‘অভিনন্দন! আপনি একজন ফ্যাবুলাস ফাইভ!’

মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন লেখক (ডান থেকে চতুর্থ)
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাডফেস্ট সম্পর্কে জানতে পারি গত বছর। আমাদের অফিসের একজন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর রাতুল আমিন ভাই ডিসেম্বরে মেসেঞ্জারে একটা লিংক শেয়ার করেন, যেখানে দেখলাম, তারা চিত্রনাট্য জমা নিচ্ছে। প্রতিবছর এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের উঠতি পরিচালকদের জন্য ‘নিউ ডিরেক্টর লোটাস’ বিভাগে অ্যাডফেস্টের ‘ফ্যাবুলাস ফাইভ’ নামের একটি আয়োজন থাকে।

এবারের বিষয়টি আমাকে আকর্ষণ করে। চ্যালেঞ্জ ছিল, হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স বা মানুষের বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত একটা গল্প তুলে ধরতে হবে। দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫ মিনিট। আগে আমি কখনো বিদেশি কোনো উৎসবে চিত্রনাট্য বা সিনেমা জমা দিইনি। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব পার করে এক রাতের মধ্যেই লিখে ফেলি আমার গল্প, ‘ফ্রি-আর’। কোনোরকম আশা না রেখেই চিত্রনাট্য জমা দিই।

৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ই–মেইল খুলে দেখি—‘অভিনন্দন! আপনি এখন একজন ফ্যাবুলাস ফাইভ।’ ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে খবরটা মাকে জানাই। উৎসবে আমাকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। থাইল্যান্ড ভ্রমণ, থাকা-খাওয়া এবং স্থানীয় যাতায়াতের ব্যবস্থা অ্যাডফেস্টই করবে। ৮টি দেশ থেকে জমা পড়া ২৩ চিত্রনাট্যের মধ্যে সেরা ৫-এ পৌঁছেছে আমার গল্প। তবে চ্যালেঞ্জও আছে—৮ মার্চের মধ্যে ছবিটি তৈরি করে জমা দিতে হবে!

প্রতিদিনের অফিস, ব্যক্তিগত কাজ, সব চাপ সামলে এত অল্প সময়ে কাজটি করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। এগিয়ে আসেন অফিস ও অফিসের বাইরের কিছু কাছের মানুষ। শুরুতেই আমাদের অফিস এক্স ইন্টিগ্রেটেড মার্কেটিং এজেন্সির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রযোজক তাহসিন সাঈদ ভাইকে ছবিটি প্রযোজনার প্রস্তাব দিই। তিনি কোয়ায়েট অন সেট প্রোডাকশনের ব্যানারে প্রযোজনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। চিত্রগ্রাহক মনজুর অনিক, সম্পাদক শিশির মুহাম্মাদ, অভিনয়শিল্পী ফারিহা হোসেনসহ অন্যদের নিয়ে সাহস করে এগিয়ে যাই। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যথাসময়ে জমা দিই আমার স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি।

আরও পড়ুন

২০ মার্চ রাত দুইটায় ফ্লাইট ধরে ভোরবেলা পৌঁছে যাই ব্যাংকক। সেখান থেকে লিমোজিনে করে আয়োজকেরা আমাকে পাতায়ার নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে যান। দেশে থাকা অবস্থায় বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ পাচ্ছিলাম, থাইল্যান্ডের মাটিতে সেই বৃষ্টির দেখাও পেয়ে যাই।

২১ থেকে ২৩ মার্চ, তিন দিনব্যাপী চলে অনুষ্ঠান। হোটেলেই নানা দেশ থেকে আসা বিজ্ঞাপনকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় হলো। ছিল ইয়াং লোটাস প্রতিযোগিতায় আসা কপিরাইটার, প্ল্যানার, ভিজ্যুয়ালাইজাররা। আর ছিল বিভিন্ন সেশন নিতে আসা বক্তা ও অন্যান্য ক্যাটাগরির বিচারকেরা। ২০ তারিখের নৈশভোজে আমার সঙ্গে মনোনয়ন পাওয়া ‘ফ্যাবুলাস ফাইভ’–এর বাকি চার প্রতিযোগী ও বিচারকদের সঙ্গে পরিচয় হলো।

পরদিন আরেক কাণ্ড। সন্তানের প্রথম আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের অংশীদার হতে এসে পড়েন আমার মা! দারুণ সব আলোচনা ও প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নিয়ে দিনটি কেটে যায়। অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়।

সন্তানের এই সাফল্য উদ্‌যাপন করতে মা–ও হাজির হয়ে গিয়েছিলেন
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের স্ক্রিনিং ছিল ২২ মার্চ, আগের দিন বড় মঞ্চে চলে মহড়া। মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন উৎসবের পরিচালক কেম সুরাফংচাই (থাইল্যান্ড), জুরি প্রেসিডেন্ট এমা ডেইন্স (অস্ট্রেলিয়া) এবং জাপান ও হংকং থেকে আসা অন্যান্য ফ্যাবুলাস ফাইভ পরিচালক। জাঁকজমকপূর্ণ ডিনার পার্টির মধ্য দিয়ে শেষ হয় সেদিনের আয়োজন।

তারপর আসে সেই বহুল প্রতীক্ষিত দিন। ছবি প্রদর্শনের পর কমবেশি সবার কাছ থেকে আমার গল্পের ধরন ও চিত্রনাট্যের প্রশংসা শুনেছি। আমার ছবির পেছনের গল্প, কীভাবে এবারের থিম ‘হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স’ ও মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে ‘ভয়’–এর ভূমিকা আমার গল্পে মিলেমিশে একাকার হলো, কীভাবে আমার বাস্তবজীবন থেকে পেলাম গল্পের অনুপ্রেরণা, এশিয়া মহাদেশের এই সৃজনশীল মিলনমেলায় এসব বিষয়ে বলার সুযোগ পাই।

দিন শেষে সবার উৎসাহ আমাকে আরও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এমনকি একজন জাপানি সংগীত প্রযোজক ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সব মিলিয়ে অ্যাডফেস্টের অভিজ্ঞতা আমার জন্য বড় পাওয়া।

আরও পড়ুন