কীভাবে ক্লাসনোট নেব
শিক্ষকের দেওয়া লেকচারের সংক্ষিপ্ত রূপকে আমরা বলি ‘ক্লাসনোট’। ক্লাস লেকচারের ভিত্তিতে লেখা হয় বলে এর আরেক নাম ‘লেকচার-নোট’। ক্লাসনোট বা লেকচার-নোট তুলতে হয় ক্লাসে সরাসরি উপস্থিত থেকে। অন্যের ক্লাসনোট ফটোকপি করে নেওয়ার চলও আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে, তবে সেটি সম্ভবত খুব একটা কাজে আসে না। কীভাবে কার্যকর উপায়ে ক্লাসনোট নেওয়া যায়, চলুন, একটু আলোচনা করা যাক।
লেকচারের বিষয় বুঝে নিন
সম্ভব হলে আগেই জেনে নিন ক্লাসে কোন টপিক বা বিষয়ের ওপর আলোচনা হবে। নিয়মিত ক্লাস করলে এটা সহজেই বোঝা যায়। অনেক সময় শিক্ষক আগের ক্লাসেই বলে দেন—পরের ক্লাস কোন বিষয়ের ওপর হবে। তা ছাড়া লেকচারের ধারাবাহিকতায়ও পরের লেকচারটি অনুমান করা যায়। প্রয়োজনে ক্লাসের শেষে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেও পরবর্তী লেকচারের বিষয়টি জেনে নিতে পারেন।
আগেই পড়ে নিন
লেকচারের বিষয় জানা হয়ে গেলে সে বিষয়ে আগেই কিছু পড়াশোনা করে রাখুন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি আপনাকে সাহায্য করবে। লাইব্রেরিতে বসে বিষয়সংশ্লিষ্ট বইয়ে চোখ বোলাতে পারেন। একদিকে যেমন বিষয়টা সম্পর্কে আপনার কিছুটা ধারণা তৈরি হবে, তেমনি এটি সম্পর্কে আরও জানতে হয়তো আগ্রহী হবেন। যদি মনে হয় কোনো বই ক্লাসের সময় হাতে রাখা প্রয়োজন, সেটিও সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। অনলাইনের বিভিন্ন নিবন্ধ বা ভিডিও-ও আপনার কাজে আসবে।
কাগজে না খাতায়
ক্লাস-লেকচার কাগজে তুলবেন, না খাতায় তুলবেন—এ নিয়ে দ্বিধার কিছু নেই। এক খাতায় সব শিক্ষকের লেকচার না তোলাই ভালো। প্রতিটি কোর্সের জন্য আলাদা খাতা তৈরি করতে পারেন। খাতা সঙ্গে রাখা কষ্টকর মনে হলে সাদা কাগজ ব্যবহার করতে পারেন। সাদা কাগজের এক পাশে লিখবেন, অন্য পাশে লিখবেন না। কাগজগুলো পাঞ্চমেশিনে ছিদ্র করে ফাইলে আটকে রাখবেন। কোর্স অনুযায়ী আলাদা ফাইল করবেন।
দুই রঙের কলম
ক্লাসনোট তোলার জন্য দুই রঙের কলম ব্যবহার করতে পারেন। একটি কালো, আরেকটি আপনার পছন্দসই যেকোনো রং। দুই রঙের কালি ব্যবহারের কারণে আলোচ্য বিষয় ও বিবরণ সুন্দর করে লেখা যায়। অনেকে আবার দুইয়ের বেশি রঙের কলম ব্যবহার করেন। কিন্তু এত সব কলম দিয়ে লেকচার তুলতে গেলে বাড়তি সময় নষ্ট হয়। তা ছাড়া পরে এই নোট বুঝতেও সমস্যা হতে পারে। ছবি আঁকার জন্য পেনসিলও সঙ্গে রাখতে পারেন।
বুলেট ও শিরোনাম দিন
