রড: ওহে, ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বল খেলে ডাক মারার রেকর্ড কিন্তু আমার!

ব্রড আর অ্যান্ডারসন একজন আরেকজনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না
ছবি: রয়টার্স

বন্ধুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা

অ্যান্ডারসন: আমরা ঠিক প্রতিযোগী নই। কারণ, একে অপরের বিকল্পও নই। আমাদের বোলিংয়ের ধরন আলাদা। ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে দুজনই পানি বহনের দায়িত্বে ছিলাম। দ্বাদশ খেলোয়াড়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি, বোঝাপড়া ভালো হয়েছে। সেবার আমাদের সঙ্গে সোয়ানিও (গ্রায়েম সোয়ান) ছিল। তখন থেকেই বন্ধুত্ব। কেউ কেউ বলেন, সতীর্থদের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাব থাকাটা ভালো। কিন্তু আমার কাছে কখনোই তা মনে হয়নি। যেমন গফ আর ক্যাডিকের (ড্যারেন গফ ও অ্যান্ড্রু ক্যাডিক) সম্পর্ক ড্রেসিংরুমে রীতিমতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করত। হয়তো এই জেদ ব্যক্তিগতভাবে ওদের কাজে লাগত। কিন্তু নেতিবাচক প্রভাবটা পড়ত দলের ওপর।

ব্রড: আমরা কখনোই একজন আরেকজনকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। বরং উইকেট পেতে সাহায্য করেছি।

অ্যান্ডারসন: গত বছরই যেমন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচে ওদের ৯ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ব্রডি তখন আমার হাতে বল তুলে দিয়ে বলেছিল, ‘নাও, শেষটা তোমার জন্য।’

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে বোলিংয়ে দাপট দেখিয়েছেন দুজন
ছবি: রয়টার্স

প্রসঙ্গ পরিবার

ব্রড: পারিবারিকভাবেও আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক।

অ্যান্ডারসন: আজ বিকেলে কফি খেতে গিয়েও ব্রডির মা আর সৎ বাবার সঙ্গে দেখা। আলাপের শেষে ওর মা বলছিলেন, ‘আমি তোমার মাকে বলব, তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তুমি ভালো আছ।’ গত ১০ বছরের যাত্রায় তাঁরাও আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এটা একটা দারুণ ব্যাপার।

ব্রড: ক্রিকেটের অন্যতম বিশেষত্ব—খেলা ঘিরে এই বন্ধুত্ব। স্ট্রসির (অ্যান্ড্রু স্ট্রস) মা-বাবার সঙ্গে যেমন এখনো আমার মা-বাবার খুব ভালো বন্ধুত্ব।

দুজনের চোখে দুজনের সেরা স্পেল

অ্যান্ডারসন: ২০০৯ সালে ওভালে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজেই সম্ভবত আমি ওর সেরাটা দেখেছি। বিপক্ষ দলকে একদম ধুয়ে দিয়েছিল। তুমুল ভালো খেলোয়াড়দের বিপক্ষে ও তুমুল ভালো বল করেছিল। আমরা চাপে ছিলাম, সময়টাও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিই আগুন ঝরানো একটা স্পেল বলতে হয়।

ব্রড: ২০১৩ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে জিমি দুর্দান্ত খেলেছিল। শুধু এ কারণে নয় যে ও একটা লম্বা স্পেল করেছে, আদতে ওই স্পেলটাই আমাদের জিতিয়েছে। যে পিচে ১০ উইকেট নেওয়া কঠিন, সেখানে এত ভালো বল করতে হলে দারুণ দক্ষ হতে হয়। ২০১৫ সালের অ্যাশেজের একটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। আমি তখন শর্ট মিড অনে দাঁড়ানো। জিমি প্রথমে অ্যাডাম ভোজেসকে তুলে নিল। পরের বলে মিচেল মার্শ নেমেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেছিল। অপর প্রান্তে দাঁড়ানো ক্রিস রজার্স যেভাবে ‘ওহ! না!’ বলে চিৎকার করেছে, আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম। এ ঘটনার একটা ছবি বোধ হয় কোথাও আছে।

অ্যান্ডারসন: এ মুহূর্তগুলোর জন্যই মানুষ বাঁচে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

২০ বছর বয়সী নিজের সঙ্গে দেখা হলে যে উপদেশ দিতাম

ব্রড: আমি বলব—মানসিক দৃঢ়তার প্রতি আরও জোর দাও। ২০১০ সালের শেষ দিকে আমি যখন মানসিকভাবে একটা পরিবর্তন আনতে চাচ্ছিলাম, তখন ইংল্যান্ড দলের মনোবিদ মার্ক বডেন আমাকে খুব সাহায্য করেছে। পাকিস্তানি উইকেটকিপারের গায়ে (জুলকারনাইন হায়দার) বল ছুড়ে মেরে সে সময় আমি একটু বিপদেই পড়েছিলাম। মার্ক আমাকে শিখিয়েছিল, রেগে গেলে মাঠের বাইরে তাকিয়ে থাকতে হবে। ২৫ বছরের বদলে ২০ বছর বয়সেই যদি এটা শিখতাম, তাহলে ক্রিকেটার হিসেবে আমি আরও পরিণত হতে পারতাম। যাহোক, শিখতে হলে ভুল তো করতেই হয়।

অ্যান্ডারসন: বডেনের সঙ্গে আমারও একই অভিজ্ঞতা। ওর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি রেগে গেলে আরও জোরে বল করার চেষ্টা করতাম। এবং আরও বেশি রান দিয়ে বসতাম। যখন রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখলাম, তখন আমার উন্নতি হলো। ২০ বছর বয়সী আমাকে আমি বলব—নিজের ওপর আরও আস্থা রাখো। ইংল্যান্ড দলের কোচ কিছু বলা মানেই যে সেটা বেদবাক্য, এমন তো নয়। নিজের মনের ওপর বিশ্বাস রাখো।

ইংরেজি থেকে অনূদিত