ক্লাস লেকচার তোলার সময়, তারিখ, কোর্সের নাম ও শিক্ষকের নাম লিখুন। লেকচারের শুরুতে মূল বিষয়ের শিরোনাম দিন। শিক্ষক যা মুখে বলেন, তার সবকিছুই তোলা সম্ভব হয় না। দরকারও নেই। সাব-টাইটেল ও বুলেট দিয়ে বিষয়গুলো চিহ্নিত করুন। কিছু দরকারি আলোচনাও টুকে রাখতে পারেন। শিক্ষক যা কিছু বোর্ডে লিখবেন, ক্লাসনোটে তার কোনো কিছুই বাদ দেবেন না। এমনকি তিনি কোনো চিত্র বা প্রবাহচিত্র এঁকে দেখালে অবশ্যই তা তুলে রাখবেন।
মনোযোগী থাকুন
ক্লাসের পুরো সময় অবশ্যই মনোযোগী থাকতে হবে। ভালো হয় যদি সামনের দিকে বসতে পারেন। কারণ, সামনে বসলে শিক্ষকের লেকচার শুনতে সুবিধা হয়। শিক্ষকের সঙ্গে ‘আই কন্টাক্ট’ বা দৃষ্টি বিনিময় হয়। সব সময় সামনে বসে মন দিয়ে লেকচার শোনার অভ্যাস করলে শিক্ষক অবশ্যই আপনাকে আলাদা করে মনে রাখবেন। অধিকাংশ বিষয়ের ক্ষেত্রেই ক্লাসে পূর্ণ মনোযোগ দিলে বাসায় গিয়ে আর খুব বেশি পড়তে হয় না। পরীক্ষার আগেও ক্লাসনোটের দিকে তাকিয়েই পড়াগুলো ঝালাই করে নেওয়া যায়।
কী তুলবেন না
লেকচারের বিষয়টি নিয়ে আগেই পড়াশোনা করার কারণে আপনার মধ্যে কিছু প্রশ্ন তৈরি হবে। এগুলোর সমাধান খুঁজতে হবে শিক্ষকের ক্লাস-লেকচারের মধ্যে। শিক্ষকের লেকচারের যে বিষয়গুলো আপনি আগেই বইপত্রে বা অন্য মাধ্যমে পেয়েছেন, সেগুলো ক্লাসনোটে তোলার দরকার নেই। বরং যেগুলো আপনার কাছে নতুন, সেগুলো তুলবেন। তা ছাড়া শিক্ষক যদি প্রজেক্টরে স্লাইড দেখিয়ে কোনো আলোচনা করেন এবং পরে সেই স্লাইড সরবরাহ করেন, সেগুলোও তোলার দরকার নেই।
কী করা যায়, কী যায় না
বোর্ডের লেখা মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা ঠিক না। এমনকি প্রজেক্টরে শিক্ষক কোনো কিছু উপস্থাপন করলে সেটিও মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা যাবে না। হাতে লিখেই ক্লাসনোট তুলতে হবে। শিক্ষক যখন লেকচার দিতে থাকেন, তার মাঝখানে প্রশ্ন করা ঠিক নয়। ক্লাসের শেষ দিকে বা ক্লাসের পরে সুবিধাজনক সময়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। শিক্ষকের মনোভাব বুঝে কী করবেন আর কী করবেন না, নির্ধারণ করুন।
শেষ কথা
ক্লাসের পরে যত দ্রুত সম্ভব ওই বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করে ফেলুন। বেশি দেরি করে ফেললে টপিকটি আয়ত্তে আনা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। বিস্তারিত পড়াশোনার জন্য ক্লাসনোট দারুণ সাহায্য করে। ক্লাসনোট দেখে বোঝা যায়, পড়ার সময়ে প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় বাদ পড়ছে কি না। বিস্তারিত পাঠের সময়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা আপনি একটি খাতায় লিখে রাখতে পারেন।